পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পুলিশী নির্যাতনে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় চলছে সিলেট নগরীতে। এ ঘটনায় সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জসহ ৪ পুলিশ সদস্যকে। এছাড়া প্রত্যাহার করা হয়েছে আরো ৩ জনকে। এদিকে, নিহত যুবকের স্ত্রী এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাত আড়াইটায় কতোয়ালী মডেল থানায় দায়ের করেছেন একটি হত্যা মামলা। মামলায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ করেনি নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। নিহত রাহয়ান হত্যার বিচার চেয়ে স্থানীয় আখালিয়া এলাকাবাসী এক মানবন্ধন করে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করেছে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন কর্মসূচীর ডাক দেয়ার হুঁশিয়ারী জানিয়েছেন তারা। এদিকে, নির্যাতনের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সোচ্চার প্রতিবাদ। পাশাপাশি নিন্দা ও প্রতিবাদসহ বিচারের দাবি তুলছে বিভিন্ন সংগঠন। অপরদিকে, পুলিশের দাবি অনুযায়ী গণপিটুনীর কোনো ফুটেজ নেই ঘটনাস্থলের সিসিটিটিতে।
রায়হানের মৃত্যু নিয়ে পুলিশের দাবি যেভাবে ব্যর্থ করল রায়হানের পরিবার :
সিলেট নগরীর কাস্টঘর এলাকায় ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে এক ছিনতাইকারীর। গত রোববার ভোরে নগরীর কাস্টঘর এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। নিহতের নাম রায়হান আহমেদ। তিনি নগরীর আখালিয়াস্থ নেহারিপাড়া এলাকার বাসিন্দা। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোর্তিময় সরকার জানান, ভোরে নগরীর কাস্টঘর এলাকায় ছিনতাই কালে রায়হান আহমেদকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে স্থানীয়রা তাকে গণপিটুনি দিতে শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। এদিকে নিহত রায়হান আহমেদের নামে সিলেটের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
কিন্তু পুলিশের এ দাবি চ্যালেঞ্জ করে প্রতিবাদী হয়ে উঠে রায়হানের পরিবার। পরিবার এ মৃত্যুর জন্য সরাসরি দায়ী করে পুলিশকে। পরিবারের অভিযোগ আটকের পর দাবিকৃত ঘুষের টাকা না পেয়ে নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রাতভর নির্যাতন মেরে ফেলার হয়েছে রায়হানকে। প্রথমে ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করলেও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর ঘটনাটি তদন্তের আশ্বাস দেন পুলিশ কর্মকর্তারা। নগরীর আখালিয়া এলাকার নেহারিপাড়ার গুলতেরা মঞ্জিলের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান আহমদ ২ মাসের এক কন্যা সন্তানের জনক। নগরীর স্টেডিয়াম মার্কেটস্থ ডা. আবদুল গফ্ফারের চেম্বারে চাকরি করতো সে। ‘পুলিশি নির্যাতনে’ রায়হানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় লোকজন রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখালিয়া এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। প্রায় আধাঘন্টা সড়ক অবরোধের পর পুলিশ গিয়ে তাদেরকে শান্ত করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এদিকে স্থানীয় কাউন্সিলরসহ এলাকার মানুষজন বলছেন, নিহত রায়হান অত্যন্ত নম্র, ভদ্র ছেলে ছিল। তাকে মিথ্যা নাটক বানিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া রায়হান আগামী মাসে আমেরিকা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু পরিবারের সেই স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে পুলিশ।
সাময়িক বরখাস্ত ও প্রত্যাহার হলেন পুলিশের ৭ সদস্য :
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে রায়হান উদ্দিন আহমদের (৩৩) মৃত্যুর ঘটনায় ফাঁড়িটির ইনচার্জ পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ ৪ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে মহানগর পুলিশ। একই সাথে ৩ পুলিশ সদস্যকে করা হয়েছে প্রত্যাহার। গতকাল বিকেলে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষ। এসএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ পিপিএম জানান, সাময়িক বরখাস্তকৃতদের মধ্যে রয়েছেন, বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই আকবর হোসেন ভ‚ইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাস। এছাড়া প্রত্যাহারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন, এ এস আই আশেক এলাহী, এ এস আই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেন।
সিসিটিভি ক্যামেরায় নেই গণপিটুনির আলামত :
