মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
উপসাগরে তাদের অনুগত দুই দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চুক্তি করার পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, সউদী আরবও অচিরেই চুক্তি করে ফেলবে। তবে এ বিষয়ে সউদী শাসকদের মধ্যে দ্বিধা এবং মতভেদ রয়েছে বলে জানা গেছে।
সউদী রাজপরিবার এবং সরকারের প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির সাম্প্রতিক বক্তব্য বিবৃতি এবং ক্ষমতাধর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মৌনতা দেখে মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্লেষকরা বলতে শুরু করেছেন যে, ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক নিয়ে সউদী আরব এখনও দ্বিধা-দ্ব›েদ্ব রয়েছে। তারা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যতই চাপাচাপি করুন আর যুবরাজ মোহাম্মদ যতই উৎসাহী হোন না কেন, সউদী আরব ও ইসরাইলের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন এখনই হচ্ছে না। কায়রোতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির বিশেষজ্ঞ নায়েল শামা বলেন, ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা নিয়ে সউদী আরবের রাজপরিবারের ভেতর এখনও যে অনেক দ্বিধা-দ্ব›দ্ব রয়েছে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তার মতে, ‘ক্ষমতাধর যুবরাজ বিন সালমান দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন, কিন্তু তার বাবা বাদশাহ সালমান এখনও দ্বিধায় রয়েছেন।’
সেই দ্বিধার প্রথম লক্ষণ দেখা গেছে গত ২৩ সেপ্টেম্বর, যখন বাদশাহ সালমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে তার ভাষণে পরিষ্কার বলেন যে, সউদী আরব এখনও ২০০২ সালের আরব শান্তি পরিকল্পনার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, ইসরাইলের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক তখনই সম্ভব, যখন তারা পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী মেনে নিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় রাজী হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বা নিজের ছেলের ইচ্ছার তোয়াক্কা যে সউদী বাদশাহ করছেন না, তার আরও নমুনা চোখে পড়ছে।
প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ গত সপ্তাহে তাদের একটি অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাব কমতে থাকা এবং সেই সাথে শিয়া ইরানের সামরিক ও রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নিয়ে সউদী আরব আতঙ্কিত। সউদী বাদশাহ এখন মুখে যত কথাই বলুন না কেন, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পর্দার আড়ালে তার সরকার ইসরাইলের সাথে যোগাযোগ রাখছে। কিন্তু সেই সম্পর্ককে প্রকাশ্যে নিয়ে আসার প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যায় ২০১৮ সালের এপ্রিলে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়। সউদী যুবরাজ সেখানে মার্কিন ইহুদি নেতাদের সাথে এক বৈঠকে খোলাখুলি ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের কড়া সমালোচনা করে বলেন, দাবী-দাওয়া নিয়ে তাদের নমনীয় হতে হবে। ওই বৈঠক নিয়ে সে সময়কার বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্টে লেখা হয়, সউদী যুবরাজ খোলাখুলি বলেন, ফিলিস্তিন সঙ্কটের সমাধান সউদী আরব চায়, কিন্তু ‘ইরানের মোকাবেলা’ এখন তাদের কাছে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার। বাদশাহ সালমান এ নিয়ে ছেলের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন, এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও জেরুজালেম নিয়ে সউদী প্রতিশ্রæতি নতুন করে তুলে ধরার জন্য তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তিনি নির্দেশ দিয়ে দেন। আর সে কারণে অগাস্টে ইউএই তাদের সিদ্ধান্ত জানানোর পরপরই সউদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সল বিন ফারহান জার্মানিতে এক সফরে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ফিলিস্তিন সঙ্কট সমাধানের ইস্যু অগ্রাহ্য করার প্রশ্নই আসে না।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, যুবরাজ বিন সালমান এবং উপসাগরীয় আরব শাসকদের অনেকেই এখন মনে করছেন, ফিলিস্তিন সমস্যা নিয়ে বসে থাকা সময়ের অপচয় এবং জাতীয় স্বার্থ বিরোধী। ইরানকে ঠেকানো এবং প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ককে তারা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে যুবরাজ বিন সালমান দভিশন ২০৩০’ নামে যে পরিকল্পনা নিয়েছেন, ইসরাইলকে তার অংশীদার করতে তিনি আগ্রহী।
কিন্তু তারপরও সউদী রাজপরিবার ও শাসকদের একাংশের মধ্যে এমন দ্বিধা কেন? ডক্টর নায়েল শামা বলছেন, ‘ইসলামী নেতৃত্বের ঝান্ডা ধরে রাখাকে সউদী রাজপরিবার গুরুত্ব দেয়। তারা মনে করে এই প্রভাব তাদের সবচেয়ে বড় ক‚টনৈতিক অস্ত্র। সংযুক্ত আরব আমিরাত বা বাহরাইনের এমন কোনো আকাঙ্খা নেই।’ তিনি বলেন, ইউএই বর্তমান শাসকরা যেমন তাদের সমাজ ও রাজনীতি থেকে ইসলামী প্রভাব ঝেড়ে ফেলতে উন্মুখ, ‘সউদী রাজপরিবার এখনও তেমনটা একেবারেই ভাবে না।’ সেই সাথে যোগ হয়েছে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইসলামী বিশ্বের নেতৃত্ব নেয়ার জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগানের নতুন আকাঙ্খা।
এর পাশাপাশি অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, বিনিময়ে কোনো কিছু আদায় না করে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া সাধারণ সউদীদের মধ্যেও গ্রহণযোগ্য হবে না - এ নিয়েও সউদী রাজপরিবারের একাংশের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। সউদী জনমতের কিছুটা আঁচ পাওয়া গেছে ইউএই এবং বাইরাইনের সাথে ইসরাইলের চুক্তি সইয়ের দিন। ওয়াশিংটনে ১৫ সেপ্টেম্বর চুক্তির পরপরই আরবিতে ‘এই স্বাভাবিক সম্পর্ক বিশ্বাসঘাতকতা’ এমন টুইটার হ্যাশট্যাগ সউদী আরবে ঝড় তোলে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।