Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও দুর্নীতি বন্ধে সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে-আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমী

সন্ত্রাসী নাস্তিকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দুর্গ গড়ে তুলতে হবে -জুনাইদ বাবুনগরী

প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৬ পিএম, ৫ আগস্ট, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : কোনো সন্ত্রাসী জঙ্গি ঘটনার সাথে আলেম-উলামা তথা মাদরাসা পড়–য়া কোনো শিক্ষিত মানুষ জড়িত নয়, তার বাস্তবতা হচ্ছে গুলশানের মর্মান্তিক হত্যাকা-। কোনো ধরনের সন্ত্রাস-নাশকতা, জোর-জুলুম, মানবিক ও নাগরিক অধিকার হরণ ইসলাম সমর্থন করে না। আজ থেকে পনের শত বছর আগে আইয়্যামে জাহিলিয়্যাত তথা সন্ত্রাসী ও বর্বর যুগে রাহমাতুল্লিল আলামীন (স.) ইসলামের শান্তির বাণীর মাধ্যমে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, মানুষ হত্যা এমনকি সন্তান হত্যার মত বর্বরতাও বন্ধ করেছিলেন। সুতরাং সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মানুষের প্রতি জোর-জুলুম দেশের কিছু সংখ্যক মানুষের নেচারে পরিণত হয়ে যাওয়ার অবস্থা থেকে উত্তোরণের একটিই পথ, স্কুল কলেজ, ইউনিভার্সিটিসহ শিক্ষার সর্বস্তরে দ্বীনী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। নাস্তিক্যবাদী ও ব্রাহ্মণ্যবাদী চিন্তা চেতনায় লালিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে শিক্ষানীতি ২০১০ ও খসড়া শিক্ষা আইন ২০১৬ ও ইসলামী শিক্ষা বিবর্জিত পাঠ্যপুস্তক স্কুল কলেজের সিলেবাস থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। দেশী-বিদেশী নিরীহ নাগরিকদের নির্মমভাবে হত্যা, সন্ত্রাস-নাশকতা দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত তাদের নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তথ্য উদঘাটন করে জাতির সামনে প্রকাশ করবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে এই অরাজকতাকে বন্ধ করতে হবে। গতকাল বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী ঘোষিত হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানুষ হত্যার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত মিছিল পূর্ব বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সকল শ্রেণীর মানুষের প্রতি ইনসাফভিত্তিক ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চলমান সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য বন্ধ করা যেতে পারে। সমাবেশ শেষে একটি বিরাট মিছিল বের করে পল্টন, দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে আবার উত্তর গেটে এসে শেষ হয়। এ সময় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন ছিল।
হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর যুগ্ম সদস্য সচিব মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমীর পরিচালনায় মিছিল পূর্ব সমাবেশে যারা উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা আবুল কালাম, মাওলানা অধ্যাপক আব্দুল করীম, ড. আহমদ আব্দুল কাদের, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, শেখ গোলাম আছগর, মুফতি এ.বি.এম. শরীফুল্লাহ, মুফতি ফখরুল ইসলাম, মাওলানা ফয়সাল আহমদ, মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা শওকত আমীন, মুফতি আল আমীন, মুফতি নাসীরুদ্দীন খান, মাওলানা হাবীবুল্লাহ ইসলামপুরী, মাওলানা যয়নুল আবেদীন, মাওলানা আরিফুর রহমান ও মাওলানা মামুনুর রশীদ প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জীবনভর সোচ্চার হেফাজতে ইসলাম তথা সর্বস্তরের কওমী আলেমদের নাম এখন সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে উচ্চারণ করছে একশ্রেণীর নাস্তিক্যবাদী। এ প্রবণতা রুখতে হবে। ব্রাহ্মণ্যবাদী ও ইহুদীবাদীদের চক্ররা আমাদের দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অশান্ত করার জন্য, দেশে ইসলামী সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে বিজাতীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দিয়ে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উৎরাতে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম তৈরি করতে হবে।
সন্ত্রাসী নাস্তিকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দুর্গ গড়ে তুলতে হবে -জুনাইদ বাবুনগরী
