মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রচারে অন্যতম হাতিয়ার হিন্দু জাতীয়তাবাদ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেও গুজরাতের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নেপথ্যে ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে ও নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে তারা সুপরিকল্পিতভাবে মুসলিম বিদ্বেষ তৈরি করে চলেছে। এ ধরণের প্রচারণা চালাতে তাদের মূল হাতিয়ার ছিল মোশ্যাল মিডিয়া। তবে, ইদানিং ভারতের টিভি চ্যানেলগুলোতেও পরিকল্পিতভাবে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানো শুরু হয়েছে।
২০০৭ সালে যাত্রা শুরুর সময় থেকে ডানপন্থী এবং হিন্দু চরমপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী হিসেবে পরিচিত সুদর্শন টিভি নামের একটি সংবাদ চ্যানেল সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়ে ওঠে যখন এর মালিক সুরেশ খান্ডেরাও চাভাঙ্কে গত মাসে ঘোষণা দেন যে, ভারতীয় মুসলিমরা কিভাবে ‘কেলেঙ্কারির মাধ্যমে’ দেশের কঠিন সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা উৎরে যাচ্ছে, সে বিষয়ে দশ পর্বের ধারাবাহিক প্রচার করবেন তারা। চাভাঙ্কে একটা নজিরবিহীন ভয়াবহ দাবি জানান যাতে ভারতের সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় মুসলিম তরুণদের অংশ নিতে দেয়া না হয়। তার ভাষ্যমতে, সিভিল সার্ভিসে টিকে যাওয়ার বিষয়টি মুসলিম তরুণদের একটি কৌশল, যেটার মাধ্যমে তারা স্পর্শকাতর পদগুলোতে ঢুকে দেশের হিন্দুদের বিরুদ্ধে গোপনে জিহাদ চালাচ্ছে।
সাংবাদিক বেশধারী ৪৮ বছর বয়সী এই ধর্মান্ধ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) একজন সক্রিয় সদস্য, যে সংগঠনটি ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণার দাবি করে, যেখানে মুসলিমরা হবে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। গত ১৩ সেপ্টেম্বর চাভাঙ্কে একটি সংবাদ পোর্টালকে তার পরিকল্পনার ব্যাপারে বিস্তারিত জানান যে কিভাবে তার চ্যানেল ভারতে হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এক পডকাস্ট সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘আমার উদ্দেশ্য হলো ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করে তোলা। আমি বিস্তারিত বলবো না, তবে অতীতের ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি করা হবে না এবং এই সময় খুবই কাছে এসে গেছে।’
চাভাঙ্কে আর তার সংবাদ চ্যানেল সুদর্শন টিভি একমাত্র চ্যানেল নয় যারা ভারতের মুসলিমদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে, যেখানে জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ হলো মুসলিম এবং তারা দেশের সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু। করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য তাবলিগি জামাতের ধর্মপ্রচারকদের দায়ি করা থেকে শুরু করে সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভকালে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার অসহায় শিক্ষার্থীদেরকে অগ্নিসংযোগকারী, লুটেরা ও পাকিস্তানের মদদপুষ্ট পুতুল আখ্যা দিয়ে ভারতের টিভি নিউজ চ্যানেলগুলো রুয়ান্ডার মতো গণহত্যার পরিস্থিতি তৈরির দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে।
সুদর্শন নিউজে দাবি করা হয়েছে যে, ভারতের সিভিল সার্ভিসে ভারতীয় মুসলিমদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তবে তথ্য মিলছে তার ঠিক বিপরীত। ২০০৬ সালে সাচার কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী সিভিল সার্ভিসে মুসলিম রয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ, যেখানে তাদের জনসংখ্যা হলো ১৪ শতাংশ। ভারতের মুসলিমদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, এবং শিক্ষাগত অবস্থা বোঝার জন্য সব সম্প্রদায়ের সমান সংখ্যক সদস্য নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের এই সাচার কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যার প্রধান ছিলেন দিল্লী হাই কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি রাজিন্দার সাচার। গত বছর ভারতের কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসের জন্য মোট ৮২৯ জনকে নেয়া হয়, যাদের মধ্যে মুসলিম হলো মাত্র ৩৫ জন। এর অর্থ হলো সিভিল সার্ভিসে মুসলিমদের অংশগ্রহণ মাত্র ৪ দশমিক ২২ শতাংশ।