নগরীর নেহেরিপাড়া এলাকার যুবক রায়হান আহমদের মৃত্যু ‘গণপিটুনিতে’ হয়েছে পুলিশ দাবি করলেও স্থানীয় সিসিটিভিতে নেই গণপিটুনির ফুটেজ। এছাড়া কাস্টঘর এলাকার ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রাও গণপিটুনির ঘটনা করেছেন অস্বীকারও। গতকাল সোমবার স্থানীয় ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম জানান, পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী ‘গণপিটুনির’ যে স্থান ও সময়ের কথা বলা হয়েছে ওই স্থানে থাকা দুটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুজেটের চিত্র আমরা দেখেছি। সেদিন রাত ১০ টা থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত এই ফুজেটে গণপিটুনির কোনো ঘটনা দেখা যায়নি। তিনি আরও বলেন, এই সময়ে ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজে গণপিটুনির কোন আলামতও পাওয়া যায়নি। এছাড়া আমি স্থানীয় অনেকের সাথে কথা বলেছি, কেউই গণপিটুনির বিষয়টি জানেন না। তবে, পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন রায়হান। তবে নিহতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পুলিশ ধরে নিয়ে নির্যাতন করে রায়হানকে হত্যা করেছে। পরিবারের অভিযোগে ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠিন করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ।
স্ত্রীর দায়েরকৃত মামলার এজাহারেও রয়েছে ঘুষ ও নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা :
নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আখালিয়া নেহারিপাড়ার রায়হান উদ্দিনকে (৩৪) নির্যাতন করে হত্যা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি (২২) গতকাল (সোমবার) রাত আড়াইটার মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় দায়ের করেছেন একটি মামলা।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, প্রতিদিনের মতো গত শনিবার (১০ অক্টোবর) বিকাল ৩টার দিকে তার স্বামী রায়হান আহমদ নিজ কর্মস্থল নগরীর স্টেডিয়াম মার্কেটস্থ ডা. গোলাম কিবরিয়া ও ডা. শান্তা রাণীর চেম্বারে যান। পরদিন (১১ অক্টোবর) ভোর ৪টা ৩৩ মিনিটে ০১৭৮৩৫৬১১১১ মোবাইল নাম্বার থেকে শ্বাশুড়ি (রায়হানের মা সালমা বেগম)-এর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার (০১৭৮৭৫৭০৯৪৯)-এ কল দিলে সেটি রিসিভ করেন রায়হানের চাচা হাবিবুল্লাহ। এ সময় রায়হান আর্তনাদ করে বলেন, তিনি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আছেন। তাকে বাঁচাতে দ্রুত টাকা নিয়ে বন্দর ফাঁড়িতে যেতে বলেন রায়হান। এ কথা শুনে রায়হানের চাচা ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে রায়হান কোথায় জানতে চাইলে দায়ত্বিরত একজন পুলিশ বলেন, সে ঘুমিয়ে গেছে। আর যে পুলিশ রায়হানকে ধরে নিয়ে এসেছেন তিনিও চলে গেছেন। এসময় হাবিবুল্লাহকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফাঁড়িতে আসার কথা বলেন ওই পুলিশ। পুলিশের কথামতো হাববিুল্লাহ আবারও সকাল পৌনে ১০ টার দিকে ফাঁড়িতে গেলে দায়িত্বরত পুলিশ জানান, রায়হান অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে রায়হানের চাচা ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, রায়হানকে সকাল ৬ টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সকাল ৭ টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা যান।
এসময় হাবিবুল্লাহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনকে খবর দিলে তারা গিয়ে ওসমানীর মর্গে রায়হানের ক্ষত-বিক্ষত লাশ দেখতে পান। নিহতের স্ত্রী তানিয়া আক্তার তান্নি এজাহারে আরও বলেন, আমার স্বামীকে কে বা কারা বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে পুলিশি হেফাজতে রেখে হাত-পায়ে আঘাত করে এবং হাতের নখ উপড়ে ফেলে। পুলিশ ফাঁড়িতে রাতভর নির্যাতনের ফলে আমার স্বামী মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের দাবি জানান রায়হানের স্ত্রী তানিয়া আক্তার তান্নি।
হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধন ও রায়হানের মায়ের পূত্র হারানোর হৃদয়স্পর্শী বর্ণনা :
রায়হান আহমদের মৃত্যুর প্রতিবাদে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখালিয়া এলাকায় মানববন্ধন ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা। এ সময় কাঁদতে কাঁদতে এসে রাস্তায় বসে পড়েন রায়হানের মা। সোমবার বিকাল ৩টার দিকে এ বিক্ষোভের সময় তার সঙ্গে ছিলেন নিহত রায়হানের পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও স্বজন। ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে বিক্ষোভকারীরা ২৪ ঘণ্টার ভেতরে রায়হানের হত্যাকারীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবী তুলে বলেন, অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তারা। মানববন্ধনে রায়হানের মা আহাজারি করে বলেন, আমার ছেলে ছিনতাইকারী বা অপরাধী নয়। তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়ে বিনা দোষে রাতভর নির্যাতন করে হত্যা করেছে। পুলিশ মানুষের রক্ষক, কিন্তু সেই পুলিশই আজ আমার ছেলেকে হত্যা করলো। ঘুষের টাকার জন্য পুলিশ আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। রায়হানের দুই মাস ২১ দিনের একটি মাত্র কন্যা সন্তান রয়েছে। সে বড় হলে তাকে আমি কী সান্ত¡না দিবো, আর আমি কীভাবে এটি সহ্য করবো।
পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের শ্লোগান :
রায়হান হত্যার বিচার চেয়ে নগরীর আখালিয়া এলাকায় গতকাল বিকেল ৩টায় শরিক হন শতশত প্রতিবাদী মানুষ। তারা মানববন্ধনে রায়হান ‘হত্যা’র প্রতিবাদ এবং ‘হত্যাকারীদের’ বিচার চান। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশ বিরোধী বিভিন্ন স্লোগানও দেন এবং বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্লে-কার্ড হাতে নিয়ে রায়হানের মৃত্যুর প্রতিবাদ করেন মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।