Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চীনের সাথে বিরোধে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ভারতের ব্যবসায়ীরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:২৫ পিএম

করোনা মহামারির কারণে ভারতের অর্থনীতি এমনিতেই বেহাল, এর মধ্যেই সীমান্তে চীনের সাথে বিরোধের জেরে বিভিন্ন চীনা পণ্য ও প্রযুক্তি সেবার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এতে ভারতের নতুন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

চীন থেকে বেশ কিছু পণ্য ভারতে আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দুশ’রও বেশি চীনা সফটওয়ার অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এবং সেই সাথে চীনা বিনিয়োগের ওপর নানা বিধিনিষেধ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া, মহাসড়ক নির্মাণ এবং ছোট এবং মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চীনা বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি শুরু হয়েছে চীনা পণ্য বর্জনের প্রচারণা। আর এই সব বিধিনিষেধের বলি হচ্ছে ভারতের অনেকগুলো উঠতি প্রযুক্তি কোম্পানি যাদের ব্যবসা তরতর করে বাড়ছিল। ভারতে ৩০ টি নতুন ‘ইউনিকর্ন’ প্রযুক্তি কোম্পানির (যেগুলোর প্রতিটির বাজার মূল্য কমপক্ষে ১০০ কোটি ডলার) ১৮টিতেই চীন বিনিয়োগ করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়ার বেশ কটি অ্যাপ-ভিত্তিক কোম্পানি, অ্যাপ-ভিত্তিক ট্যাক্সি কোম্পানি, একটি হোটেল চেইন এবং একটি ই-লার্নিং অর্থাৎ অনলাইন-ভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব কোম্পানির ব্যবসার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আরো যেসব উঠতি কোম্পানি চীনা পুঁজির অপেক্ষায় ছিল, তারা এখন হতাশ।

এ বিষয়ে ট্রু-নর্থ নামে একটি বেসরকারি ইকুইটি প্রতিষ্ঠানের একজন অংশীদার হরেশ চাওলা বলেন,

‘কোনো সন্দেহ নেই পুঁজির বড় একটি সূত্র রাতারাতি উধাও হয়ে গেছে।’ তিনি আশঙ্কা করছেন, ভারতের উঠতি এসব কোম্পানির ব্যবসা এবং তাদের বাজার মূল্য পড়ে যাবে, কারণ বিশেষ করে মোবাইল এবং ভোগ্যপণ্য খাতে চীনারা খুবই তৎপর ছিল।

তবে ভারতে বিদেশী বিনিয়োগের ওপর কম-বেশি বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে জুন মাসেরও আগে। কোভিড-১৯ সংকটে পড়া কোনো ভারতীয় কোম্পানি যেন সহজে বিদেশী পুঁজির হস্তগত না হতে পারে তার জন্য এপ্রিল মাসে সরকার বিদেশী বিনিয়োগের ওপর নতুন অনেক শর্ত আরোপ করা হয়। ফলে, উঠতি যেসব ব্যবসা পুঁজির জন্য হাঁসফাঁস করছিল তাদের দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে।

এক দশক আগেও ভারতে চীনা পুঁজি ছিলনা বললেই চলে। কিন্তু চিত্র আমূল বদলে গেছে। ট্রাক্সন নামে যে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি ভারতে স্টার্ট-আপ বা উঠতি কোম্পানির ওপর গবেষণা করে তাদের সূত্রে পাওয়া পরিসংখ্যান বলছে, ৩৫টি চীনা কোম্পানি এবং চীনের ৮৫টি পুঁজি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের অনেকগুলো উঠতি ব্যবসায় ৪০০ কোটির ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে পেটিএম, স্ন্যাপডিল এবং সুইগির মত প্রযুক্তি কোম্পানি। ২০১০ সাল থেকে গত দশ বছরে ভারতে মোট বিদেশী বিনিয়োগে চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, আলিবাবা ভারতে তাদের বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ সব পরিকল্পনা স্থগিত করেছে। ‘তারা (আলিবাবা) ভারতের সিদ্ধান্তে বিস্মিত, কিন্তু তাদের করার তেমন কিছু নেই’, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলছিলেন ভারতীয় একটি স্টার্ট-আপ কোম্পানির মালিক যিনি আলিবাবার কাছ থেকে বিনিয়োগ পেয়েছেন। পেটিএম এবং স্ন্যাপডিলের মত স্টার্ট-আপ কোম্পানির সাথে বিবিসি যোগাযোগ করলেও বিষয়টির রাজনৈতিক স্পর্শকাতরতার বিবেচনায় তারা কেউই প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হয়নি।

