Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ডুমুর

| প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:১৮ এএম

পৃথিবীর সব মানুষের অত্যন্ত প্রিয় খাবার হলো ফল। মানব দেহকে সুস্থ ও সবল রাখার জন্য ফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যবস্তু। আমাদের আশে পাশে এমন সব ফলমূল মহান আল্লাহ সৃষ্টি করে রেখেছেন যা মানুষের জন্য খুবই উপকারি। কিন্তু আমাদের অবহেলা ও সচেনতার অভাবে আমরা সেই উপকারিতা ভোগ করতে পারি না। এমন একটি অবহেলিত ও অযত্নে বড় হওয়া গাছ হল ডুমুর। গাছের ফলই ডুমুর। পবিত্র কোরআনে যে ফলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ডুমুর বা আঞ্জির। পবিত্র কোরআনে ৯৫নং সূরার নাম হলো আত ত্বিন। এ সূরার প্রথম আয়াতেই এফলের কথা আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। আমরা অনকেইে এ ফলের পুষ্টিগুণের কথা জানিনা। আসুন এ ফলটির পুষ্টি গুণ সম্পর্কে কিছু জেনে নেই।

উদ্ভিদ পরিচিতি ঃ গ্রাম বাংলার বাড়ি ঘরের আশ পাশে এখনও ডুমুর গাছ যথেষ্ঠ পরিমাণে রয়েছে। উদ্ভিদ জগতের মোরাসিয়া গোত্রের উদ্ভিদ, এটি ক্ষুদ্রাকার তরুক্ষীর যুক্ত বৃক্ষ। এ গাছের শাখা প্রশাখায় প্রচুর ফল ধরে।

পৃথিবীতে প্রায় ৮০০ প্রজাতির ডুমুর গাছ আছে। বাংলাদেশে মোট ৪৭ প্রজাতির ডুমুর গাছে ডুমুরের ফুল দেখা যায় না। কারণ ফুলগুলো খুবই ছোট আকৃতির একটি ফাঁপা কাঠামোর মধ্যে আবৃত থাকে। ডুমুরে একটি ছোট্ট ছিদ্র থাকে যাকে ওস্টিওল বলে। স্ত্রী বোলতা ওস্টিওলের মধ্য দিয়ে ডুমুরে প্রবেশ করে ডিম পাড়ে, সেই ডিম থেকে লার্ভা হয়। সেই লার্ভা ডুমুরের ফুল খেয়ে বড় হয় এবং সেই ডুমুর থেকে বেরিয়ে অন্য ডুমুরে প্রবেশ করে পুনরায় ডিম পাড়ার জন্য। এভাবেই তাদের মাধ্যমে এক ফুলের পরাগরেণু অন্য ফুলের পরাগদানীতে স্থানান্তরিত হয়। ফলে ফুলের পরাগায়ন ঘটে। বীজ তৈরী হয়। পরে ডুমুরের বংশ বিস্তার হয়।

রাসায়নিক উপাদান ঃ ডুমুরের পাতায় থাকে গ্লাইকোসাইডস, গ্লুয়ানল অ্যাসিটেট, বিটা অ্যামিরিন, বিটা-সিটোস্টেরল। বাকলে থাকে সিরাইল বিহেনেট, লিউপিয়ল, সিউপিয়ল অ্যাসিটেট, আলফা এবং বিটা অ্যামিরিন। ফলে থাকে গ্লুকোজ, লিউপিয়ল অ্যাসিটেট, বিটা সিটোস্টেরল, হেনট্রিয়াকনটেন সহ আরো নানা উপাদান থাকে।

পুষ্টি উপাদান ঃ পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগি তরতাজা ডুমুরের পুষ্টি উপাদান নিম্নরূপ ঃ প্রোটিন ৬.০০ গ্রাম, আঁশ ৯.৮ গ্রাম, শর্করা ৬৩.৮৭ গ্রাম, চর্বি ০.৯৩ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৩৫২ ক্যালরি থায়ামিন (ভিটামিন বি-১) ১০.২৫ মিলিগ্রাম, বিবোফ্ল্যাভিন (ভিটামিন বি-২) ০.২৩ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন (বি-৩) ৩২ মিলি গ্রাম, প্যান্টোথেনিক এসিড (বি-৫) ০.৪৩ মিলিগ্রাম বি- ৬ ০.১০৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৯.২২ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২২০ মিলিগ্রাম, আয়রণ ২.৭ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৮৬২ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৯ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৬৮ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৬৭ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক ০.৫৫ মিলিগ্রাম। তাছাড়া ডুমুরে মনোস্যাকারাইড ও অলিগোস্যাকারাইড থাকে। এতে আরো আছে ফিউরানো কোমারিন যেমন- সোনালিন, বারগাপটিন। ডুমুরে সাইট্রিক ম্যালিক এসিড সহ জৈব এসিড থাকে।

