Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুরুচিপূর্ণ আক্রমণে কলুষিত বিতর্ক মঞ্চ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-২০২০ ট্রাম্পকে ক্লাউন, বাজে প্রেসিডেন্ট বললেন বাইডেন বাইডেনকে বারবার কথা বলতে বাধা দেন ট্রাম্প

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৭ এএম

যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠানেই চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ডে ৯০ মিনিটের এ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। ক্লিভল্যান্ডের কেজ ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত এ বিতর্কে অংশ নেন এবারের নির্বাচনের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো পরস্পরের মুখোমুখি হলেন তারা। প্রথম বিতর্কেই চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে বিতর্ক পরবর্তী এক জনমত জরিপে সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, জরিপে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই মনে করেন বিতর্কে জিতেছেন বাইডেন। প্রতি ১০ জনে ছয় জন মনে করেন, বিতর্কে দুর্দান্ত পারফরমেন্স দেখিয়েছেন বাইডেন। ফলে এতে তিনিই জিতেছেন। অন্যদিকে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২৮ শতাংশ মনে করেন বিতর্কে আসলে জিতেছেন ট্রাম্প।

খবরে বলা হয়, ৯০ মিনিটের বিতর্ক অনুষ্ঠানে একে অপরের প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য তো ছিলই, বাদ পড়েনি পরিবারের সদস্যদের আক্রমণও। এসময় বাইডেন যেমন ট্রাম্পকে ভাঁড় বলেছেন, ট্রাম্পও বাইডেনের ছেলের নাম তুলে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। তবে বিতর্কের প্রধান ইস্যু হয়ে উঠেছিল মূলত বর্ণবৈষম্য, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ, করোনাভাইরাস মহামারি, অর্থনীতি প্রভৃতি। অনুষ্ঠানে এ ইস্যুটি নিয়ে কথা হয়েছে অনেকক্ষণ। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের নিন্দা জানাবেন কি না প্রশ্ন করলে প্রথমদিকে হ্যাঁ-সূচক ভাবই ছিল তার। কিন্তু বামপন্থী গ্রুপ প্রাউড বয়েসের নাম তুলতেই মত বদলান ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘অ্যান্টিফা (অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট অ্যাকশন) ও বামদের বিষয়ে কাউকে কিছু করতেই হবে’।

এর আগে ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বাইডেন বলেন, ‘এটা এমন এক প্রেসিডেন্ট যিনি বর্ণবাদী ঘৃণা ও বিভাজন তৈরি করতে সব কিছু করছেন’। এসময় বাইডেন ১৯৯৪ সালের অপরাধ আইনে সমর্থন জানিয়ে আফ্রিকান-আমেরিকানদের ‘সুপার প্রিডেটর’ বলেছিলেন বলে পাল্টা দাবি করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও সে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডেমোক্র্যাট নেতা। জো বাইডেন বলেছেন, ‘ট্রাম্প করোনাভাইরাস মহামারিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। অনেক লোক মারা গেছেন, আরও অনেকে মারা যাবেন, যতক্ষণ না তিনি (ট্রাম্প) আরও বুদ্ধিমান হন’। এ সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প বাইডেনের বুদ্ধিমান (স্মার্ট) শব্দটি ব্যবহারে তীব্র আপত্তি জানান। ডেমোক্র্যাট প্রার্থীকে তিনি বলেন, ‘আপনি ক্লাসের সর্বনিম্ন অথবা প্রায় সর্বনিম্ন থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। আমার সঙ্গে কখনও স্মার্ট শব্দটি ব্যবহার করবেন না। আর কখনও না’।

ওহাইয়ো প্রশাসনের নিয়মানুসারে বিতর্ক অনুষ্ঠানে সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প ছাড়া তাদের পরিবারের আর কোনও সদস্যের মুখে এদিন মাস্ক দেখা যায়নি। ট্রাম্প-বাইডেনের বিতর্ক যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ইতিহাসের অন্যতম আক্রমণাত্মক ও বিদ্বেষপূর্ণ ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতের এ অনুষ্ঠানে জো বাইডেন ট্রাম্পকে বলেছেন, ‘আপনি হচ্ছেন আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে প্রেসিডেন্ট’। তিনি আরও বলেছেন, ‘সবাই জানে তিনি (ট্রাম্প) একজন মিথ্যাবাদী’। রুথ বেডার জিন্সবার্গের মৃত্যুর পর মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে দ্রুততম সময়ে একজন রক্ষণশীল বিচারপতি নিয়োগের পক্ষে এদিন আবারও যুক্তি দেখিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় বাইডেনকে তার পছন্দের প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানান রিপাবলিকান নেতা। একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বাইডেন বলে ওঠেন, ‘আপনি কি চুপ করবেন?’
বিতর্কের আরেক পর্যায়ে ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে এ ডেমোক্র্যাট নেতা বলেন, ‘এই ভাঁড়ের সঙ্গে কোনও কথা বলা কঠিন।’ ডোনাল্ড ট্রাম্প সাবেক মার্কিন সেনা কর্মকর্তাদের ‘লুজারস’ বলেছিলেন বলে কিছুদিন আগে গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি খবরের প্রসঙ্গ তুলে কথা বলছিলেন জো বাইডেন। তার প্রয়াত পুত্র বিউ বাইডেন ইরাকে নিযুক্ত মার্কিন বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছেলের কথা উল্লেখ করে জো বাইডেন বলেন, ‘সে লুজারস ছিল না। সে ছিল দেশপ্রেমিক।’ এসময় বাইডেনের আরেক ছেলে হান্টারের কথা টেনে আনেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘সত্যি? আপনি কি হান্টারের কথা বলছেন?’ ‘আমি আমার আরেক ছেলের কথা বলছি, বিউ বাইডেন।’ ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বিউকে চিনি না। হান্টারকে চিনি। হান্টারকে সেনাবাহিনী থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। কোকেইন ব্যবহারের জন্য তাকে অপমান করে বের করে দেয়া হয়েছিল। আপনি ভাইস-প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগপর্যন্ত সে আর কোনও কাজ পায়নি।’ এ কথায় প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়ে বাইডেন চিৎকার করে বলেন, ‘অনেকের মতো বাড়িতে আমার ছেলেরও মাদকের সমস্যা ছিল।’

