বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ধর্মীয় অনুশাসনগুলো যারা কড়াকড়িভাবে মেনে চলে না তাদের মধ্যে খুনাখুনি, হত্যা-আত্মহত্যা ছাড়াও মারাত্মক অপরাধপ্রবণতা দেখা যায়। কারণ, মানুষমাত্রই রাগ-ক্রোধের মতো দোষ-ত্রæটির অধিকারী। একমাত্র ধর্মীয় শিক্ষাই তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যুগের পটপরিবর্তনে অনেক কিছুরই পরিবর্তন ঘটে। প্রাচীনকালের অপরাধের ধরন-করণের সাথে আধুনিক যুগের অপরাধের ধরন-করণে অভিনব কলাকৌশল অনেক কিছু যোগ হয়েছে এবং অপরাধের চরিত্রগত নানা পরিবর্তনও সাধিত হয়ে চলেছে। শাস্তি প্রক্রিয়াগুলোও নব নবরূপ ধারণ করেছে। সামাজিক অপরাধ-পাপাচারগুলো বর্তমানে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, বিশেষত হত্যা-আত্মহত্যার মতো মহাপাপ কেবল কোনো বিশেষ দেশের জাতীয় সমস্যা হিসেবে সীমাবদ্ধ নয়, রীতিমতো বৈশি^ক সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
হত্যা বনাম আত্মহত্যার মতো হত্যা জালিয়াতির কথাও একই সঙ্গে এসে যায়। এ জালিয়াতির প্রচলন সর্বত্র ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। সমাজের নানা স্তরে, নানা অজুহাতে সচেতনভাবে হত্যাকাÐ ঘটিয়ে তাকে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেয়ার প্রবণতা নতুন না হলেও হত্যার আধুনিক কলাকৌশল অনেক সময় মানুষের চিন্তা জগতকেও বোকা বানিয়ে ছাড়ে। এ জালিয়াতির মাধ্যমে হত্যাকারী বা হত্যাকারী চক্র নিজেদের পাপকে আড়াল করে আইনের হাত হতে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
অনেকে নিরাপদ জীবন সমাপ্ত করে। অনেক সময় জ্ঞাত-অজ্ঞাত কারণে দায়ের করা মামলা ধামাচাপা পড়ে যায়, আবার অনেক হত্যাকাÐ আত্মহত্যার নামে মামলা-বিচারের আওতায়ই আসে না। তবে সৎসাহসী গোয়েন্দা সংস্থা মামলা হাতে নিলে সঠিক হত্যাকাÐ বিলম্বে হলেও উদঘাটিত হয়ে যায় এবং হত্যাকারীকে বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়, যার নজির আমাদের দেশেও কম নয়। হত্যাকে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেয়ার এ অপসংস্কৃতি যে কোনো জাতির জন্য ঘৃণ্য কলঙ্ক, যেখানে নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীরা ন্যায়বিচার হতে চিরবঞ্চিত থাকে।
মানুষের দাম্পত্য জীবনের ঝগড়া-কলহ, পারিবারিক ঘরোয়া বিবাদ-বিসংবাদ, অভাব-অনটন, দুর্ব্যবহার, পরীক্ষায় ব্যর্থতা, যৌতুকের অভিশাপ, বাল্যবিবাহ, অসম বিবাহ, বেকারত্ব, হতাশা, অধৈর্য, অবৈধ প্রেমাশক্তি ও প্রেমে ব্যর্থতা, অপরাধ ঢাকার প্রয়াস, অপরাধীর আত্মরক্ষার অপচেষ্টা ইত্যাদি বহু প্রকারের কারণ আত্মহত্যার অন্তরালে সক্রিয় থাকে। এসব ব্যাপারে পিতা-মাতা-অভিভাবক মহল সতর্ক-সজাগ ও সহনশীল থাকলে আত্মহত্যার আবেগী প্রবণতা ও জিদ্দি মনোভাব লাগামহীনভাবে সংক্রমিত হতে পারে না এবং সমাজজীবনের ক্ষতিকর ও সর্বনাশা প্রভাব হতে মুক্ত থাকতে পারে।
মনে রাখতে হবে, আধুনিক আকাশ-সংস্কৃতির বদৌলতে যে অশ্লীল ও অপসংস্কৃতি দুনিয়াময় ছড়িয়ে পড়েছে তা অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলমান। বিশেষত নানা দেশে, নানা স্থানে উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী ও ছাত্র-ছাত্রীদের একটা অংশ এর ছোবলের শিকার। শিক্ষিত-অশিক্ষিত অনেকের মধ্যেও এর কুপ্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
সাধারণত আমাদের দেশে আত্মহত্যা যারা করে তাদের মধ্য নারীসহ নানা শ্রেণির লোক রয়েছে এবং তাদের মধ্যে আবার যৌতুক সমস্যাও রয়েছে। যৌতুককে কেন্দ্র করে দাম্পত্য বিরোধ ও পারিবারিক নানা অপ্রীতিকর ঘটনার উদ্ভব হয়। অনেক সময় নারীঘটিত বিরোধই আত্মহত্যার কারণ হয়ে থাকে। একশ্রেণির বখাটে তরুণ ও দুশ্চরিত্র লোকের অশুভ তৎপরতা ও ঘৃণ্য কার্যকালাপ হতে বিকল্প পথ খুঁজে না পেলে আত্মহত্যার সর্বনাশা পথ অনুসরণ করার দৃষ্টান্তও কম নয়।
এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, আমাদের দেশে জঙ্গি দমন অভিযানের ন্যায়, ক্যাসিনো-বিরোধী অভিযান নিষ্ঠা, সততা ও সৎসাহসিকতা এবং প্রয়োজনে কঠোরতাও জোরালোভাবে অব্যাহত রাখা হলে অপরাধী চক্রের জন্মদাতা-হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে কলকাঠি নাড়াতে পারবে না, বিচারের কাঠগড়ায় তাদের দাঁড়াতে হবে।
ফলে বড় বড় অপরাধ, পাপাচারের গÐি সীমিত হয়ে আসতে বাধ্য এবং দেশের মাদকাসক্তির ছোবলও অপরাপর মারাত্মক অপরাধ হতে মুক্ত হওয়ার আশা করা যায়। খুন, গুম, হত্যা, আত্মহত্যা, অপহরণ, দাগাবাজি, প্রতারণা ইত্যাদি অপরাধ-অপকর্ম ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে এবং শান্তি শৃঙ্খলার অনুক‚ল পরিবেশ বিরাজ করবে, এরূপ আশা অনেকের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।