উপকারিতা ঃ পাকা ডুমুর বেশ রসালো এবং মিষ্টি স্বাদযুক্ত। কাঁচা ডুমুর তরকারি হিসেবে মাছ, মাংসের সাথে খাওয়া যায়। ডুমুর হজম কারক ও কোষ্ঠকাঠিন্য, সর্দি-কাশি, হাঁপানি ও জ্বর নিরাময়ে কাজ করে। ডুমুর দেহের রক্ত তৈরী করতে সাহায্য করে এবং কিডনির দূর্বলতা কমায়। যৌন শক্তি বাড়ায় এবং শুক্রাণু ও ডিম্বাণু পরিপুষ্ট করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে। ইনসুলিন তৈরীতে সাহায্য করে। ডুমুরের জুস নিয়মিত খেলে শরীর বলিষ্ট রাখে। নিয়মিত ডুমুর খেলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তাছাড়া ডুমুর আমাদের যেসব উপকার করে তা হলো ঃ

* উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ঃ ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে। এই পটাশিয়াম দেহের রক্তচাপের ভারসাম্য রক্ষা করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে প্রতিদিন ৫/৬ টি ডুমুর বা ডুমুরের সবজি খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

* ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ঃ দেহে ইনসুলিন তৈরী না হলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে এবং ইনসুলিন তৈরীতে ডুমুর ও ডুমুর গাছের পাতা বেশ উপকারি। তাই ডায়াবেটিস থাকলে প্রতিদিন ডুমুর ও গাছে পাতার রস খেলে উপকার পাবেন।

* হার্ট ভালো রাখে ঃ ডুমুর ও ডুমুর গাছের পাতার নানা উপাদান রক্তের ট্রাইগিসারাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। ডুমুরের ক্যালসিয়াম হৃদস্পন্দন, রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখতে সাহায্য করে। ফলে হার্ট সুস্থ থাকে।

* হাঁড় ও দাঁত রাগে ঃ ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস পাওয়া যায়। যা পাটাসিয়ামের সহযোগিতায় দেহের হাঁড় দাঁত গঠন সঠিক ও সুস্থ রাখে। অতিরিক্ত ডায়েট মেনে চললে ইউরিনের সাথে অনেক ক্যালসিয়াম বেরিয়ে যায়। ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণে ডুমুর ভ‚মিকা রাখে। হাঁড়ের ক্ষয় রোগ প্রতিরোধ করে।

* ওজন কমাতে ঃ ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে এই আঁশ দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। ডুমুরের পেকটিন উপাদান রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

* ক্যান্সার প্রতিরোধ ঃ ডুমুর মহিলাদের স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। মহিলাদের ৪০ বছর পরে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। এসময় স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে ডুমুর ভালো কাজ করে। ডুমুরের কষে প্রাপ্ত রাসায়নিক উপাদান এসইলবিটা ডি গ্লুকোসাইল, বিটা-সাইটোস্টেরল ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

সর্দি-কাশিতে ঃ ডুমুরের নানা উপাদান ঘনঘন সর্দি কাশি কমাতে সাহায্য করে। যাদের খুচ খুচ কাশি হয় তারা ডুমুর ভাজি করে খেলে বেশ উপকার পাবেন। তাছাড়া যারা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভুগছেন এবং পেটের সমস্যায় কষ্ট করেন। তারা নিয়মিত ডুমুর খান উপকার পাবেন। যেসব মহিলাদের মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তস্রাব হয় এবং শরীর দুর্বল হয়ে যায়, তারা নিয়মিত ডুমুরের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খান উপকার পাবেন। যেসব মায়েরা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান তারা নিয়মিত ডুমুর খান তাতে শিশু প্রচুর দুধ পাবে এবং বাচ্চা ও সুস্থ থাকবে। এ উপকারি গাছটি বাড়ির আশে পাশে লাগান ও যত্ন নিন।

মোঃ জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উচ্চ-রক্তচাপ
আরও পড়ুন