অনেক ভারতীয় কোম্পানি অবশ্য মনে করছে চীনা বিনিয়োগ চিরতরে বন্ধ করে দেয়ার চিন্তা এখনও হয়ত সরকার করছে না। বরঞ্চ সরকার যেটা চাইছে তা হলো ভারতের প্রযুক্তি খাতে চীনারা যেন গেড়ে বসতে না পারে। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, ইতিমধ্যেই যে বিনিয়োগ চীন থেকে এসেছে সেগুলোর পিছনে না লেগে সরকার মূলত চাইছে যে হুয়াওয়ের মত চীনা টেলিকম জায়ান্ট যেন ভারতে ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে ঢুকতে না পারে।

চীনা বিনিয়োগের ওপর বিধিনিষেধের মাত্রা কতটুক হবে তা এখনও অস্বচ্ছ, তবে ধারণা করা হচ্ছে সরকারি বিশেষ অনুমোদন ছাড়া চীনা কোনো কোম্পানি ভারতের কোনো কোম্পানির ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিক হতে পারবে না। চীনা বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই মালিকানার মাত্রা হয়ত বড়জোর ২৫ শতাংশ করা হবে। বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে যারা মধ্যস্থতা করেন তারা বলছেন পশ্চিমা কোম্পানির চেয়ে চীনা কোম্পানিগুলো দ্রুত চুক্তি করে ফেলে। তার চেয়ে যেটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, চীনা বাজারে ব্যবসায় মোবাইল ফোনের যে বৈপ্লবিক ব্যবহার হচ্ছে, তা অনুসরণের জন্য মুখিয়ে ছিল ভারতীয় উঠতি কোম্পানিগুলো। কিন্তু হঠাৎ করে রাতারাতি চীনা প্রযুক্তি জায়ান্টদের কাছ থেকে যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হচ্ছে, তাতে ভারতীয় এসব কোম্পানি উদ্বিগ্ন।

তবে অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, কোভিড সংকট কেটে গেলে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি ভারতে আসবে, কারণ ইন্টারনেট ব্যবসার জন্য চীনের পর ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাজার। সে কারণেই, করোনাভাইরাস লক-ডাউনের মধ্যেই গুগল, ফেসবুকের মত সিলিকন ভ্যালি জায়ান্ট এবং এআইডিএ বা জেনারেল আটলান্টিকের মত আন্তর্জাতিক পুঁজি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ভারতে ২০০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ এসেছে।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এসব বিনিয়োগের সিংহভাগই গেছে বিলিওনেয়ার ব্যবসায়ী মুকেশ আম্বানির টেলিকম প্রতিষ্ঠান জিও-তে। অচেনা-অজানা বা নতুন কোম্পানি তার কোনো হিস্যা পায়নি। অনেকে তাই বলছেন, উঠতি কোম্পানিতে চীনা পুঁজি আটকে দিলে এসব উঠতি কোম্পানির জন্য ভারতের ভেতর থেকে বিকল্প পুঁজির ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ভারতে যেসব পুঁজি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আছে, তারা নিজেরাই বিদেশী পুঁজির ওপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল।

একটি বেসরকারি ইকুইটি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার গোপাল জৈন সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, তারা যে বিনিয়োগ করেন তার মাত্র পাঁচ শতাংশের মত যোগান আসে ভারতের ভেতর থেকে। তিনি বলেন, কোভিড পরবর্তী বিশ্ব পরিস্থিতিতে পুঁজির প্রাপ্যতা কঠিন হবে, ফলে দেশের ভেতর থেকে জোগান আসতে হবে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ। এবং তার ওপরই নির্ভর করবে, ভবিষ্যতে ভারতে চীনা বিনিয়োগ ছাড়াই আরো ৩০টি উঠতি নতুন কোম্পানি জন্ম নেবে কিনা। সূত্র: বিবিসি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