Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুনিয়া কাঁপানো ৯/১১ আজ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৬ এএম

ইতিহাসের বিভীষিকাময় ৯/১১ আজ। ১৯ বছর আগে ২০০১ সালের এ দিনে আত্মঘাতী বিমান হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গর্ব নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার ধ্বংস করা হয়। হামলায় নিহত হয় প্রায় ৩ হাজার মানুষ। আল-কায়দা এ হামলা চালিয়েছে দাবি করে এরপর থেকে বিশ্বব্যাপি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। অন্যদিনের মতোই জেগে উঠেছিল নিউইয়র্ক সিটি। কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছিল বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণকেন্দ্র নিউইয়র্ক সিটি। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে ঘটে সেই ভয়াল ঘটনা। মুহূর্তেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ‘টুইন টাওয়ার’ হিসেবে পরিচিত বিশ্বের অন্যতম উঁচু দালানটিতে আঘাত হানে সন্ত্রাসীদের দখল করা দুটি যাত্রীবাহী বিমান। মুহ‚র্তের মধ্যেই নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঢেকে গেল নিকষ কালো ধোঁয়ায়। সবার চোখের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক গৌরবের প্রতীক ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক গৌরবের প্রতীক ওয়াশিংটনের পেন্টাগন ভবনেও হামলা চালায় আরেকটি বিমান। এ ছাড়া পেনসিলভানিয়ায় আরেকটি বিমান দিয়ে হামলার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এই হামলা চালাতে ১৯ জঙ্গি যুক্তরাষ্ট্রের যাত্রীবাহী চারটি বিমান হাইজ্যাক করে। তাদের সবাই নিহত হয়। এ ছাড়া টুইন টাওয়ার ও এর আশপাশে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে ৩৪৩ জন দমকল কর্মী ও ৬০ পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২ হাজার ৭৪৯ জন প্রাণ হারান। নিহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক ব্যক্তি, নারী ও শিশু। পেন্টাগনে আত্মঘাতী বিমান হামলায় তখন ১৮৪ জন নিহত হন। এছাড়া, উদ্ধারকাজ চালাতে গিয়ে যারা আহত, অসুস্থ এবং বিষক্রিয়ার শিকার হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৮৩৬ জন পরে মৃত্যুবরণ করেন।
এই একটি ঘটনা পাল্টে দেয় গোটা যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে এ হামলার জের টানতে হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে দেশটির ঋণের খাতায় যোগ হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। যুদ্ধ ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এসব অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। ওই হামলার পর থেকে কমপক্ষে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশ বেসামরিক নাগরিক। রোড আইল্যান্ডের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ‘কস্ট অব ওয়ার’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চালানো হামলায় নিহত হন ২ হাজার ৯৯৫ জন। ওই হামলায় ক্ষতি হয় ৫ থেকে ১০ হাজার কোটি ডলারের। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, নাইন-ইলেভেনের প্রভাব পড়েছিল সারা বিশ্বেও। এজন্য মাশুল গুনতে হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশকে। যুক্তরাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে ইরাক, আফগানিস্তানকে দিতে হয়েছে চড়া মূল্য।
অবশ্য, গত ১৭ বছরে ওয়ান-ইলেভেনের বড় বিপর্যয় থেকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞের ওপর আবার গৌরবের সঙ্গে দাঁড়িয়েছে ফ্রিডম টাওয়ার। বিশাল বাজেট হাতে নিয়ে এর নির্মাণ শুরু হয় ২০০৬ সালের ২৭ এপ্রিল। প্রায় ৩.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয় এই ভবনটি নির্মাণে। এবার নিরাপত্তার জন্য রয়েছে আরও অনেক আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যে কোনো বিমান এর দিকে ছুটে এলেই শক্তিশালী রাডারের নিখুঁত গণনায় সেটিকে ভ‚পাতিত করার অত্যাধুনিক ব্যবস্থা এতে রাখা হয়েছে।
৯ / ১১ হামলার ধারণা কীভাবে পেলেন ওসামা : যুক্তরাষ্ট্রে ৯ / ১১-এ আল-কায়েদার ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার কথা সবার জানা। এই হামলার ধারণা আল-কায়েদার তৎকালীন প্রধান ওসামা বিন লাদেন কীভাবে পেয়েছিলেন, তা নিয়ে সম্প্রতি একটি তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। আল-কায়েদার একটি প্রচারণার সাময়িকীতে দাবি করা হয়, ১৯৯৯ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে মিসরের একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা থেকে ৯ / ১১-এর হামলার ধারণা পেয়েছিলেন ওসামা। আল-মাসর নামের ওই সাময়িকীতে দাবি করা হয়, মিসরের কোÐপাইলট গামিল আল-বাতৌতির গল্পই ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার প্রেরণা ছিল। আটলান্টিক মহাসাগরে মিসরের যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল, তার কোÐপাইলট ছিলেন গামিল। লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে কায়রোগামী বিমানটি গামিল ইচ্ছাকৃতভাবে সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন বলে কথিত রয়েছে। ওই ঘটনায় বিমানের ২১৭ জন আরোহী নিহত হন। তাদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন ছিলেন মার্কিন নাগরিক। সন্ত্রাসবাদের গুজব সত্তে¡ও পরিবার ও বন্ধুদের দাবি, গামিলের কোনো দৃঢ় বিশ্বাস ছিল না। বিভিন্ন সূত্রের ভাষ্য, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাটি আত্মহত্যা বা চাকরি-সংক্রান্ত ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হতে পারে। মিসরের তদন্ত কর্মকর্তাদের ভাষ্য, যান্ত্রিক ত্রæটির কারণে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভাষ্য, কো-পাইলট ইচ্ছাকৃতভাবেই বিমানটি সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছেন। আরব উপদ্বীপের আল-কায়েদা আনসার আল-শরিয়ার ওই সাময়িকীর তথ্যমতে, মিসরের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর শুনে ওসামা জানতে চান, কো-পাইলট বিমানটিকে পার্শ্ববর্তী কোনো ভবনে কেন বিধ্বস্ত করেননি? আল-মাসর সাময়িকীর দাবি, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কারণটি জানার চেয়ে বরং বিপর্যয় ঘটানোর নতুন ভয়াবহ কৌশলের দিকে ওসামার আগ্রহ ছিল বেশি।



 

Show all comments
  • habib ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:১৩ এএম says : 0
    CIA and MUSAD was involved this incidents
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