ভারতের মুসলিম জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে যে ভয় সৃষ্টি করা হচ্ছে, সেটার ভিত্তি হলো এই বিশ্বাস যে, মুসলিম জনসংখ্যা অস্বাভাবিক গতিতে বাড়ছে এবং শিগগিরই ভারতে হিন্দুদেরকে তারা সংখ্যালঘুতে পরিণত করবে এবং ভারতকে নয়া পাকিস্তানে পরিণত করবে। অথচ ভারতে হিন্দুরা হলো জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ। টিভি অ্যাঙ্কাররা প্রকাশ্যে দাবি করছেন যে, ২০২৯ সালের পর কোন হিন্দু আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না, কারণ অধিকাংশ ভারতীয় তখন মুসলিম থাকবে।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময়ও হিন্দু চরমপন্থীরা এই একই ভয়ের মনস্তত্বকে ব্যবহার করেছিল। ব্যাপক মাত্রায় অপপ্রচার চালানো হয়েছিল যে, মুসলিমদের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা দেশের হিন্দু সংখ্যাগুরুদের জন্য মহাবিপর্যয়ের কারণ হবে। আজকের ভারতেও সেই একই অদ্ভুত যুক্তি ছড়ানো হচ্ছে। নিউজ অ্যাঙ্কাররা স্টুডিওগুলো থেকে চিৎকার করছেন কিভাবে মুসলিমদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে হিন্দু জনসংখ্যার চরম অবনতি হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো গত ৪০ বছর ধরে ভারতে মুসলিমদের জনসংখ্যা ক্রমাগত কমছে। শুমারির তথ্য অনুযায়ী মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩২.৯ শতাংশ থেকে কমে ২৪.৬ শতাংশে নেমে এসেছে। ১৯৮১-৯১ সালে মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ছিল ৩২.৯ শতাশং। ১৯৯১-২০০১ সালে এটা কমে ২৯.৩ শতাংশ হয় এবং ২০০১ থেকে ২০১১ এর সর্বসাম্প্রতিক শুমারি অনুযায়ী এটা আরও কমে ২৪.৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
অন্যদিকে, সরকারের নিজের হিসাবই বলছে যে, প্রতি ১০ বছরে ভারতে হিন্দুদের জনসংখ্যা যতটা বাড়ছে, সেটা দেশের মোট মুসলিম জনসংখ্যার সমান।
সব ভাষার টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেই বহুদিন ধরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে। এর মাত্রা ক্রমাগত বেড়েছে কিন্তু এই অপপ্রচার বন্ধ করার জন্য কখনও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। হিন্দুত্ববাদী ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ কর্পোরেট হাউজগুলোর অর্থায়নে পরিচালিত ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো ঘৃণার বণিক হয়ে উঠেছে।
মুসলিমদের ব্যাপারে একটা ঘৃণা তৈরির জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা রয়েছে। গড় হিন্দু জনগণকে আগামীর কর্মসূচির জন্য প্রস্তুত করার জন্যই এটা করা হচ্ছে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে যেভাবে বহু বছর ধরে চরম মিথ্যাচার আর অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, সেটা আগামীতে আরও খারাপ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। রুয়ান্ডার গণহত্যায় যে শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটা হলো ‘তেলাপোকা’। ভারতে বলা হচ্ছে ‘উঁইপোকা’। এই ঘৃণা ছড়ানোর মূল উদ্দেশ্য হলো হিন্দুত্ববাদীদের কট্টর এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মধ্যপন্থী গড় হিন্দুদের পক্ষে নেয়া।
বিশিষ্ট ভারতীয় লেখক ও অধিকার কর্মী রাম পুনিয়ানির মতে সমাজের দুর্বল অংশের অধিকার নিয়ে যারা সংগ্রাম করছেন, তারা এখন গণতান্ত্রিক অধিকার আর উদারনৈতিক ক্ষেত্রটাকে ধরে রাখার জন্য তাদের কৌশলগুলো নতুন করে ভেবে দেখছেন। তিনি বলেন, একজন স্বৈরশাসকের হাতে হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নের যে হুমকি, সেটা আস্তে আস্তে বাস্তব হয়ে উঠছে। পুনিয়ানি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা আর নাগরিক সমাজের প্রতিরোধের বিরুদ্ধে হুমকিটা প্রচ্ছন্ন। এই গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা আর অধিকারকে রক্ষার জন্য অনেক নাগরিক সমাজের গ্রুপ একসাথে হয়ে বহুত্ববাদ, উদারনৈতিক মূল্যবোধের পক্ষে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এমন একটা সমাজের স্বপ্ন আর বাস্তবায়নের জন্য কৌশল ঠিক করার বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে, যেখানে বাক স্বাধীনতা, বিশ্বাস এবং আমাদের বৈচিত্রকে সমুন্নত রাখা হবে।’ সূত্র: এসএএম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।