Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রতিবেশীদের সাথে ভারতের সম্পর্কের অবনতি ও বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৫২ পিএম

মোদি সরকারের ভ্রান্ত নীতির কারণে প্রতিবেশীদের সাথে ‘বন্ধুত্বের’ সম্পর্ক হারিয়ে ভারত এক বিপজ্জনক পথে এগোচ্ছে বলে মনে করছে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। দলটির শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধী টুইটারে এই মন্তব্য করার পাশাপাশি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ এর একটি লিঙ্কও জুড়ে দিয়েছেন, যাতে বলা হয়েছে ভারতের বাংলাদেশের সম্পর্ক একদিকে যখন দুর্বল হচ্ছে, অন্যদিকে তখন চীনের সাথে সম্পর্ক শক্তিশালী হচ্ছে।

বস্তুত ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকার ভারতের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দিল্লির পররাষ্ট্রনীতির একটি মূল কথা হল ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’। যার অর্থ দাঁড়ায় ‘সবার আগে প্রতিবেশীরা’। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীর দাবি, এই বন্ধু প্রতিবেশী দেশগুলোই এখন একে একে ভারতকে ছেড়ে যাচ্ছে - আর এ প্রসঙ্গেই তিনি দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনের সূত্র ধরে বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। বিগত বহু দশক ধরে এই প্রতিবেশীদের সঙ্গে কংগ্রেস যে ‘সুসম্পর্কের জাল’ তৈরি করেছিল মোদি সরকার সেটাও ধ্বংস করে ফেলছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

ভারতের শেষ কংগ্রেসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন সালমান খুরশিদ। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন, ‘প্রতিবেশী দেশগুলো আজ আমাদের প্রতি কতটা বন্ধুত্বপূর্ণ সেটা তো আর তর্কের বিষয় নয় - চোখের সামনে দেখাই যাচ্ছে। এই জন্যই আমাদের দলনেতা বলেছেন আমরা খুব দ্রুত বন্ধুদের হারাচ্ছি, যদি না এর মধ্যেই পুরোপুরি হারিয়ে থাকি।’ তিনি বলেন, ‘আসলে ভারতের বর্তমান সরকার ঘরোয়া রাজনীতিতে নিজেদের দৈত্য বলে মনে করে, যাদের কোনও পরামর্শ বা সহযোগিতা লাগেই না - আর তাদের পররাষ্ট্রনীতিতেও ঠিক সেটারই প্রতিফলন ঘটছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আফ্রিকা থেকে আসিয়ান, মধ্য এশিয়া-আরব কিংবা নেইবারহুড সব দেশকে চিরকাল সমকক্ষ ভেবে এসেছি, শক্তি-সামর্থ্য-অর্থনীতিতে ফারাক থাকলেও কখনও সেটা তাদের মনে করাতে যাইনি।’

তবে দিল্লিতে বিজেপি’র পলিসি রিসার্চ সেলের অনির্বাণ গাঙ্গুলি অবশ্য একথা মানতেই রাজি নন যে বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশীরা ভারতকে ছেড়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে দ্য ইকোনমিস্ট বা রাহুল গান্ধীর মতামতকেও নস্যাৎ করে দিচ্ছেন তিনি। তার কথায়, ‘রাহুল গান্ধী আন্তর্জাতিক রাজনীতি কতটা বোঝেন তা নিয়ে মন্তব্য না-করাই ভাল। আর ইকোনমিস্ট-ও এমন একটা জার্নাল যারা দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষত ভারতকে বোঝে না বললেই চলে!’ তার পাল্টা প্রশ্ন, ‘এই যে বলা হচ্ছে আমরা বন্ধুদের হারাচ্ছি, তো এই বন্ধুরা ভারতকে ছেড়ে যাচ্ছেটা কোথায়?’

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, সিনিয়র কংগ্রেস এমপি ও বর্তমানে বিদেশ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্য পরনিত কাউর অবশ্য এ প্রশ্নের জবাব দিয়ে বলেছেন, ‘এই দেশগুলো চীনের দিকে ঝুঁকছে।’ তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর আগেও আমাদের নেইবারহুডে যে পরিস্থিতি ছিল তার চেয়ে এখন অনেকটাই আলাদা। কারণ এখানে চীনের প্রভাব বাড়ছে আর সেটা আমাদের পররাষ্ট্রনীতির জন্যও খুব উদ্বেগের বিষয়।’

অনির্বাণ গাঙ্গুলি অবশ্য দাবি করছেন, নেপাল কিংবা বাংলাদেশে কোথাও এমন কিছু ঘটেনি যাতে ভারত প্রমাদ গুণবে। তিনি বলেন, ‘নেপালেও প্রধানমন্ত্রী যখন সে দেশের পার্লামেন্টে ভারত-বিরোধী প্রস্তাব পাস করাচ্ছেন, আমরা তখন কাঠমান্ডুর পশুপতিনাথ মন্দিরে ব্যাপক সংস্কারের কাজ করছি, সিউয়েজের লাইন বসাচ্ছি।’ তার দাবি, ভারত বিশ্বাস করে সম্পর্কটা দুদেশের মানুষের মধ্যে। সরকার আজ আছে, কাল নেই - কিছু আসে যায় না।

সালমান খুরশিদ কিন্তু মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘মুখে বাংলাদেশকে মিষ্টি কথা বলব আর আসামের বিপুল জনসংখ্যাকে রাতারাতি বাংলাদেশি তকমা দিয়ে দেব, এটা তো হয় না। সুসম্পর্ক চাইলে বাংলাদেশ কোন বিষয়গুলোতে স্পর্শকাতর, সেটা আমাদের আচরণে খেয়াল রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘অনুপ্রবেশ সমস্যা মোকাবিলা করতে চাইলে ঠান্ডা মাথায় ঢাকাকে বোঝানো হোক, বলা হোক তোমাদেরই পরিবার এ দেশে রয়ে গেছে - ওদের ফিরিয়ে নাও, আমরাও সাহায্য করব। তার বদলে আমরা কী বলছি, না বাংলাদেশিদের ছুঁড়ে ফেলে দেব!’

এই ঔদ্ধত্য আর হঠকারিতাই বন্ধু প্রতিবেশীদের মধ্যে ভারতের ভাবমূর্তিকে তলানিতে নিয়ে এসেছে বলে কংগ্রেসের বক্তব্য। যদিও ক্ষমতাসীন বিজেপি সেই সমালোচনা গায়ে মাখছে এখনও তেমন কোনও ইঙ্গিত নেই। সূত্র: বিবিসি নিউজ।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৯:৪৩ পিএম says : 0
    এধরনের একটা সুন্দর প্রতিবেদন আমাদেরকে উপহার দেয়ার জন্যে ইনকিলাব পত্রিকাকে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রতিবেশীদের নিয়ে ভারতের সম্পর্ক সম্বন্ধে রাহুল গান্ধী যে বক্তব্য রেখেছেন এটা প্রকৃত দৃশ্য। এখন মোদী সরকারের যে অবস্থা এখান থেকেই কংগ্রেসকে বাজিমাত করতে হবে। এবার যদি কংগ্রেস ভুল না করে তাহলে মোদী সরকারের পতন অনিবার্য। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে বিশ্বাস করি সোনিয়া গান্ধী ভাল ভাবেই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি যেভাবে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এভাবেই তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে তাহলেই তিনি আবার ক্ষমতায় আসতে পারবেন ইনশ’আল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