পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় জনপ্রতিনিধি না হলেও অনেকেই ‘চেয়ারম্যান’ বা ‘মেম্বার’ নামে পরিচিত। ‘চেয়ারম্যানের বাড়ি’ বা ‘মেম্বারের বাড়ি’ বললেই এক নামে সবাই দেখিয়ে দেয়। কিন্তু তারা কখনই নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারেননি, কখনো ছিলেন না জনপ্রতিনিধিও। শুধুমাত্র নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে অংশ নিয়েই এলাকায় চেয়ারম্যান-মেম্বার পরিচিতি পেয়েছেন। কিন্তু কেউ কেউ ভোট পেয়েছেন ১০টি বা ২০টি। অনেকের কপালে নিজের স্ত্রীর ভোটও জুটেনি। তবুও তারা ‘চেয়ারম্যান!’
নামের আগে বিভিন্ন ‘তকমা’ লাগানোর এই ঝোঁক রাজনৈতিক নেতাদের অনেক পুরনো। এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরও এমন ‘খায়েস’ বহু পুরনো হওয়ায় খোঁজ করলে দেশের প্রতিটি গ্রামেই ‘তথাকথিত চেয়ারম্যান-মেম্বার’ খুঁজে পাওয়া যায়! আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন থেকে রাষ্ট্্রীয় ক্ষমতায় থাকায় ক্ষমতাসীন দলটির হাজার হাজার নেতার মধ্যে ‘এমপিপ্রার্থী’ তকমা লাগানোর ঝোঁক বেড়ে গেছে। প্রভাব খাটিয়ে বৈধ-অবৈধ পথে অর্থ উপার্জন করেছেন। এখন টাকা খরচ করে দলের মনোনয়ন ফরম কিনেই নামের আগে ‘এমপি প্রার্থী’র তকমা জুড়ে দেন। ইদানিং আওয়ামী লীগের কিছু এমপি ও কিছু নেতার মধ্যে নামের আগে ‘মন্ত্রী তকমা’ লাগানোর ঝোঁক দেখা যাচ্ছে। বলা যায় ‘মন্ত্রীপ্রার্থী’ হয়ে মাঠে প্রচারণা চালানোর চেষ্টা একেবারেই নতুন কনসেপ্ট।
মন্ত্রী হবার আলোচনায় ছিলেন কিন্তু মন্ত্রী হতে পারেননি বিশেষ কারণে কিংবা শেষ মুহূর্তে হাত ছাড়া হয়ে গেছে এসব বলে নামের আগে ‘মন্ত্রীর তকমা’ লাগানোর খায়েস পূরণের বৃথা চেষ্টার অসম প্রতিযোগীতা চলছে। এজন্য অবশ্য নির্বাচনে অংশ নেবার প্রয়োজন নেই। দলদাস এবং অসৎ কিছু সাংবাদিকের হাতে ‘কিছু তুলে দিয়ে’ কয়েকটি গণমাধ্যমে ‘মন্ত্রী হবার দৌড়ে আলোচনায় রয়েছেন অমুক’ নিউজ হলেই খুশি তারা। যোগ্য প্রভাবশালী নেতাদের পাশে নিজের নাম লেখাতে পারলেই হলো, বাদ বাকি পরে দেখে নেবেন তারা। নিউজ প্রকাশের পর নিজেরাই লোকদিয়ে শত শত পত্রিকা ক্রয় করে মানুষের মাঝে বিতরণ করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে খবর ছড়িয়ে দেন। এই নিউজের ওপর ভর করে এলাকায় হাজির হবেন নামের আগে মন্ত্রীর তকমা নিয়ে। পূরণ হবে খায়েস। নিজ নিজ এলাকায় চলবেন বুক ফুলিয়ে। কোনো অনুষ্ঠানে বন্ধুরা তাকে স্বাগত জানাবেন ‘মন্ত্রী সাহেব আসছেন’ বলে; আহা! স্বর্গীয় সুখ।
মিডিয়ায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হওয়া নিয়ে প্রচার হচ্ছে নানা রাজনীতির খবর। কিছু অনলাইন পোর্টালে চলছে ‘ফেইক নিউজ’ প্রচারের প্রতিযোগিতা। আবার কাউকে মন্ত্রী সভা থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে, কাউকে পরিবর্তন বা স্থানান্তর করা হচ্ছে, কারো পদোন্নতি বা কারো অবনতি নিয়ে চলছে নানান প্রচারণা এবং নেতারা নিজেদের বানানো ‘ফেইক নিউজ’ নিজে থেকেই সাংবাদিকদের বলে বেড়াচ্ছেন মন্ত্রী হবার জন্য এবার ‘গ্রিন সিগনাল’ পেয়েছেন। যেন নিউজ করলে তার নাম দেয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়ে করা হচ্ছে বিভ্রান্ত। নাম সর্বস্ব অনলাইনে নিউজও হচ্ছে ‘অমুক মন্ত্রী হচ্ছেন; তমুক বাদ পড়ছেন’।
সম্প্রতি নামের আগে সংসদ সদস্য বা এমপিপ্রার্থী হিসেবে ট্যাগ লাগানোর ঝোঁক নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে রাজনীতিতে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে এই ঝোঁক প্রবল। দল দীর্ঘদিন থেকে ক্ষমতায় থাকায় নানাভাবে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। এখন দলে এবং এলাকায় মর্যাদা কিছুটা লাগে। উপনেতা, পাতিনেতা টাকা পয়সার মালিক হয়েছেন। এখন আরো মর্যাদা চাই!
