Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাপানে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বয়ষ্কদের সংখ্যা!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:১৩ পিএম

পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় প্রবীণ জনগোষ্ঠীর দেশ জাপান। দেশটির মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশের বয়স ৬৭’র বেশি। জাপানের জাতীয় অর্থনীতিতে এমনিতেই রয়েছে এর বড় প্রভাব। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় জাপানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা আশঙ্কজনকভাবে বাড়ছে। সম্প্রতি জাপান সরকার দেশটিতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা নিয়ে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, ওই দেশে প্রতি দেড় হাজার মানুষের মধ্যে ১ জনের বয়স ১০০ বছর বা তার উপরে।
জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রথমবারের মতো এবার দেশটিতে শত বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে। সারা বিশ্বে এটাই শত বছর বয়সী মানুষের দিক দিয়ে সর্বোচ্চ। খবর সিএনএনের
জাপান সরকারের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে বর্তমানে ৮০ হাজার ৪৫০ জন মানুষের বয়স ১০০ বা তার বেশি। গত বছরের তুলনায় এ বছর এ সংখ্যা ৯ হাজার ১৭০ জন বেড়েছে। জাপানে বয়স্কদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যাই বেশি। শতবর্ষী মানুষের শতকরা ৮৮ ভাগই নারী। জাপানে নারীদের গড় আয়ু ৮৭ দশমিক ৪৫ বছর। অন্যদিকে পুরুষদের গড় আয়ু ৮১ দশমিক ৪১।
জাপান ১৯৬৩ সাল থেকে শত বছর বয়সী মানুষের তথ্য লিপিবদ্ধ শুরু করে। ওই সময় দেশটিতে ১০০ বা তার বেশি বয়সী মানুষ ছিল ১৫৩ জন। তবে ১৯৮৮ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ হাজার জনে।
এদিকে প্রবীণ জনগোষ্ঠী নিয়ে আরো একটি অপ্রত্যাশিত সমস্যায় পড়েছে জাপান। পৃথিবীর সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রবীণ কারাগারবাসীও এখন জাপানেই! কারাগারে বয়স্ক আসামীদের জায়গা করে দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে জাপানের কারা কর্তৃপক্ষের। আর এই তথ্যের সবচেয়ে অস্বাভাবিক এবং অস্বস্তিকর দিকটি হলো, এই আসামিদের একটা বড় অংশই দণ্ডিত হচ্ছে ইচ্ছাকৃত। অর্থাৎ, তারা জেনেবুঝে, একরকম পরিকল্পিতভাবেই ছোটখাটো অপরাধ করছেন, বিশেষ করে দোকান থেকে চুরি করছেন জেলে যাবার জন্য!
জাপানের কারাগারগুলোতে এখন প্রতি ৫ জনে ১ জন হলেন প্রবীণ বন্দী। কিছু বড় কারাগারে তো দেখা গেছে, প্রতি ১০ জনে ৯ জনই ‘সিনিয়র সিটিজেন’ তথা জ্যেষ্ঠ নাগরিক। এমনিতেই জাপান বয়স্ক নাগরিকদের পরিচর্যায় নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিল। এই সমস্যায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে বয়স্কদের একাকিত্বের হার। ১৯৮৫-২০১৫ সাল পর্যন্ত জাপানে একা বসবাস করা প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৬০০ শতাংশ! আর এই একা মানুষগুলোই যে চুরির মতো অপরাধে লিপ্ত হচ্ছেন, তার পরিসংখ্যানগত প্রমাণও প্রকাশ করেছে জাপানের পুলিশ। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রবীণ বন্দীদের অর্ধেকের বেশিই একাকী বসবাসকারী। তাদের মাঝে আবার ৪০ শতাংশের পরিবার আছে, কিন্তু তারা বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করেন কিংবা করতে বাধ্য হন।
“তাদের একটি বাড়ি আছে, একটি পরিবারও হয়তো আছে, কিন্তু সুখ নেই!”- প্রবীণ বন্দীদের সম্পর্কে জাপানের এক কারাগারের ওয়ার্ডেন ইয়ুমি মুরানাকা
এদিকে জাপানের কারাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের কর্মীদের কারাগারে অন্যান্য কাজের চেয়ে নার্সের কাজই বেশি করতে হচ্ছে! কেননা, বয়স্কদের একটু বেশিই পরিচর্যা প্রয়োজন হয়। তাছাড়া, জাপানে কারাবন্দী প্রতিটি মানুষের পেছনে বছরে ২০ হাজার ডলার ব্যয় হয়। প্রবীণদের বিশেষ যত্ন এবং চিকিৎসাসেবার জন্য সে খরচ আরো বৃদ্ধি পায়। ফলে কারাগারের জন্য বাৎসরিক খরচ মেটাতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে জাপান সরকারকে।
কারাগার এমন একটি জায়গা, যেখানে বিনা খরচে মাথা গোঁজার ঠাঁই আর আহার পাওয়া যায়। কিন্তু তারপরও দরিদ্র কিংবা অতি দরিদ্র মানুষজনও কারাগারের বন্দিত্ব নিতে চাইবেন না। অথচ জাপানের বৃদ্ধ মানুষজন প্রতিনিয়ত কারাগার জীবনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েই চলেছেন, যাদের বড় অংশেরই অর্থ সমস্যা নেই। তারা কারাগারের যে বিষয়টির প্রতি আকৃষ্ট হন, তা হলো সঙ্গী লাভের উপায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাপান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