Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতব্যাপী বাড়ছে ক্ষোভ

উত্তর প্রদেশে নারী নিহতের ঘটনায় পাঁচ পুলিশ বরখাস্ত, আইনি লড়াইয়ে নির্ভয়া আইনজীবী সীমা কুশওয়া

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০২০, ১২:১৫ এএম

দিল্লির নির্ভয়ার মতোই আর এক চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে লড়াইয়ের ময়দানে নামছেন সীমা কুশওয়া। ২০১২-র ডিসেম্বরে দিল্লির রাজপথে চলন্ত বাসের মধ্যে ছাত্রীকে ছজন মিলে গণধর্ষণ করেছিল। ধর্ষকদের বর্বরতায় পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় সেই ছাত্রীর। দিল্লির নির্ভয়ার ধর্ষণ-খুন নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল গোটা দেশে। আইনি লড়াইয়ে নির্ভয়ার পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সীমা কুশওয়া। নির্ভয়া মামলার সেই আইনজীবীই এবার উত্তরপ্রদেশের হাথরসের নির্যাতিতা দলিত তরুণীর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে, আইনি লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নির্যাতিতা পক্ষের আইনজীবী হয়ে তিনিই সওয়াল করবেন। আইনি পেশার বাইরেও প্রতিবাদের খুব পরিচিত নাম সীমা কুশওয়া। অতীতে বারবার তাঁকে দেখা গিয়েছে সরব হতে। হাথরসের দলিত তরুণীর পরিবারের আর্জি তিনি উপেক্ষা করতে পারেননি। ন্যায়বিচার পাইয়ে দিতে উত্তরপ্রদেশের এই পরিবারটির পাশেও তিনি দাঁড়াচ্ছেন। অপরদিকে, উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের হাথরসে গণধর্ষিতা এক তরুণী মারা যাওয়ার পরে পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্তে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। নির্যাতিতার পরিবার থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষ এবং বিরোধী দলগুলো উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ধর্ষণ-তত্ত্ব খারিজ করে দেয়ার প্রবল সমালোচনা করছে। আসল ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করছে পুলিশ। খবরে বলা হয়, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়ে উত্তর প্রদেশের এক দলিত নারী নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারতব্যাপী ক্ষোভ বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান এ ক্ষোভের মুখে রাজ্যের হাথরাস জেলা সুপারিনটেন্ডেন্টসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একটি বিশেষ তদন্ত দলের প্রাথমিক তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে অব্যবস্থাপনায় যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই ঘটনায় আটক সন্দেহভাজন অপরাধী এবং নিহতের পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে মিথ্যা শনাক্তকারী পরীক্ষা করানোরও আহ্বান জানিয়েছে তদন্তকারীরা। সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ১৪ সেপ্টেম্বর উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে এক দলিত তরুণীকে চার উচ্চবর্ণের ব্যক্তি ধর্ষণ করে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দিল্লির হাসপাতালে ২০ বছরের ওই তরুণী মারা যান। চিকিৎসকেরা জানান, ওই নারীর মেরুদন্ডসহ শরীরের একাধিক হাড় ভাঙা ছিল। এছাড়া কেটে ফেলা হয় তার জিহ্বা। ওই দিন রাতেই পুলিশ তার দেহ সৎকার করে। অভিযোগ রয়েছে, উত্তরপ্রদেশ পুলিশ জোর করে তার দেহ আত্মীয়দের থেকে কেড়ে নিয়ে যায়। পরিবারকে বাড়িতে আটকে রাখা হয়। কয়েকজন পুলিশকর্মী মিলে রাত আড়াইটায় তরুণীর দেহ পুড়িয়ে দেন। বিক্ষোভ এড়াতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয় বলে মনে করা হচ্ছে। হাথরাসের এই ঘটনায় শুক্রবারও ভারতের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। দিল্লিতে এমনই এক বিক্ষোভে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং দলিত সম্প্রদায়ের সদস্যদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ভিম আর্মির প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ। এসব বিক্ষোভ থেকে ওই ঘটনায় হাথরাস পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করা হয়। বিশেষ করে জোর করে ওই নারীর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া ওই নিহতের গ্রামে সংবাদমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রবেশে বাধা দেওয়ার কঠোর সমালোচনা করা হয়। এদিকে, এই ইস্যুতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছে এলাহাবাদ হাই কোর্ট। তলব করা হয়েছে উত্তর প্রদেশ রাজ্যের শীর্ষ কর্মকর্তাদের। ধর্ষণ ও নৃশংসতার শিকার হয়ে ওই নারী মারা গেছেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানালেও গত বৃহস্পতিবার উত্তর প্রদেশ রাজ্যের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার দাবি করেন, তার মৃত্যুর কারণ ঘাড়ে আঘাত পাওয়া। তিনি বলেন, তার ফরেনসিক নমুনায় কোনও স্পার্ম (শুক্রাণু) পাওয়া যায়নি। নিহতের পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উত্তর প্রদেশের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। দলটির অভিযোগ, কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো এই ইস্যুতে রাজনীতির সুযোগ খুঁজছে। গত কয়েক বছরে উত্তর প্রদেশে একই ধরণের বেশ কয়েকটি ঘটনার জেরে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকেও জানানো হচ্ছে পদত্যাগের আহ্বান। তবে এর কোনওটিই দৃশ্যত আমলে নিচ্ছেন না তিনি। শুক্রবারও তিনি বলেন, ‘যারা কোনও নারীর আত্মমর্যাদা নষ্টের চিন্তাও করবে, তারা পুরোপুরি ধ্বংসের মুখোমুখি হবে।’ যদিও পুলিশ বলছে যে ময়নাতদন্তে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি, কিন্তু হাসপাতালে নির্যাতিতার একটি ভিডিও বয়ান রেকর্ড করা হয়েছিল, যেখানে তিনি দুজন ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষিতা হওয়ার কথা বলেছিলেন। যারা পুলিশের সমালোচনা করছেন তারা বলছেন, একদিকে যেমন লাশদাহ করে দেয়া হয়েছে, তেমনই ময়নাতদন্ত হয়েছে ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পরে। কিন্তু এখন যেহেতু ওই তরুণী মারা গেছেন, তাই আইন অনুযায়ী ওই বয়ানই মৃত্যুকালীন জবানবন্দী হিসেবে আদালতে গ্রাহ্য হওয়ার কথা বলে জানাচ্ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রবীন আইনজীবী ভারতী মুৎসুদ্দি। মুৎসুদ্দি বলেন, ডাইয়িং ডিক্লারেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। সেখানে ওই ধর্ষিতা যা বলেছেন, সেটা আদালত-গ্রাহ্য প্রমাণ। মামলাও সেভাবেই চলা উচিত। কিন্তু এই ঘটনায় দেখা যাচ্ছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আগ বাড়িয়ে ঘোষণা করে দিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বদলে দেওয়ার বহু নজির রয়েছে। এদিকে আবার দেহটি পুড়িয়ে ফেলা হল। এর ফলে ওই পরিবারটি বা যাদের মনে সন্দেহ রয়েছে, তাদের তো আর কোনও সুযোগ থাকবে না। টিওআই, এনডিটিভি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