পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাইন ইলেভেনের ঘটনা আজো এক অপার বিস্ময়। ছিনতাই করা বিমান নিয়ে টুইন টাওয়ারে আছড়ে পড়া এবং অতিঅল্প সময়ের মধ্যে টুইন টাওয়ার সম্পূর্ণ ধসে পড়া এখনো এক বিরাট রহস্য। যুক্তরাষ্ট্র এই ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জন্য আল-কায়েদাকে দায়ী করেছে। এই হামলায় আল-কায়েদার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে মার্কিন সরকারের অনেক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। অনেকেই তা বিশ্বাসও করছেন। আবার কেউ কেউ রয়েছেন যারা এটা মেনে নিতে পারছেন না। তাদের মতে আমেরিকার তৎকালীন বুশ সরকার নিজেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের ভাষ্য হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী তার নতুন ভূ-রাজনৈতিক কৌশল বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই এই ঘটনা ঘটিয়ে দায় আল-কায়েদার উপর চাপিয়েছে। মার্কিন সরকারের ভাষ্যের সঙ্গে যারা ভিন্নমত পোষণ করেন তাদের অন্যতম ফিলিপ মার্শাল। মার্কিন সরকারের অনেক গোপন মিশনের সঙ্গে জড়িত বিমান চালনা বিশেষজ্ঞ ফিলিপ মার্শাল মনে করতেন আল-কায়েদা কিছুতেই এ ধরনের হামলা করতে পারে না। তার ধারণা, নাইন ইলেভেন নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত হয়েছে। তাঁর এই ভিন্নমত অনেকের মাঝে নতুন চিন্তার খোরাক যোগাচ্ছে। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের রহস্য কারো কারো মধ্যে নতুন ধারণার সৃষ্টি করছে। সেই ঘটনার পর ভিন্নমত পোষণকারী ফিলিপ মার্শালের নিজেরও রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে।
বিমানের সাবেক অভিজ্ঞ পাইলট ও নাইন ইলেভেন ষড়যন্ত্রের লেখক ফিলিপ মার্শাল এবং তার দুই সন্তানকে ক্যালিফোর্নিয়ায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এই লেখকের গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ২০০৩ সালের উপন্যাস ‘লেকফ্রন্ট এয়ারপোর্ট’, ‘ফলস ফ্ল্যাগ নাইন ইলেভেন : হাউ বুশ, চেনি এবং সাউদিস ক্রিয়েটেড দ্য পোস্ট নাইন ইলেভেন ওয়ার্ল্ড (০৮)’ এবং ২০১২ সালে প্রকাশিত ‘দ্য বিগ ব্যামবুজল : নাইন ইলেভেন এন্ড দ্য ওয়ার অন টেরর’। এই লেখায় মার্শাল বলেন, টুইন টাওয়ারে আল-কায়েদা হামলা চালায়নি। বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সউদী সরকার মিলিতভাবে নাইন ইলেভেনের ঘটনা ঘটিয়েছে। এই তত্ত্বের প্রবক্তা ফিলিপ মার্শালকে তার ক্যালিফোর্নিয়ার মার্ফিস এলাকার বাসভবনে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। সাথে তার দুই সন্তানের লাশও পাওয়া যায়। খবরে উল্লেখ করা হয়, তিনজনই বন্দুকের গুলিতে মারা যায়।
ক্যালাভেরাস কাউন্টির শেরিফের অফিস জানায়, দুই সন্তানসহ মার্শাল ও তাদের পারিবারিক কুকুরটিকে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করা হয়।
মার্শালের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হওয়া স্ত্রী ও এই দুই সন্তানের মা ঘটনার সময় বিদেশ ভ্রমইে ছিলেন।
গুলি করে হত্যা করার সম্ভাব্য মোটিভ জানা যায়নি তবে পুলিশের ধারণা, এটা আত্মহত্যার একটি ঘটনা।