যারা এমপি বা এমপি হবার মাপকাঠিতে গ্রহণযোগ্য তাদের চামচারও চামচা, ওয়ার্ডের মেম্বার পদে নির্বাচন করলেও ৫টির বেশি ভোট পাবে না তারাও সম্ভাব্য এমপিপ্রার্থী হিসেবে হাজির হচ্ছেন এলাকাবাসীর সামনে। ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার সাটিয়ে পুরো এলাকা ঢেকে ফেলেছেন। আওয়ামী লীগের এমপি মনোনয়ন ফরমও কিনছেন। সেই ফরমের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে, কয়েকজন অনুসারীদের দিয়ে তা শেয়ার দিয়ে ক্যাপশনে ‘অমুক ভাইকে এমপি হিসেবে দেখতে চাই’ লিখলেই যেন স্বর্গীয় সুখ। কিন্তু মেম্বার নির্বাচন করলেও তারা নিজের পরিবারের সব ভোট পাবার বিষয়ে নিশ্চিত না, বাইরের ভোটের হিসেব বাদ। তবে নির্বাচন করার কোনো ইচ্ছা বা যোগ্যতা কিছুই তাদের নেই। নির্বাচন কমিশন থেকে এমপি ফরমও সংগ্রহ করেন না তারা। তাদের বক্তব্য থাকে, ‘দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবো, তা না হলে করবো না। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’
কারা দলের মনোনয়ন ফরম কিনতে পারবেন, কি কি যোগ্যতা লাগবে বা কোন ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করে ফরম কিনতে হবে এ জাতীয় কোনো নীতিমালা বা নির্দেশনা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কোনো দলেরই নেই। ফলে বর্তমান এমপি থেকে শুরু করে ওয়ার্ডের মেম্বারও দলের এমপি মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেন মোটা টাকা খরচ করে। এতে দলের তহবিল ফুলেফেঁপে উঠে ঠিকই; কিন্তু দলে নিবেদিতপ্রাণ কর্মীর বদলে সুবিধাবাদীর সংখ্যা বেড়ে যায়।
ঢাকা-১৮ আসনে আওয়ামী লীগের এমপিপ্রার্থী হতে চান এসএম তোফাজ্জাল হোসেন। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি, স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি ছিলাম। এরপরও চিন্তুা করি এমপিপ্রার্থী হিসেবে কি আমি কাক্সিক্ষত যোগ্যতা অর্জন করেছি কি না। এখন দেখি দুধের বাচ্চারাও আমাদের সাথে এমপিপ্রার্থী। পাশের বাড়ির মানুষও যাকে চিনে না সেও এমপিপ্রার্থী। এসব দেখলে এমপিপ্রার্থী হিসেবে নিজেরই লজ্জা লাগে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ইনকিলাবকে বলেন, এমপি পদে দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রির জন্য কারা ফরম কিনতে পারবেন আর কারা কিনতে পারবেন না এ জাতীয় নীতিমালা তৈরীর প্রয়োজন পড়েছে। আগামীতে দলের কার্যনির্বাহি সংসদের সভায় এ নিয়ে আলোচনা করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।