Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে সম্প্রীতির বিজ্ঞাপন নিয়ে বিজেপি’র তাণ্ডব

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ৫:০২ পিএম | আপডেট : ১১:১৯ পিএম, ১৪ অক্টোবর, ২০২০

ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপি’র কট্টর হিন্দুত্ববাদী প্রচারণায় ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনা মুছে কিভাবে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়েছে, এবার সেই চিত্র আবার প্রকাশ পেল। একটি বিখ্যাত গয়না সংস্থার সম্প্রীতির বিজ্ঞাপন নিয়ে ভারতে তাণ্ডব চালালো গেরুয়া বাহিনী। ফলে বিজ্ঞাপন তুলে নিতে বাধ্য হওয়ার পাশাপাশি হামলার শিকারও হতে হয়েছে সংস্থাটিকে।

সম্প্রীতির বিজ্ঞাপন দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়া ওই গয়না সংস্থাটির নাম তানিশক। এটি ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্প সংস্থা টাটা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ দিন ধরেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে বিজ্ঞাপন তৈরি করে তানিশক। এর আগে এলজিবিটিকিউ অধিকার, বিধবা বিবাহ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিজ্ঞাপন তৈরি করেছে তারা। সম্প্রতি তারা বিজ্ঞাপন তৈরি করেছিল হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি নিয়ে। সম্প্রীতির সেই বিজ্ঞাপন ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় এতটাই কদর্য আক্রমণ চালিয়েছে গেরুয়া বাহিনী, যে শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞাপন তুলে নিতেও রক্ষা পায়নি গয়না সংস্থাটি। ‘লাভ জিহাদ’-এর প্রচার করার ধুয়া তুলে সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী মোদির এলাকা গুজরাতের গান্ধীগ্রামে ওই সংস্থাটির একটি স্টোরে হামলা চালিয়েছে বিজেপি’র একদল সমর্থক। তারা ওই স্টোরের ম্যানেজারকে দিয়ে লিখিয়ে নেয়, ‘ওই বিজ্ঞাপনটি লজ্জানজক এবং আমরা ক্ষমাপ্রার্থী’। এর পর তা স্টোরের বাইরে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয় বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। এর মাধ্যমে, সামাজিক অসহিষ্ণুতার আরো এক উদাহরণ তৈরি হলো ভারতে। গেরুয়া বাহিনীর এই আক্রমণের কড়া নিন্দাও অবশ্য শুরু হয়েছে ভারত জুড়ে।

ওই বিজ্ঞাপনে দেখানো হয়েছিল, মুসলিম পরিবারে বিয়ে হয়ে আসা এক হিন্দু তরুণী গর্ভবতী। তাকে হাত ধরে হিন্দু রীতি অনুযায়ী ‘সাধভক্ষণ’ অনুষ্ঠানে নিয়ে যাচ্ছেন শাশুড়ি। আয়োজন দেখে ওই তরুণী বলছেন, ‘আপনাদের তো এ সবের রীতি নেই!’ জবাবে শাশুড়ি বলেন, ‘মেয়েকে খুশি করার রীতি সব জায়গাতেই রয়েছে।’ সম্প্রীতির এক সুন্দর বার্তা দেওয়া হয়েছে ওই বিজ্ঞাপনে। কিন্তু কেন হিন্দু নারীকে মুসলিম বাড়িতে দেখানো হয়েছে, তা নিয়েই শুরু হয়ে যায় বিতর্ক।

বিজেপি পরিবারের অন্যতম সদস্য বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। দীর্ঘ দিন ধরেই তারা ভারতে ‘লাভ-জিহাদ' নামে একটি শব্দের আমদানি ঘটিয়েছে। এর অর্থ হলো, হিন্দু নারীদের বিয়ে করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করছেন মুসলিম পুরুষরা। এর আগে এই নিয়ে বহু জায়গায় ঝামেলা করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং গেরুয়া বাহিনী। তানিশকের এই বিজ্ঞাপন বাজারে আসার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় কদর্য ভাষায় তারাই আক্রমণ করতে শুরু করে বলে অভিযোগ। ফের লাভ-জিহাদের প্রসঙ্গ চলে আসে। বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আইটি সেল পরিকল্পিত ভাবে এই কাজ করেছে বলে জানা গেছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সর্বভারতীয় নেতা শচীন্দ্রনাথ সিংহ জানিয়েছেন, ‘ভারতের সনাতন সংস্কৃতি হিন্দু সংস্কৃতি। অন্য ধর্মের নারী হিন্দু বাড়িতে এলে আমরা তাকে স্বাগত জানাই। সেটা হলো ঘরওয়াপসি। কিন্তু হিন্দু নারী অন্য ধর্মের বাড়িতে গেলে তা লাভ-জিহাদ। আমরা তা সমর্থন করি না। ওই বিজ্ঞাপনে সেটাই দেখানো হয়েছিল।’

পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষরা সম্প্রীতির কথা বলতে গেলেই অন্য ধর্মের সঙ্গে হিন্দুদের সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করেন। হিন্দু সংস্কৃতির কথা বলেন না। ওই বিজ্ঞাপনে যা দেখানো হয়েছিল, তা বহু মানুষের আবেগে আঘাত করতে পারতো। এ ধরনের বিষয় নিয়ে বিজ্ঞাপন করা কখনোই সমর্থন করি না।’ বাদ যাননি তথাকথিত সেলিব্রিটিরাও। কঙ্গনা রানাওয়াতও টুইট করে ধর্মীয় ‘উসকানি’ দিয়েছেন। একাধিক বিজেপি নেতার বক্তব্য, এই বিজ্ঞাপন হিন্দু ধর্মের পক্ষে অসম্মানজনক। প্রশ্ন উঠেছে কেন মুসলিম নারীকে হিন্দু বাড়িতে দেখানো হলো না।

সোশ্যাল মিডিয়ায় গেরুয়া শিবির এবং তাদের আইটি সেলের আক্রমণ এতটাই ভয়াবহ চেহারা নেয় যে তার প্রভাব গিয়ে পড়ে শেয়ার বাজারেও। টাটার স্টক দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ কমে যায়। এর পরে আর সময় নষ্ট করেনি টাটা গ্রুপ। বিবৃতি দিয়ে বিজ্ঞাপন তুলে নেয়ার কথা জানানো হয়। জানানো হয়, কর্মীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এ কাজ করা হলো। কংগ্রেস এ ঘটনার জন্য সরাসরি বিজেপি এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে দায়ী করেছে। সাধারণ মানুষও এর প্রতিবাদ করেছেন। কংগ্রেসের শশী থারুর টুইট করে বিজেপির কড়া সমালোচনা করেছেন। অসহিষ্ণুতা নিয়ে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা। সূত্র: পিটিআই, ডন, ডয়চে ভেলে।



 

