জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণ দেখিয়ে পদত্যাগের এ ঘোষণা দিলেন। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাবে এ ঘোষণা দেন।

গতকাল জাপান সময় সকাল থেকেই খবর ছড়িয়ে পড়ে যে প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে যে কোনো সময় পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন। আর সকাল থেকেই সবাই টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখেন।
দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে বলেন, আমি চাই না দায়িত্বে থাকা অবস্থায় কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আমার শারীরিক সমস্যা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াক। নিজের মেয়াদ পূর্ণ করতে না পারার জন্য তিনি জনগণের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন।

টেলিভিশন ভাষণে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে শিনজো অ্যাবে বলেন, ‘রাজনীতিতে দুর্বল শারীরিক অবস্থার প্রভাব পড়া উচিত নয়। যখন আমি জাপানের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছি না, তখন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমি আর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারি না। আর তাই আমি পদত্যাগ করবো।’
২০১২ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বছরে জাপানের ইতিহাসে দীর্ঘ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকার রেকর্ড গড়েন শিনজো অ্যাবে। এর আগেও ২০০৭ সালে স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে আচমকা তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন।
শিনজো অ্যাবে শিশুকাল থেকেই স্বাস্থ্যগত একটি জটিল সমস্যায় ভুগছেন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে তিনি গত ১৭ আগস্ট সকালে রাজধানী টোকিওর একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে সরকারিভাবে একে প্রধানমন্ত্রীর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। আর হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই জাপানের রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে তার পদত্যাগের গুঞ্জন শুরু হয়।

সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও ৬৫ বছর বয়সী শিনজো অ্যাবের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। দেশটির সরকারি প্রচারমাধ্যম এনএইচকের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে সরকার পরিচালনায় যেন সমস্যা তৈরি না হয় তাই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।
শিনজো অ্যাবে রক্ষণশীল ও জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া কঠোর অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি আনায়নের কারণে তার গৃহীত নীতিগুলো ‘আবেনোমিক্স’ নামেও পরিচিত। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে উল্লেখযোগ্য ভাবে শক্ত অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছেন। তার শাসনামলে প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দও তুলনামূলক ভাবে বেড়েছে।

যদিও দেশের সংবিধানের ৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, দেশের আত্মরক্ষা ছাড়া সেনার অন্য ব্যবহারের নিয়মে পরিবর্তন আনতে পারেননি শিনজো। জাপানের প্রতিরক্ষা খাতকে শক্তিশালী এবং সামরিক বাহিনীর জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির কারণে তার সুনাম রয়েছে।

পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে? : শিনজো অ্যাবে জ্বর নিয়ে দু’দফা হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর তিনি পদত্যাগ করতে পারেন খবরে টোকিওতে হইচই পড়ে গিয়েছে। পাশাপাশি জোর জল্পনা শুরু হয়েছে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হতে পারেন তা নিয়েও। আলোচনায় উঠে এসেছে দেশের অর্থমন্ত্রী অ্যাসো’র নাম। ৭৯ বছরের রাজনীতিবিদ অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন। সূত্র : বিবিসি নিউজ/রয়টার্স/ টাইমস অব ইন্ডিয়া।