Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আদর্শিক স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য

মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৫ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর
২. স্বামীর গৃহে অবস্থান: অতিব প্রয়োজন ব্যতীত ও অনুমতি ছাড়া স্বামীর বাড়ি থেকে বের হওয়া অনুচিত। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী- সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ রমণীগণকে সম্বোধন করে ইরশাদ করেন- ‘তোমরা স্ব স্ব গৃহে অবস্থান কর, প্রাচীন যুগের সৌন্দর্য প্রদর্শনের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়িও না।’ [সূরা আহযাব,আয়াত : ৩৩] স্ত্রীর উপকার নিহিত এবং যেখানে তারও কোন ক্ষতি নেই, এ ধরনের কাজে স্বামীর বাধা সৃষ্টি না করা। যেমন পর্দার সাথে, সুগন্ধি ও সৌন্দর্য প্রদর্শন পরিহার করে বাইরে কোথাও যেতে চাইলে বারণ না করা।

৩. নিজের ঘর এবং সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখা: স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ করা, ঘর ও সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখা স্ত্রীর দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-‘স্ত্রী স্বীয় স্বামীর ঘর ও সন্তানের জিম্মাদার। এ জিম্মাদারির ব্যাপারে তাকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন করা হবে।’ [সহিহ বুখারী,হাদীস: ২৫৪৬]
৪. নিজের সতীত্ব ও সম্মান রক্ষা করা: নিজেকে কখনো পরীক্ষা কিংবা ফেতনার সম্মুখীন না করা এবং স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজের লজ্জাস্থানের হিফাজত করা স্ত্রীর জন্য অত্যাবশ্যক। রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজান মাসের রোজা রাখে, নিজের লজ্জাস্থান হেফাজত করে এবং স্বীয় স্বামীর আনুগত্য করে, সে,নিজের ইচ্ছানুযায়ী জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবে। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৫৭৩]

৫. স্বামীর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করা: স্বামীর অনুমতি ব্যতীত নফল রোজা না রাখা। কেননা, রোজা নফল, আনুগত্য ফরজ। এ প্রসঙ্গে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন -‘নারীর জন্য স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমতি ছাড়া রোজা রাখা বৈধ নয়। অনুরূপ ভাবে অনুমতি ব্যতীত তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়াও বৈধ নয়।’ [সহিহ বুখারী, হাদীস : ৪৭৬৯] অন্যত্র হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন - ‘তোমাদের অপছন্দনীয় কাউকে বিছানায় জায়গা না দেয়া স্ত্রীদের কর্তব্য।’ [সহিহ মুসলিম, হাদীস : ২১৩৭]

তৃতীয়ত, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য: পারিবারিক জীবনকে সুখময় করার জন্য ইসলাম স্বামীর উপরও কতিপয় দায়িত্ব আরোপ করেছে। যেমন-
১. দেন মোহর: নারীর দেন মোহর পরিশোধ করা ফরজ। এ হক তার নিজের, পিতা-মাতা কিংংবা অন্য কারো নয়। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘তোমরা প্রফুল্ল চিত্তে স্ত্রীদের মোহরানা দিয়ে দাও।’ [সূরা নিসা, আয়াত : ৪]

২. ভরন পোষণ: সামর্থ্য ও প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী স্ত্রীর ভরন-পোষণ করা স্বামীর কর্তব্য। স্বামীর সাধ্য ও স্ত্রীর মর্যাদার এবং স্থান ভেদে এর মাঝে কম-বেশি কিংবা তারতম্য হতে পারে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন -‘বিত্তশালী নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে। আর যে সীমিত সম্পদের মালিক সে আল্লাহ প্রদত্ত সীমিত সম্পদ হতেই ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে পরিমাণ দিয়েছেন, তদপেক্ষা বেশি ব্যয় করার আদেশ কাউকে প্রদান করেন না। আল্লাহ তা’আলা কষ্টের পর স্বস্তি দিবেন। [সূরা তালাক, আয়াত : ৭]

৩. স্ত্রীর প্রতি স্নেহশীল ও দয়া-পরবশ হওয়া: স্ত্রীর প্রতি রূঢ় আচরণ না করা। তার সহনীয় ভুলচুকে ধৈর্যধারণ করা স্বামীর জন্য অত্যাবশ্যক। কেননা, নারীরা মর্যাদার সম্ভাব্য সবকটি আসনে অধিষ্ঠিত হলেও, পরিপূর্ণ রূপে সংশোধিত হওয়া সম্ভব নয়। হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন - ‘তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী। কারণ, তারা পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্ট। পাঁজরের উপরের হাড়টি সবচেয়ে বেশি বাঁকা। (যে হাড় দিয়ে নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে) তুমি একে সোজা করতে চাইলে, ভেঙে ফেলবে। আবার এ অবস্থায় রেখে দিলে, বাঁকা হয়েই থাকবে। তাই তোমরা তাদের কল্যাণকামী হও, এবং তাদের ব্যাপারে সৎ-উপদেশ গ্রহণ কর।’ [সহিহ বুখারি, হাদীস: ৩৩৩১; সহিহ মুসলিম, হাদীস:১৪৬৮]

