চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
এগারো
৫। স্বাধীনতা চলাচল, বসবাস, রাজনৈতিক আশ্রয় ও নাগরিকত্ব লাভের অধিকার : মুহাম্মদ সা. প্রবর্তিত রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিককের রাষ্ট্রের যে কোন স্থানে স্বাধীনভাবে চলাচল ও বসবাসের অধিকার প্রদান করে। একইভাবে স্বাভাবিক পরিস্থিেিত রাষ্ট্রের বাইরে যাওয়া ও অন্য রাষ্ট্রে বসবাসের অধিকারও প্রতিটি ব্যক্তিকে দেয়া হয়েছিল। তাঁর রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে একটি ‘বিশ্ব রাষ্ট্রব্যবস্থা’ ধারণায় বিশ্বাসী ছিল। রাসূল সা. এর রাষ্ট্র দর্শন অনুযায়ী সমগ্র বিশ্ব আল্লাহর রাজ্যস্বরূপ- যা তিনি সকল মানুষের চলাচল ও বসবাসের জন্যে অবারিত করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সমগ্র দেশ আল্লাহর আর মানুষ আল্লাহর বান্দা, তুমি যেখানে মঙ্গলজনক মনে কর বসবাস করে। “প্রাগুক্ত”। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পূর্ব পর্যন্ত মানুষের জন্য বিশ্বের যে কোন স্থানে স্বাধীনভাবে চলালচল ও বসবাসের সর্বজনীন স্বাধীনতা ছিল।
রাসূল সা. প্রবর্তিত ইসলামী রাষ্ট্রে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে প্রতিটি ব্যক্তিকে ‘ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে না- এ শর্তে রাজনৈতিক আশ্রয় ও নাগরিকত্বের অধিকার দেয়া হয়েছে। মক্কা থেকে হিজরতকারী মুহাজির জনগণকে মদীনায় আশ্রয় ও নাগরিকত্ব প্রদানসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে পুনর্বাসিত করা হয়েছিল। মুহাম্মদ সা. এর নেতৃত্বে ইসলামী রাষ্ট্র আশ্রয়প্রার্থীদের মৌলিক চাহিদা পূরণার্থে রাষ্ট্রীয় সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ বরাদ্দ করে তাদেরকে স্বাবলম্বী করে তোলার প্রশংসনীয় উদ্যোগ নেয়। “প্রাগুক্ত, পৃ. ১৭২”।
৬। নিষ্ঠুরতা ও অমানবিক আচরণ থেকে মুক্তি লাভের অধিকার : শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কোন ব্যক্তিকে শারীরিক-মানসিক শাস্তিদান বা তাকে কষ্ট দেয়াকে রাসূল সা. সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “প্রকৃত মুসলমান হচ্ছে সেই ব্যক্তি যার কথা বা হাত থেকে মুসলমানগণ নিরাপদ থাকবে। “খতীব আত তাববীয়ী, ওয়ালিউদ্দীন মুহাম্মদ, আল-মিশকাতুল মাসাবীহ, কলিকাতা : এম. বশির হাসান এ্যান্ড সন্স, তা. বি. খ. ১, পৃ. ১২”।
এমনকি এক্ষেত্রে অমুসলিম নাগরিকগণের অধিকার সম্পর্কে অত্যন্ত দৃঢ়তায় তিনি বলেছেন-“মনে রেখো! যদি কোন মুসলমান অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালায়, তার অধিকার খর্ব করে, তার উপর সাধ্যাতীত বোঝা চাপিয়ে দেয় অথবা তার কোন বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয় তাহলে কিয়ামতের দিন আমি আল্লাহর আদালতে তার বিরুদ্ধে অমুসলিম নাগরিকের পক্ষ অবলম্বন করব।” “রহমান, মো. আতাউর, ইসলামী শ্রমনীতির রূপরেখা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা, সংখ্যা ৪৬, জুন. ১৯৯৩, পৃ. ৪৩”।
৭। সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিতকরণ : ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার অধিকার দিয়ে মহানবী সা. বলেছেন- “অমুসলিমদের জীবন আমাদের জীবনের এবং তাদের সম্পদ আমাদের সম্পদের মতোই। তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, জীবনের নিরাপত্তা, সামাজিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি অধিকার ইসলাম স্বীকার করে। মদীনা সনদ অমুসলিমদের মদীনায় বসবাসের অধিকার দিয়েছিল। এমনকি, তাদের একটি অংশ বিশ্বাসঘাতকতা করা সত্তে¡ও বাকী অংশের প্রতি অন্যায় আচরণ করা হয়নি। ইসলাম একজন অমুসলিম শ্রমিককে একজন মুসলিম শ্রমিকের মতই সুযোগ-সুবিদা দেয়। এ প্রসঙ্গে মহানবী সা. বলেছেন, “সতর্ক থাক, সে ব্যক্তি সম্পর্কে যে ব্যক্তি অমুসলিমদের উপর জুলুম করে অথবা তাদের হক নষ্ট করে অথবা তাদের সামর্থ্যরে চাইতে বেশী কাজের বোঝা চাপাতে চেষ্টা করে অথবা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের থেকে কিছু জোরপূর্বক নেয়, আমি কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তির বিরুদ্ধে লড়ব। “রহমান, মুহাম্মদ মতিউর, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৮”।
অমুসলিমদের ধর্মীয় উপাস্যদের নিন্দাবাদ ও গালমন্দকে কুরআন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেন- “আল্লাহ্ ছাড়া অন্যান্য দেব-দেবীর উপসানা যারা করে তাদের উপাস্যদের তোমরা গালি দিয়ো না। “আল-কুরআন, ৬ : ১০৮”।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।