মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
আঠাশ বছর আগে ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার ঘটনায় বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানী, মুরলী মনোহর যোশী, উমা ভারতী-সহ মোট ৩২জন অভিযুক্তকে বুধবার অব্যাহতি দিয়েছে ভারতের আদালত। কোর্টের এই বিতর্কিত রায় নিয়ে ভারতজুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। হতাশা প্রকাশ করেছেন মুসলিম নেতারা।
হায়দারাবাদের এমপি ও মুসলিম সমাজের প্রথম সারির নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি প্রশ্ন করেন, ‘সারা দুনিয়া দেখেছে বাবরি ভাঙার দিনে সেখানে মঞ্চের ওপর বসে আদবানী-যোশীরা মিষ্টি বিলি করছিলেন। তাহলে তারা কীভাবে নির্দোষ হতে পারেন?’ তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরের ৬ তারিখে মসজিদটি কি জাদুবলে ধ্বংস হয়েছিল? কে করসেবকদেরকে জমায়েতের আহ্বান জানিয়েছিল? মসজিদের ভেতরে মূর্তিও কি জাদুবলেই চলে এসেছিল?’ অন্যদিকে কোর্টে অব্যাহাতি পাওয়ার পর বিজেপির এই দুই প্রবীণ নেতাই ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। আর ক্ষুব্ধ ও হতাশ মুসলিম নেতারা প্রশ্ন তুলছেন, এই অভিযুক্তদের যদি সে দিনের ঘটনায় কোনও ভূমিকাই না-থাকে তাহলে মসজিদ ভাঙল কারা?
বস্তুত লখনৌতে বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক বুধবার দুপুরে রায় পড়ার শুরুতেই জানিয়ে দেন, মসজিদ ভেঙে ফেলার এই ঘটনা আদৌ পূর্ব পরিকল্পিত ছিল না। ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার দিন বিজেপি নেতারা উন্মত্ত জনতাকে ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন বলেও আদালত মন্তব্য করেছে। বাবরি মসজিদ ভাঙার আঠাশ বছর পর যখন আদালতে মূল অভিযুক্তরা সবাই খালাস পেয়ে যান, সঙ্গে সঙ্গে কোর্টরুমের ভেতরেই মুহুর্মুহু ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান উঠতে থাকে, বাইরেও চলতে থাকে তার রেশ। বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক এস কে যাদব তার চাকরি জীবনের শেষ দিনটিতে জানিয়ে দেন, এমন কোনও প্রমাণ মেলেনি আদবানী-যোশী-উমা ভারতীর মতো নেতানেত্রীরা সেদিন মসজিদ ভাঙায় প্ররোচনা দিয়েছিলেন বলে- বরং তারা না কি সেটা আটকাতেই চেষ্টা করেছিলেন।
রায় ঘোষণার পর বিরানব্বই বছর বয়সী প্রবীণ বিজেপি নেতা মি আদবানী বাড়ির বাইরে এসে সাংবাদিকদের মিষ্টিমুখ করান। তিনি বলেন, ‘আজ ভীষণ আনন্দের এক মুহূর্ত, খবরটা শোনার পরই আমরা জয় শ্রীরাম বলে এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছি।’ বাবরি মসজিদ ভাঙায় সময় বিজেপির সভাপতি ছিলেন মুরলীমনোহর যোশী, আর সে দিন তিনিও ছিলেন ঘটনাস্থলেই। ছিয়াশি বছর বয়সী এই নেতা দাবি করেছেন রামমন্দির আন্দোলনে সামিল দিলেও তারা মোটেই মসজিদ ভাঙতে চাননি। তার বক্তব্য, ‘আমরা শুধু রামমন্দির নির্মাণের পক্ষে জনমত গড়তে চেয়েছিলাম, মানুষের সামনে তথ্যটা তুলে ধরতে চেয়েছিলাম।’ তবে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা বজরং দলের মতো সংগঠনের আরও যে অনেক নেতানেত্রী আদালতে খালাস পেলেন, তারা অনেকেই আজও জোর গলায় বলেছেন মসজিদ ভেঙে থাকলে বেশ করেছি। যেমন হিন্দু সন্ন্যাসিনী সাধ্বী ঋতম্ভরা। তিনি বলেছেন, ‘রামলালার জন্য ও সত্যের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে এই সব বাধাবিপত্তি আমি হাসিমুখে মেনে নিয়েছি।’ নব্বইয়ের দশকে ভারত জুড়ে ‘হিন্দুদের ভাবনার যে অবমাননা’ হয়েছে, বাবরি ভাঙা তারই প্রতিক্রিয়া বলেও দাবি করেন তিনি। জয়ভগবান গোয়েল নামে আর একজন অভিযুক্ত কোর্টে ঢোকার আগেই মিডিয়াকে বলে যান, মসজিদ ভাঙার জন্য তিনি মোটেও লজ্জিত নন।
আর এত সব কিছুর পরেও কীভাবে আসামিরা সবাই খালাস পেলেন, তাতে চরম বিস্ময় প্রকাশ করেছেন হায়দ্রাবাদের এমপি ও ভারতীয় মুসলিম সমাজের শীর্ষস্থানীয় নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। মি ওয়াইসির প্রশ্ন, ‘সারা দুনিয়া দেখেছে সেদিন উমা ভারতী বাবরি ভাঙার জন্য স্লোগান দিয়েছিলেন। আদবানী-যোশীরা মঞ্চে মিষ্টি বিলোচ্ছিলেন। চার্জশিটে পর্যন্ত বলা হয়েছে, আগের রাতে আদবানী বিনয় কাটিয়ারের ডেরায় গিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এরা সবাই নির্দোষ হলে আমাদের প্রশ্ন, তাহলে মসজিদ ভাঙল কারা?’
বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটির নেতা জাফরইয়াব জিলানি আবার বলছেন, ‘যেখানে মাত্র দুজন সাক্ষীর ভিত্তিতে খুনের আসামিকেও সাজা দেওয়া যায় সেখানে কয়েক ডজন সাক্ষী থাকার পরও আদালত কীভাবে বলতে পারে কোনও প্রমাণ নেই?’ তিনি বলেন, ‘আর এই সাক্ষীদের মধ্যে পুলিশ বা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্তারাও ছিলেন যারা মুসলমান নন। ছিল অসংখ্য মিডিয়া রিপোর্ট, ফোটোগ্রাফারদের ছবি।’
বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি আজকের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যাওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রায় তিন দশক পর বুধবার প্রথম সেই ঘটনায় বিচারবিভাগের রায় এল ঠিকই - কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও একপেশে এই রায়ে সংক্ষুব্ধ পক্ষ বা ভারতের মুসলিম সমাজ কোনও বিচার পেল না। সূত্র: বিবিসি বাংলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।