পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। এদের মধ্যে সাম্প্রতিককালে নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাম মসজিদের দুর্ঘটনাকে ভয়াবহ বললেও কম বলা হয়। এতে ৩৪ জন নিহত হয়েছে। এ দুর্ঘটনার পর রাজধানী ও আশপাশের এলাকার গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। গ্যাস লাইনে কোথায় লিকেজ আছে, গ্রাহকদের পক্ষে অনেক সময় তা জানা সম্ভব হয় না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে কারোরই তেমন কিছু করার থাকে না। গ্যাস লাইন নিয়মিত দেখভাল ও সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করার কথা তিতাস গ্যাস কোম্পানির লোকদের। কোথাও লিকেজ শনাক্ত হলে তৎক্ষণাৎ তা মেরামত করে দেয়া তাদের দায়িত্ব। অভিযোগ আছে, গ্রাহকদের পক্ষ থেকে লিকেজের কথা জানানোর পরও মেরামত করা হয় না। বায়তুস সালাম মসজিদের তরফে নারায়গঞ্জের তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে গ্যাস লিকেজের কথা জানানো হলেও কোনো ফল হয়নি। যথাসময় ওই লিকেজ মেরামত হলে এরকম বিপুল প্রাণহানির মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো না। তিতাস গ্যাস কোম্পানি সবচেয়ে বড় গ্যাস সরবরাহ কোম্পানি। দেশের মোট গ্যাস সংযোগের ৬০ শতাংশ তার অধীন। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর প্রভৃতি এলাকার নিয়ন্ত্রণ মূলত তার। ১৯৬৭ সালে প্রথম ঢাকা শহরে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে সরবরাহ লাইনের বিস্তৃতি ঘটেছে। বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, কোনো কোনো এলাকায় গ্যাস লাইন পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে তিতাসের কোনো লোককেই নাকি এ পর্যন্ত দেখা যায়নি। অনেক ক্ষেত্রে অনেক কিছুর ক্রমোন্নতি হয়েছে। যেমন, সুয়ারেজ লাইনের আপগ্রেডেশন হয়েছে। কিন্তু গ্যাস লাইনের আপগ্রেডেশন হয়নি।
গ্যাস লাইনের একটা বড় অংশ পুরানো ও প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এ জাতীয় লাইনে, যে কোনো কারণে, গ্যাস লিকেজ হতে পারে। এ ধরনের লিকেজ যে আছে, বারবার ছোট-বড় দুর্ঘটনা তার প্রমাণ বহন করে। বিভিন্ন সময়ে গ্যাস লাইনের যে সম্প্রসারণ ঘটেছে, সেই সম্প্রসারিত লাইনের মালামাল যথেষ্ট মানসম্পন্ন নয়। এমনও দেখা গেছে, লাইন স্থাপনের ক’দিনের মধ্যেই তাতে গ্যাস লিক শুরু হয়েছে। শহরের পরিধি বেড়েছে, বাড়িঘরের পরিবর্তন হয়েছে, রাস্তাঘাটের বিস্তৃতি ঘটছে, অথচ অনেক ক্ষেত্রেই গ্যাস লাইনের বিষয়টি যথোচিত গ্রাহ্যতা পায়নি। বহু বাড়িঘর, দোকানপাট ও রাস্তাঘাটের নিচে পড়ে আছে গ্যাসের লাইন। নিয়মিত তদারকির ব্যবস্থা অব্যাহত থাকলে এমনটি হতে পারতো না। গ্যাসের অবৈধ সংযোগের কথাও এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা দরকার। অবৈধ লাইন ও সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে মালামালের মানের বিষয়টি একেবারেই বিবেচনা করা হয় না। নিম্নমানসম্পন্ন এই লাইন ও সংযোগে সার্বক্ষণিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বিদ্যমান। অনেকেই বলে থাকেন, মাটির নিচে পুরানো-জরাজীর্ণ ও নিম্নমানের গ্যাস লাইন থাকার মানে, বোমার ওপরে নিত্য বসবাস। কথাটির সত্যতা অস্বীকার বা উপেক্ষা করা যায় না।
গ্যাস লাইনে লিকেজের সংখ্যা এখন প্রকৃতপক্ষে কত তার সুনির্দিষ্ট তথ্য তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। তিন বছর আগের এক সার্ভেতে দেখা যায়, পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার গ্যাস রাইজারের মধ্যে ৩৫ হাজার লিকি। অন্য এক তথ্যে জানা যায়, চার লাখ রাইজারের ৭ শতাংশ লিকি। এসব তথ্য থেকে বুঝা যায়, লিকেজের বিষয়টি তিতাস কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন ওঠে, লিকেজ আছে জানার পরও তা মেরামতের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কেন? এ ব্যাপারে জবাবদিহি সংশ্লিষ্টরা এড়িয়ে যেতে পারেন না। জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের দুর্ঘটনা ঘটার পর তিতাস কর্তৃপক্ষ কিছুটা হলেও নড়েচড়ে বসেছে। ইতোমধ্যে গ্রাহকদের কাছ থেকে লিকেজের তথ্য চাওয়া হয়েছে। লিকেজ মেরামতের জন্যও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, পুরানো লাইন প্রতিস্থাপন ও সরবরাহ সিস্টেমের উন্নয়নে ১২০০ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। বলা বাহুল্য, এই তোড়জোড় ও উদ্যোগ যেন স্তিমিত হয়ে না যায়। গ্যাস দুর্ঘটনায় কোনো প্রাণহানি ও ক্ষতি দেশের মানুষ আর দেখতে চায় না। বর্ণিত উদ্যোগ কার্যকর করার পাশাপাশি অবৈধ গ্যাস সংযোগ কেটে দিতে হবে, প্রতিমন্ত্রীর ভাষায়, সারাদেশের যার পরিধি ৭০০ কিলোমিটার। এটা যেমন নাগরিক নিরাপত্তার হুমকি তেমনি গ্যাস কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবৈধ আয়ের উৎস। এ কারণে সরকার রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। অবশ্যই গ্যাস সরবরাহ মসৃণ ও নিরাপদ হতে হবে। জনগণের এ প্রত্যাশা পূরণ করা মোটেই কঠিন নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।