চট্টগ্রাম ব্যুরো : হেফাজতে ইসলামীর মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ ও নাস্তিক্যবাদ কোনটাই মুসলমানরা সহ্য করে না। আমরা সন্ত্রাসবাদকে যেমন ঘৃণা করি, প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছি, একইভাবে ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদীদের প্রতিহত করার সংগ্রামে নেমেছি। প্রয়োজনে আলেম-ওলামা ও তাওহিদী জনতা সকল সন্ত্রাসী ও নাস্তিকদের বিরুদ্ধে পাড়ায় মহল্লায় প্রতিরোধের দুর্গ গড়ে তুলবে। তিনি বলেন, অস্ত্র দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা যেমন সন্ত্রাস, তেমনিভাবে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে ক্রসফায়ার করে মারা ডাবল সন্ত্রাস।
হেফাজতে ইসলামের উদ্যোগে আমিরে হেফাজত আল্লামা শাহ আহমদ শফী’র আহ্বানে গতকাল বাদজুমা চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের উত্তর গেট চত্বরে আয়োজিত বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। গুলশান, শোলাকিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে নৃশংস হত্যাকা-, সন্ত্রাস, গুপ্তহত্যা এবং ইফা কর্তৃক জুমার খুতবায় অবৈধ হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবীতে এই সমাবেশ শেষে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করে হেফাজত।
তিনি বলেন, ইসলাম ধর্মে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের কোনো স্থান নেই। সার্বজনীন মানবতার ধর্ম হলো ইসলাম। বাংলাদেশে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৈরী করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে অংশ। ওলামায়ে কেরাম হত্যা, নাশকতা ও উগ্রসন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে অতীতেও ভূমিকা রেখেছে, এখনো রাখছে এবং ভবিষ্যতেও রাখবে। ইমাম-খতিবরা সবসময় মসজিদের মিম্বর থেকে সত্য, ন্যায়, নৈতিকতা, শান্তির বাণী প্রচার করে। মসজিদ আল্লাহর ঘর, কুরআন হাদীস মতে খুতবা দেয়া হয়। সুতরাং খুতবা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেন না। সারা দেশে আগুনের দাবানল জ্বলে উঠবে।
আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী দেশে যে হারে রাজনৈতিক জিঘাংসা, বোমাবাজি, খুন, গুম, অপহরণ, সন্ত্রাসী কর্মকা-, দুর্নীতি এবং টার্গেট কিলিং হচ্ছে, তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্যে ক্ষমতাসীনদের হুমকি-ধমকি ও বন্দুকের ভয় দেখানো বন্ধ করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে ন্যায়-ইনসাফ এবং নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ ও রাজনৈতিক কাদাছোঁড়াছুড়ি বন্ধ করতে হবে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে সন্ত্রাসবাদ উৎখাত করার জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সন্তানদেরকে ধর্মীয় শিক্ষা দিন। তারা যাতে সঠিকভাবে ধর্মীয় শিক্ষা পায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কেননা সব ধর্মই শান্তির কথা বলে’। তার এই বক্তব্যকে স্বাগত জানাই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ২০১০ সালের ধর্মহীন শিক্ষানীতি বহাল রেখে কীভাবে সন্তানদেরকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করা হবে ? সত্য হলো, সরকারের মন্ত্রী এমপি ও কর্তাব্যক্তিদের কথা ও কাজে কোনই মিল পাওয়া যায় না। মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা সরোয়ার কামাল আজিজী, মাওলানা আবু তাহের আরবী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ আজাদী, মাওলানা হাজী মুজাম্মেল হক, মাওলানা মীর ইদরিস, মাওলানা আবদুল্লাহ আল মাসউদ খান, হাফেজ ফয়সাল, মাওলানা জয়নাল আবেদীন কুতুবী, ইঞ্জিনিয়ার শামসুল হক, মাওলানা আমিন শরীফ, মাওলানা আনোয়ার হোসেন রব্বানী, মাওলানা কুতুবুদ্দিন প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন নগর প্রচার সম্পাদক মাওলানা আনম আহমদুল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী বলেন, আল্লাহর গজব থেকে রক্ষা পেতে চাইলে উলামা-মাশায়েখ, দাড়ি-টুপি-হিজাব বিরোধী অপতৎপরতা বন্ধ করুন। ধর্মহীন শিক্ষানীতি, পাঠ্যবইয়ে নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদের শিক্ষাদান এবং জুমার খুতবায় হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবেনা। সমাবেশ শেষে এক বিরাট বিক্ষোভ মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জামালখান প্রেসক্লাব চত্বরে গিয়ে মুনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়।



 

Show all comments
  • Sipon ৬ আগস্ট, ২০১৬, ১:৫৭ পিএম says : 0
    সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মানুষের প্রতি জোর-জুলুম দেশের কিছু সংখ্যক মানুষের নেচারে পরিণত হয়ে যাওয়ার অবস্থা থেকে উত্তোরণের একটিই পথ, স্কুল কলেজ, ইউনিভার্সিটিসহ শিক্ষার সর্বস্তরে দ্বীনী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সন্ত্রাস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