স¤প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, গত ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছরই আয়কর দেননি ট্রাম্প। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে পরপর দুই বছর তিনি মাত্র ৭৫০ ডলার করে আয়কর দিয়েছেন। ২০১৬ সালে তিনি তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তার পরের বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে একবছর দায়িত্ব পালনের সময় এই পরিমাণ কর দিয়েছেন তিনি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের ‘পোষা কুকুরছানা’ আখ্যা দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত প্রথম বিতর্কে বাইডেন বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন ট্রাম্প। নির্বাচনের ৩৫ দিন আগে অনুষ্ঠিত বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেনের মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্ক চলে। তারা বিশ্বাসযোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা নিয়ে একে অন্যকে আক্রমণ করেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে বিধিনিষেধের কারণে বিতর্কমঞ্চে ওঠার পর ট্রাম্প ও বাইডেন পরস্পর হাত মেলাননি। নভেম্বরের নির্বাচনে প্রার্থীরা কেন বাইডেনকে ভোট দেবে; এমন প্রশ্নের উত্তরে ডেমোক্র্যাট এই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বলেন, ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরিকা রাষ্ট্র হিসেবে দুর্বল হয়ে গেছে। তবে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সরাসরি মোকাবিলা করবেন।

বিতর্ক পরবর্তী এক জনমত জরিপে সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, জরিপে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই মনে করেন বিতর্কে জিতেছেন বাইডেন। তাদের জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে প্রতি ১০ জনে ছয় জন মনে করেন, বিতর্কে দুর্দান্ত পারফরমেন্স দেখিয়েছেন বাইডেন। ফলে এতে তিনিই জিতেছেন। অন্যদিকে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২৮ শতাংশ মনে করেন বিতর্কে আসলে জিতেছেন ট্রাম্প। বিতর্কের আগে একই ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, জো বাইডেন বিতর্কে ভালো করবেন। অন্যদিকে ৪৩ শতাংশ মত দিয়েছেন যে, ডিবেটে ট্রাম্পই বিজয়ী হবেন। দৃশ্যত আগে ট্রাম্পের ব্যপারে আশাবাদী ব্যক্তিদের অনেকেই বিতর্কের পর তাদের মত পরিবর্তন করেছেন। ৬৯ শতাংশ মনে করেন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বাইডেনের অভিযোগ যৌক্তিক। অন্যদিকে ৩২ শতাংশ মনে করেন, ট্রাম্প যেভাবে বাইডেনকে আক্রমণ মনে করেছেন সেটি যথাযথ। সূত্র : বিবিসি, সিএনএন, এএফপি।



 

Show all comments
  • Fazle Rabbi Chowdhury ১ অক্টোবর, ২০২০, ৫:০৪ এএম says : 0
    এটাকেই বলে ডেমোক্রেসি, বাংলাদেশের ও উচিৎ এই জিনিস গুলি এডপ্ট করা, তাহলে টাকা দিয়ে নির্বাচিত হউয়া লাগবে না, সবাই সবার বুদ্ধি জনগনের কাছে প্রকাশ করবে জনগন তার বিনিময়ে যাকে ভালো লাগে ভোট দিবে। তাতে করে সরকারের একটা দ্বায় জনগনের উপর সব সময় থাকবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Michael Mandal ১ অক্টোবর, ২০২০, ৫:০৪ এএম says : 0
    ট্রাম্প চাচ্চুর চরিত্র ফুলের মত.... না এত বড় মিথ্যা কথা বলা ঠীক হবে না, তার চাইতে " মায়ের কোলে শিশুর ডাক ট্রাম্প চাচ্চু জিতে যাক"
    Total Reply(0) Reply
  • Rana Pratap Singha ১ অক্টোবর, ২০২০, ৫:০৫ এএম says : 0
    তবুও ভালো, ওদের ব্যবস্থা,দারুন উদাহরণ বিশ্বের কাছে
    Total Reply(0) Reply
  • Ahmed Jubaer ১ অক্টোবর, ২০২০, ৫:০৫ এএম says : 0
    কটাক্ষ করে নাই সত্য বকেছেন
    Total Reply(0) Reply
  • Ashim Rozario ১ অক্টোবর, ২০২০, ৫:০৬ এএম says : 0
    তৃতীয় বিশ্বের বিতর্ক শেষ হবে x এর বাচ্চা, y এর বাচ্চা সম্বোধনের মধ্য দিয়ে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