ফিলিপ মার্শাল বিমানের একজন অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেন এবং সাবেক সরকারী বিশেষ কার্যক্রমে চুক্তিভিত্তিক পাইলট ছিলেন। তিনি যে গ্রুপে কাজ করতেন সেই গ্রুপটি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে। আমেরিকার অতি গোপনীয়তার উপর তিনি তিনটি বই লিখেছেন।
কলম্বিয়ার মাদক সম্রাট পাবলো এসকোবারের মাদক সাম্রাজ্য ধ্বংসে ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এডমিনিস্ট্রেশনের অভিযানের অংশ হিসেবে ১৯৮০ দশকে লার্জেন্ট ক্যাপ্টেন হিসেবে মার্শাল কাজ শুরু করেন। পরে রিগ্যান প্রশাসনের সময় নিকারাগুয়ার কন্ট্রা বিদ্রোহীদের অস্ত্র যোগানোর গোপন মিশনে কাজ করেন। তিনি ওয়াল স্ট্রিটের ফাটকাবাজি, রাজনীতিকদের পৃষ্ঠপোষকতা, মিডিয়া মোগল থেকে শুরু করে সরকারের ৩০ বছরের গোপনীয় বিশেষ তৎপরতার উপর গবেষণা করেন এবং এ সম্পর্কে লেখালেখি করেন। মার্শাল ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ার হামলার ঘটনা অনুসন্ধানে একজন নেতৃস্থানীয় বিমান চালনা বিশেষজ্ঞ হিসেবে অনুসন্ধান কাজ করেন এবং তিনি একজন চমৎকার গল্পকারও ছিলেন।
২০০৮ সালে ‘ফলস ফ্ল্যাগ নাইন ্ইলেভেন’ প্রকাশের পর তার দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘দ্য বিগ ব্যামবুজল ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়। এতে তিনি নাইন ইলেভেনের ছিনতাইকারীদের ফ্লাইট প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতির উপর আলোকপাত করেন। এরআগে ইরান-কন্ট্রা অপারেশনের সময় মার্কিন সরকারের চুক্তিভিত্তিক একজন পাইলট হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ২০০৩ সালে একটি উপন্যাস রচনা করেন। মার্শাল ১৯৮৫ সালে ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সে পাইলট হিসেবে তার ২০ বছরের পেশাগত জীবন শুরু করেন এবং পরে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সে যোগ দেন। তিনি বোয়িং ৭২৭, ৭৩৭, ৭৪৭, ৭৫৭ ও ৭৬৭-এর ক্যাপ্টেন ছিলেন। নিউ অর্লিন্সে জন্ম এবং পরে ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করছিলেন।
পুত্র অ্যালেক্স ফিলিপ (১৭) ও কন্যা ম্যাসাইলা ফিলিপের (১৪) লাশও তাদের বাসভবনে পাওয়া যায়। শেরিফের অফিসের লোকজন মার্শালের বাসভবনে গেলে তারা সেখানে তাদের লাশ দেখতে পায়। তাদের ধারণা এটা আত্মহত্যার ঘটনা। এই ঘটনা জানাজানির পর ছোট শহরটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে।
‘ওয়ার অন টেরর’ বইটি লেখার সময় তিনি মনে করতেন, তিনি যে অভিযোগ উত্থাপন করছেন তাতে তার জীবন বিপদের মুখে রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ছিনতাইকারীদের প্রশিক্ষণ প্রদানে বুশ প্রশাসন ও সউদী গোয়েন্দারা জড়িত ছিলেন। টুইন টাওয়ারে হামলায় ব্যবহৃত বিমানগুলোতে এসব ছিনতাইকারীও নিহত হয়।
টুইন টাওয়ার ধ্বংস চক্রান্তের উদ্ভব
১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ার হামলার পর থেকে দেড় দশক অতিক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু চক্রান্ত তত্ত্বগুলো এখনো মিলিয়ে যায়নি। বিবিসিতে বিশিষ্ট সাংবাদিক মাইক রুডিন একথা বলেছেন। সেই ঘটনার পর অনেক সরকারী রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এখনো বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েই গেছে যা মানুষের সন্দেহ জিইয়ে রেখেছে।