Show all comments
  • Bhagat Yusuf Fakhruddin ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ৬:৩৩ পিএম says : 0
    It's a shame that Tata's have succumbed ,instead they should have stood their ground against such bigots
    Total Reply(0) Reply
  • Jakir Al Faruki ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ৬:৩৫ পিএম says : 0
    মোদির আর এস এস এবং বিশ্বহিন্দু পরিষদ একটি হিংসাত্মকবাদী দল। এদের ফ্যাসিস্ট কর্মসূচি বিশ্বশান্তির জন্য মারাত্মক হুমকি। বিশ্ববাসীর উচিত এদের বিরুদ্ধে একত্রিত হওয়া।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ জুনায়েদ ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ৬:৩৫ পিএম says : 0
    সাম্প্রদায়িক হিন্দুদের চোখ রাঙানী হজম করতে পারে নাই
    Total Reply(0) Reply
  • Mahela Begum ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ৬:৩৫ পিএম says : 0
    সম্প্রীতির বানীও যেখানে নিষিদ্ধ সেখানে সংখ্যালঘুরা কেমন থাকতে পারে? একটা চিহ্নিত দাঙ্গাবাজ সন্ত্রাশী যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী তখন সেখানকার সংখ্যালঘুদের জন্মই আজন্ম পাপ।
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Alauddin ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ৬:৩৬ পিএম says : 0
    স্পষ্টতই হিন্দু ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ইন্ডিয়া। যেখানে অন্য ধর্মের কোন নিরাপত্তা নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Shaheen Tarafder ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ৬:৩৬ পিএম says : 0
    ভারত উগ্রবাদী রাষ্ট্র
    Total Reply(0) Reply
  • Shakil Ahmed Sumon ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ৬:৩৭ পিএম says : 0
    চিন্তা করো ভদ্র মানব সকল→ ভারত কেমন অভদ্র, সাম্প্রদায়িক, কুসংস্কারাচ্ছন্ন জাতি ।
    Total Reply(0) Reply
  • Milton Rizin ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ৬:৩৮ পিএম says : 0
    উগ্র সাম্প্রদায়িক ভারতীয় সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে রাষ্ট্রের নাগরিকদের অধিকার হরণ করছে, এর মাধ্যমে হিন্দু মেয়েদের বৈবাহিক স্বাধীনতাকে হরণ করল উগ্র হিন্দু মোদী।
    Total Reply(0) Reply
  • Shibber Ahmed ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ৬:৩৮ পিএম says : 0
    ভারত অসহিষ্ণু আর উগ্রবাদী নাতসি রাষ্ট্র হয়ে যাচ্ছে,,,উদার মানুষ সেখানে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে তবুও ভারত প্রাচীন সভ্যতার দেশ দুনিয়ার সেরা সিভিলিয়ান জাতি হিসেবে ঘুরে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Younus biswas ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ৭:১৪ পিএম says : 0
    মোদির নেতৃত্বে চলা ভারত আজ সম্প্রদায়িকতার চরম শিখরে পৌছাতে আর কোন কিছু বাকি রহিল না। আর এস এস,বিশ্ব হিন্দু পরিষদ,বাজরাং দল। এগুলো মুসলিম বিদ্বেশী চরমপন্থী টেরারিষ্ট।
    Total Reply(0) Reply
  • N Islam ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ৯:২২ পিএম says : 0
    উগ্র হিন্দুদের সাম্প্রদায়িক নীচু মানসিকতা নিয়ে নূতন করে কিছু বলার নেই । তবে, এখানে বিজ্ঞাপনের বিষয় হিসেবে যা বর্ণনা করা হয়েছে, সেটা আমিও সমর্থন করিনা । ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ভিতরে বিয়ে সব দেশেই নতুন কিছু নয়, কিন্তু সেটি গনমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের বিষয় হতে পারেনা । এইখানে একটা মুসলিম মেয়েকে হিন্দু বাড়িতে দেখতে আমার অবশ্যই ভাল লাগতোনা ।
    Total Reply(0) Reply
  • RumiFaisal ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ৯:৩২ পিএম says : 0
    একটি দলের কাছে হিন্দুত্ব শিখার নয়, সেজন্য অাছে ধর্মগ্রন্। মহামানবেরা কাছে যাও খুনির কাছে নয়, হাতে বেদ তুলে দিলে দুলাইন পরে বোঝাতে পারবে কিনা সন্দেহ।
    Total Reply(0) Reply
  • salman ১৫ অক্টোবর, ২০২০, ৪:৪৫ এএম says : 0
    Gu, Mutroo Ktor ra bora bor e SINGSHROO(Wild) ta o abar Oder GONDIR Vetor. Desher Bairay ader chaite VITU, KAPURUSH kom e ase. ato parish, CHINAR sathe Jash na, PETEYEE 23/35 taa k HOTAI falaisay Ki korsis. 35 km Chanir Dhokholay ................ KAPURUSH R.S.S, Boj Rongi, Rastrio Soyon Songo, Gu, Mut khawaa ra KOI ??
    Total Reply(0) Reply
  • habib ১৫ অক্টোবর, ২০২০, ৯:২১ এএম says : 0
    N.Modi is an Gujarat Muslim genocide master planer and he continuously killing Muslim in the country.
    Total Reply(0) Reply
  • asif ১৫ অক্টোবর, ২০২০, ১০:৪৬ এএম says : 0
    meyeta muslim hole to amader o choke lagto tai na???? onner dhorme naak na golano bhalo .........
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