চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
আল-জামিয়া আল ইসলামিয়া
দেশের অন্যতম প্রধান কওমি মাদরাসা আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার জামিয়ার প্রধান পরিচালক ও আনজুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ (কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড)-এর সেক্রেটারি জেনারেল শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতী আবদুল হালীম বোখারী দেশে চলমান সন্ত্রাসী তৎপরতা, ঢাকার গুলশানে হোটেলে হামলা চালিয়ে নারী, অমুসলিম ও বিদেশি নাগরিকদের হত্যা এবং শোলাকিয়ার পবিত্র ঈদ জামায়াতে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে আল্লামা বোখারী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেছেন, এসব মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধের শামিল এবং নিকৃষ্ট সন্ত্রাসী তৎপরতা ছাড়া কিছুই নয়। শান্তিময় আদর্শ ইসলামকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে প্রচার ও প্রতিষ্ঠার সুবিধার্থেই ইসলামবিদ্বেষীরা তাদেরই লালিত একদল লোকের মাধ্যমে কুরআন-হাদীসের অপব্যাখ্যা করে চরমপন্থি দর্শন তরুণদের মধ্যে প্রবিষ্ট করাচ্ছে। আল্লামা বুখারী আরও বলেন, এসব সন্ত্রাসী তৎপরতার প্রতি ইসলামের কোনো সমর্থন নেই, নিরীহ শিশু-নারী-পুরুষ হত্যা, জ্বালাও পোড়াও, সম্পদ-পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং আত্মঘাতী হামলা ইসলামে বৈধ নয়।
জিহাদ ও সন্ত্রাসবাদকে গুলিয়ে ইসলামের বদনাম করা হচ্ছে অভিযোগ করে আল্লামা বোখারী আরও বলেন, জিহাদ আর সন্ত্রাসবাদ এক জিনিস নয়। জিহাদ ইসলামের একটি পবিত্র বিধান, ইসলামি রাষ্ট্রের যুদ্ধব্যবস্থাই হচ্ছে জিহাদ। ইসলামের জিহাদের বিধানও অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ এবং দুনিয়ার যে কোনো যুদ্ধনীতির তুলনায় ইসলামের জিহাদের বিধান অত্যন্ত মাবতাবাদী ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হিসেবেও শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার।
এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.)-এর একটি হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, মহানবী (সা.) জিহাদে গমনের প্রাক্কালে যোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে, রাসূল (সা.)-এর আদর্শ ধারণ করে যাত্রা করো, বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিকে হত্যা করো না, ছোট শিশুকে হত্যা করো না, বেগনো মহিলাকে হত্যা করো না, মানুষকে শিকলাবদ্ধ করো না, গাদ্দারি করো না, লাশ বিকৃত করো না, সদ্ব্যবহার করো, আল্লাহ সদয় আচরণকারীদের পছন্দ করেন, অন্ধদেরকে হত্যা করো না, ঘরবাড়ি ধ্বংস করো না, উপসনালয়ের কোনো মানুষকে হত্যা করো না, গাছপালা কেটে ফেলবে না, কয়েদিদের সঙ্গে সদয় হও।’
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রহ.) আরো উপদেশ দিয়ে বলেন, ‘খেজুর গাছ কাটবে না, জ্বালাবে না এবং ফলবতী গাছও কাটবে না, ছাগল, গরু ও উট বধ করবে না, খাবার প্রয়োজন ছাড়া।’ জিহাদের এই আদর্শিক ও মানবতাবাদী রূপকে বিকৃত এবং আড়াল করে তাকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে চিত্রিত করার মাধ্যমে ইসলামের বদনাম করানোই বর্তমান জঙ্গিবাদী অপতৎপরতার উদ্দেশ্য বলে মন্তব্য করেন আল্লামা বোখারী।
ইসলামের নামে চরমপন্থা, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধে ইসলামের সঠিক ও যথার্থ জ্ঞানের প্রসার ঘটানোর তাগিদ দিয়ে আল্লামা বোখারী বলেন, দেশের কওমি মাদরাসাগুলোয় ইসলামের বিশুদ্ধ জ্ঞানের চর্চা হয়। আজ একটা বিষয় প্রমাণিত হয়েছে যে, মাদরাসা শিক্ষায় কোনো জঙ্গি-সন্ত্রাসীর স্থান নেই। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে দেশের জাতীয় শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইসলাম বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞানের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। বছরে বছরে ইসলামিয়াতের বিষয়গুলো সংকোচন করা হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষাক্রমে ধর্মীয় বিষয়ে যথাযথ জ্ঞানের অভাব এবং এই শূন্যতার সুযোগে একদল লোক কুরআন-হাদীসের অপব্যাখ্যা করে খ-িত, বিকৃতি এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য তরুণ সমাজের মধ্যে প্রসার ঘটিয়ে তাদের মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে তাদেরকে জঙ্গিবাদের প্রতি নিয়ে চলছে। এ অবস্থায় জাতীয় শিক্ষাক্রমের সর্বস্তরে ধর্মীয় বিষয়ে যথাযথ বিষয়াদি বাধ্যতামূলক করার জন্য সরকারের প্রতি আমরা উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।