প্রথম প্রশ্নটি হচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রর বিমান বাহিনী ছিনতাইকৃত চারটি বিমানের একটিকেও কেন বাধা দিতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে চক্রান্ত তত্তটি হচ্ছে, তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি সামরিক বাহিনীকে কেবল দাঁড়িয়ে থাকতে এবং বিমানগুলোতে বাধা না দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
দ্বিতীয় প্রশ্নটি হচ্ছে কেন টুইন টাওয়ার এতো দ্রুত ধসে পড়েছিল। কয়েকটি ফ্লোরে আগুন লাগার পর ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে টুইন টাওয়ার পুরোপুরি ধসে পড়ার ঘটনা খুবই অস্বাভাবিক।
চক্রান্ত তত্তটি হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত গুঁড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে একে ধ্বংস করা হয়েছিল। বিভিন্ন খবরে বলা হয় ধসে পড়ার আগে বেশ কিছু বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায়। টুইন টাওয়ার ধ্বংস হওয়ায় সেখানে অবস্থানরত প্রায় সবারই করুণ মৃত্যু ঘটে।
তৃতীয় প্রশ্নটি হচ্ছে একজন এ্যামেচার পাইলট কিভাবে একটি বাণিজ্যিক বিমান নিয়ে বিনা বাধায়ই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক দফতরে গিয়ে আছড়ে পড়লো। প্রথম সম্ভাব্য ছিনতাইয়ের রিপোর্ট পাওয়ার পর মাত্র ৭৮ মিনিটের মধ্যে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনে এটি বিধ্বস্ত হয়। ছিনতাইয়ের রিপোর্ট পাওয়ার পর কেন বিমানটিকে ধাওয়া করা বা বাধা দেয়া হয়নি। এটি এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
চক্রান্ত তত্তটি হলো, কোন বাণিজ্যিক বিমান পেন্টাগনে আঘাত হানেনি। বরং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে বা ছোট বিমান বা পাইলটবিহীন ড্রোন বিমান এই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে। তবে যেহেতু প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৭৭ পেন্টগন ভবনে আঘাত হেনেছিল তাতে পেন্টাগনমুখী বিমান চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ পেন্টাগনের উপর দিয়ে কোন বিমান চলাচল করতে পারেনা। এ ক্ষেত্রে যুক্তি হচ্ছে সেই বিমানটি আল-কায়েদার নিয়ন্ত্রণে ছিল না বরং পেন্টাগনেরই নিয়ন্ত্রণে ছিল।
চতুর্থ প্রশ্নটি হচ্ছে পেনসিলভেনিয়ার শ্যাংকভিলে একটি ছিনতাইকৃত বিমানের বিধ্বস্ত হওয়া। বিধ্বস্তস্থলটি খুবই ছোট এবং সেখানে বিমানের কোন ধ্বংসাবশেষ কেন দৃশ্যমান হয়নি। চক্রান্ত তত্তটি হচ্ছে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটের বিমানটিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে আঘাত করা হলে মাঝ আকাশেই এটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং ধ্বংসাবশেষ বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
এসব প্রশ্ন এখনো অনেকের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। সে কারণে ফিলিপ মার্শাল টুইন টাওয়ার ধ্বংসে সরকারী ভাষ্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করতেন। এই রহস্য উদঘাটনে তিনি সচেষ্ট ছিলেন। লেখালেখির মাধ্যমে ভিন্নমত পোষণকারীর মৃত্যুর ঘটনাও অনেকের মনে এক বিরাট রহস্য। সূত্র : বিবিসি, ডেইলি মেইল, টপইনফো পোস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।