মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন কট্টর হিন্দুত্ববাদি বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ। মুসলমানদের বিরুদ্ধে সেখানে সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকাটি যোগী রাজ্য নামেই পরিচিত। এবার সেই রাজ্যে অবস্থিত কিংবদন্তী শিল্পী ও ভারত রত্ন উপাধিতে ভূষিত ওস্তাদ বিসমিল্লা খানের বাড়িটি ভেঙে ফেলা হলো। এই ঘটনায় আবার যোগী সরকারকে নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
২০০৬ সালে ওস্তাদ বিসমিল্লা খান মারা যাওয়ার পর তার শিষ্য ও ভক্তরা ওই বাড়িটিকে একটি মিউজিয়াম করার আবেদন জানিয়েছিলেন। ওস্তাদের স্মরণে একটি সংগ্রহশালা তৈরি করা হোক, তাতে প্রদর্শিত হোক বিসমিল্লার বিভিন্ন স্মারক- এই ছিল দাবি। সানাইয়ের মতো একটি ‘সাধারণ’ যন্ত্রকে মার্গসঙ্গীতের স্তরে উন্নীত করে পূর্ণ অবয়ব দেয়ায় উস্তাদ বিসমিল্লার অবদান সর্বজনস্বীকৃত। হাদহা সরাইয়ের ওই বাড়িটি ছিল তার অত্যন্ত প্রিয় জায়গা। ওই বাড়ির দোতলায় তিনি প্রতিদিন রেওয়াজ করতেন। ওই বাড়ি কখনও ছাড়তেও পারেননি তিনি। আমেরিকায় বসবাসের জন্য জায়গা ও বাড়ি দেয়ার প্রস্তাব এলেও তিনি তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এই বাড়িতেই তিনি শান্তির খোঁজ পেতেন। তার স্মৃতিতেই বাড়িটি হেরিটেজের তকমা দেওয়ার দাবিও করা হয়েছিল। কিন্তু এতদিনে কেউই এ বিষেয় এগিয়ে আসেননি। না রাজ্য সরকার, না কেন্দ্রীয় সরকার।
অভিযোগ, ওস্তাদজির রেওয়াজের ঘরটি বর্তমানে ধ্বংসস্তপূপে পরিণত হয়েছে। দোতলা বাড়ির ওপরের অংশটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির সদস্যদের কথায়, ওই বাড়িটি ভেঙে একটি বিশাল কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স তৈরি হবে। খান সাহেবের পালিতা কন্যা ও সঙ্গীতশিল্পী সোমা ঘোষ এই ঘটনার পর বিরক্তি প্রকাশ করে জানিয়েছেন, বাবার (বিসমিল্লাকে তিনি বাবা বলেই ডাকেন) ঘর ভেঙে দেয়া হয়েছে, এটা শোনার পরই আমি ভেঙে পড়েছি। খুব অবাক হয়েছি। ভেঙে ফেলার পর তার মহামূল্যবান জিনিসপত্রগুলোও ফেলে দেয়া হয়েছে। ওই ঘরটি শুধুমাত্র একটি ঘর ছিল না। সঙ্গীত অনুরাগীদের জন্য উপাসনার একটি পবিত্র স্থান ছিল। এটি ভারতের একটি ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে। তার সব জিনিসপত্র সংরক্ষিত করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবেদন করব।
১৯৬৩ সালে হাদহা সরাইয়ের ভিক্ষমশাহ লেনের ধারে এই বাড়িটি কেনেন। দোতলা বাড়ির উপরের একটি ঘরে, তিনি থাকতেন। রোজ ওই ঘরে রেওয়াজ করতেন তিনি। গত ১২ আগস্ট ওই ঘরটি প্রথম ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, ওই বাড়িটির মালিক ওস্তাদজির পাঁচ ছেলের এক ছেলে মেহতাব হুসেনের ছেলে। ওস্তাদজির আত্মীয়রা অবশ্য এই ঘটনা অস্বীকার করে জানিয়েছেন, স্থানীয় এক দোকান তৈরির জন্য বাড়িটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় মার্গসংগীতের অলংকার বিসমিল্লা খানের ছোট ছেলে নাজিম হুসেনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, এই বাড়ি ভাঙার ব্যাপারে তিনি আদৌও কিছু জানেন না। যদি তেমন কিছু হয়, তাহলে সে ব্যাপারটি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি এখন ওই বাড়িতে নেই। আগামী ২৪ আগস্টের পর বাড়ি ফিরে তারপর ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ভারত যেদিন স্বাধীনতার স্বাদ পেল, সেই দিন স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর আমন্ত্রণে রেড ফোর্টে সানাই বাজিয়েছিলেন খান সাহেব। তিনি বারবার বুঝিয়েছেন, যেমন সুরের কোনও ধর্ম হয় না, তেমনি শিল্পীরও কোনও ধর্ম হয় না। এমন ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন খান সাহেব। কিন্তু সেই মূল্যবান সম্পদের মর্ম বুঝতে পারলেন না তার নাতি-নাতনিদের মতো নতুন প্রজন্ম। স্বাধীনতা দিবসের দিন যে সানাই বাজিয়েছিলেন, সেই সানাইও নাকি বাড়ি ভেঙে ফেলার সময় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মৃত্যুর পর ভারত ও বিদেশে ছড়িয়ে থাকা শিষ্য ও ভক্তরা খান সাহেবকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানালেও, বাড়ির অন্দরেই তার মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের কোনও কদর ছিল না।
২০১৭ সালে, ওস্তাদের প্রিয় সানাই বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশের জালে ধরা পড়েছিল শিল্পীর নাতি নাজির হাসান। অভিযোগ, মাত্র ১৭ হাজার টাকার নিবিময়ে সে ওই রুপা দিয়ে বাঁধানো সানাই বিক্রি করে দিয়েছিল দুটি গয়নার দোকানে। প্রতিটি সানাইয়ের রূপা বাঁধানো অংশ গায়েব ছিল। গুণধর নাতি সেই রূপা গলিয়ে ফেলেছিল। পরে সেই রূপা উদ্ধার করেছিল পুলিশ। সূত্র: টিওআই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।