৪. স্ত্রীর ব্যাপারে আত্মমর্যাদাশীল হওয়া: হাতে ধরে ধরে তাদেরকে হেফাজত ও সুপথে পরিচালিত করা। কারণ, তারা সৃষ্টিগতভাবে দুর্বল, স্বামীর যে কোন উদাসীনতায় নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্থ হবে, অপরকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। এ কারণে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর ফেতনা হতে খুব যতœ সহকারে সতর্ক করে ইরশাদ করেন- ‘আমার অবর্তমানে পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর কোন ফেতনা রেখে আসিনি।’ [সহিহ বুখারী, হাদীস :৪৭০৬] নারীদের ব্যাপারে আত্মম্ভরিতার প্রতি লক্ষ্য করে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করেছেন -যার মাঝে আত্মমর্যাদাবোধ নেই সে দাইয়ুছ (অসতী নারীর স্বামী, যে নিজ স্ত্রীর অপকর্ম সহ্য করে)। ইরশাদ করেন -‘দাইয়ুছ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ [সুনানে দারামি,হাদীস : ৩৩৯৭]

৫. স্ত্রীকে দ্বীনি মাসআলা-মাসায়িল শিক্ষা প্রদান করা। ৬. ভালো কাজের প্রতি উদ্ভূত করা। ৭. যাদের সঙ্গে দেখা দেয়ার ব্যাপারে ইসলামের অনুমতি রয়েছে, তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার সুযোগ প্রদান করা। ৮. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার তাগিদ প্রদান করা। ৯. শাসন ও সংশোধনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা। ১০. একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের মধ্যে সমতা বজায় রাখা। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে তারাই উৎকৃষ্ট, যারা তাদের স্ত্রীর কাছে উৎকৃষ্ট এবং আপন পরিবার-পরিজনের প্রতি ¯েœহশীল। [জামে তিরমিযি] অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর কষ্টদায়ক আচরণে ধৈর্য ধারণ করবে, মহান আল্লাহ তাকে হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালামের ধৈর্যের সমান ‘সওয়াব’ দান করবেন। স্ত্রীর সঙ্গে সুন্দর ও ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের আপন করে নিতে হবে। স্বামীর কাছ থেকে যখন কোনো স্ত্রী ভালোবাসা পাবে, তখন সে তার সবটুকু স্বামীর জন্য উজাড় করে দিবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, ‘স্বামী-স্ত্রীর উভয়ে যখন একে অপরের দিকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকাবে, মহান আল্লাহ তাদের দিকে রহমতের নজরে তাকাবেন।’

পরিশেষে বলতে হয় যে, কোন পরিবার সমস্যাহীন কিংবা মতবিরোধ মুক্ত নয়। এটাই মানুষের প্রকৃতি ও মজ্জাগত স্বভাব। জ্ঞানী-গুণীজনের স্বভাব ভেবে-চিন্তে কাজ করা, ত্বরা প্রবণতা পরিহার করা, ক্রোধ ও প্রবৃত্তিকে সংযমশীলতার সাথে মোকাবিলা করা। কারণ, তারা জানে যে কোন মুহূর্তে ক্রোধ ও শয়তানের প্ররোচনায় আত্মমর্যাদার ছদ্মাবরণে মারাত্মক ও কঠিন গুনাহ হয়ে যেতে পারে। যার পরিণতি অনুসূচনা বৈকি? আবার এমনও নয় যে, আল্লাহ তা’আলা সমস্ত কল্যাণ ও সুপথ বান্দার নখদর্পে করে দিয়েছেন। তবে অবশ্যই তাকে মেধা, কৌশল ও বুদ্ধি প্রয়োগ করতে হবে। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-‘কোন মুমিন পুরুষ যেন কোন মুমিন স্ত্রীকে তাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞা না করে। তার আচার-আচরনের কোনো একটি অপছন্দনীয় হলেও অন্যটি সন্তোষজনক হতে পারে।’ [সহিহ মুসলিম, হাদীস:১৪৬৯] অন্যত্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-‘পূর্ণ ঈমানদার সেই ব্যক্তি যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর। আর তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ [জামে তিরমিযী, হাদীস: ১১৬২]
লেখক: আরবী প্রভাষক, রাণীরহাট আল আমিন হামেদিয়া ফাযিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা।



 

Show all comments
  • Jack Ali ৮ অক্টোবর, ২০২০, ১১:৫৩ এএম says : 0
    In Islam, Muslim women are the Back bone of the Islamic Ummah. Women should be highly educated because children's madrasa is their Mother. If mother is pious then children will be pious so the society will be full of pious people let alone the whole country. But unfortunately those man who are the Head of a family they are billion trillion far away from Qur'an and Sunnah. Allah [SWT] Mentioned in the Qur'an to those men that they should protect from Hell fire and their Family.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বামী-স্ত্রী

১৩ অক্টোবর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন