Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কৃষি খাতকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০২০, ১২:০২ এএম

বাংলাদেশকে বলা হয়, ‘ল্যান্ড অফ ফার্টাইল’ বা উর্বর মাটির দেশ। এ দেশের মাটি এতটাই উর্বর যে, যেখানে সেখানে অনাদরে-অবহেলায় একটি বীজ ফেলে রাখলেও তা বৃক্ষে পরিণত হয়। এমন উর্বর মাটি বিশ্বের খুব কম দেশেই রয়েছে। মাটিকে উর্বর করতে ধনী দেশগুলো কতই না প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলেছে। মরুভূমির দেশ সউদী আরব কৃষিজমি সৃষ্টি করার জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে খাল কেটে পানি এনে জমি সৃষ্টি করছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশও সেচ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাষ উপযোগী জমি তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, প্রকৃতিই আমাদের দেশকে এক উর্বর ভূমিতে পরিণত করেছে। প্রকৃতির এ এক অপার দান। যেখানে চাইলেই অফুরন্ত ফুল, ফল, ফসল উৎপাদন করা যায়। আমাদের দেশের মাটি কতটা উর্বর, তা এক জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন থেকে বোঝা যায়। যেমন আমাদের রয়েছে, এক ফসলি, দুই ফসলি, তিন ফসলি এমনকি চার ফসলি জমি। সব মিলিয়ে ১৫৪.৩৮ লাখ হেক্টর ফসলি জমি (তথ্য: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) রয়েছে। অন্য যে কোনো দেশ এবং জনসংখ্যার তুলনায় এ পরিমাণ জমি খুব বেশি নয়। তারপরও এই জমি চাষ করে আমাদের কৃষক ফসল ফলিয়ে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অনেকে ভাগ্যবান বলা যায়। কারণ, আমাদের রয়েছে, কঠোর পরিশ্রমী, সৃজনশীল ও শক্তিশালী এক কৃষকসমাজ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই কৃষকরা নিরলস শ্রমের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে দেশকে খাদ্যে সমৃদ্ধ করেছে। শুধু খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, তারা বৈচিত্র্যপূর্ণ কৃষিপণ্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে কৃষিকে এগিয়ে নিচ্ছে। অধিক উৎপাদনশীল ধান থেকে শুরু করে শাক-সবজি, ফল-ফলাদির বিস্তার ঘটিয়েছে। এর ফলে সিজনাল ফসল এখন বারমাস আমরা ভোগ করতে পারছি। মৎস্য ও গবাদি পশুর ক্ষেত্রকেও উদ্যোক্তারা স্বাবলম্বী করে তুলেছে। সীমিত সরকারি সুবিধার মধ্যে কৃষক ও খামারিরা যে এসব করছে, তাতে তাদের দক্ষতা এবং সৃজনশীলতাই ফুটে উঠেছে। তবে, যে কৃষক অবিরত খাদ্য উৎপাদন করে চলেছে, সেই কৃষককে উৎপাদিত ফসল নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, কার্যকর সরবরাহ ব্যবস্থা না থাকা এবং জমির ফসল ঘরে তুলতে গিয়ে শ্রমিকের অভাবের মতো নানা সমস্যায় তাদের পড়তে হচ্ছে। এ চিত্র এখন নিত্যকার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দুই.
আমাদের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। অর্থনীতির সিংহভাগই এ খাতের ওপর নির্ভরশীল। এর পরের অবস্থান, কলকারখানা ও বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য। এর মধ্যে গার্মেন্ট ও শ্রমশক্তি রফতানিই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মূল খাত। এছাড়া ওষুধ, চামড়া, চা, চিংড়িসহ অন্যান্য যেসব খাত রয়েছে, সেগুলোর রফতানির পরিমাণ খুবই কম। করোনার কারণে এখন এসব পণ্য রফতানির হারও কমে গেছে। গার্মেন্ট খাতে অর্ডার নিম্নমুখী। শত শত গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়েছে এবং বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে এবং হচ্ছে। ঈদের পর আরও অনেক কারখানা বন্ধ এবং শ্রমিক বেকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বড় বড় যেসব কারখানা রয়েছে, সেগুলো কোনো রকমে টিকে আছে। এসব কারখানার সাথে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ হিসেবে যেসব কারখানা গড়ে উঠেছিল, সেগুলোর অধিকাংশ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে এবং ভবিষ্যতে আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জনশক্তি খাতটি এখন আরও বেশি নাজুক। মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে কর্মহারা হয়ে লাখ লাখ শ্রমিক দেশে ফিরছে। তারা আবার ফিরে যেতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নিজেদের শ্রমিক দিয়ে কাজ চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়ায় এ শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশগুলো থেকে ৩০ ভাগ বিদেশী শ্রমিক কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের লাখ লাখ শ্রমিককে দেশে ফিরতে হবে এবং হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকরা এ খাত নিয়ে আশার আলোও দেখাচ্ছেন। তারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের যেসব দেশ জনশক্তি আমদানিনির্ভর, তারা আমদানি করা জনশক্তি কমাতে পারবে না। কারণ, দেশগুলোর জনগণের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো, বিভিন্ন কাজে এবং তাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য সবসময় আমদানি করা জনশক্তির ওপর নির্ভরশীল থাকা। তাদের অনেক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ধরণ এমন যে, এগুলো তাদের আভ্যন্তরীণ জনশক্তি দ্বারা পূরণ করা সম্ভব নয়। তাদের আমদানি করা জনশক্তির ওপরই নির্ভর করতে হয় এবং হবে। যদি তা করা না হয়, তবে তাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বহুলাংশে স্থবির হয়ে পড়বে। এখন সাময়িকভাবে বিদেশী শ্রমিক কমালেও অদূর ভবিষ্যতে তাদের শ্রমিক আমদানি করতেই হবে। এ আশা বাস্তবভিত্তিক হলেও, আপাতত যেসব শ্রমিক দেশগুলো থেকে ফিরবে, তাদের কর্মসংস্থানই এখন সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় দেশগুলোর পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাদের ভরণ-পোষণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলে শ্রমশক্তি রফতানির বাজার ধরে রাখা সম্ভব হতে পারে। কারণ, প্রত্যেকটি দেশ এখন আপৎকালীন সময়ের মধ্যেই অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করেছে। তাদের এই কর্মকান্ড গতি পেতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে এবং তা করতে তাদের শ্রমিকের প্রয়োজন পড়বে। সে পর্যন্ত ফেরত আসা শ্রমিকদের যদি সরকার সুরক্ষা দেয়া যায়, তবে ঝিমিয়ে পড়া শ্রমবাজার আবার চাঙা হয়ে উঠবে। যে পোশাক খাত চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন, সে পোশাক খাত যে একেবারে হারিয়ে যাবে, এমনটি মনে করারও কারণ নেই। যেসব দেশ পোশাক আমদানি করে, তারা অর্ডার কমিয়ে নিজ দেশের কোম্পানি থেকে কাপড় নিলেও, চড়া দামের কারণে আল্টিমেটলি আমাদের দেশের মতো সাশ্রয়ী মূল্যে পোশাক কেনার প্রতিই তারা ঝুঁকবে। এতে কয়েক মাস সময় লাগলেও ধৈর্য্য ধরে থাকলে এর সুফল পাওয়া যাবে। এ ব্যাপারে আপৎকালীন সময়ে গার্মেন্ট কারখানাগুলো কীভাবে টিকিয়ে রাখা যায়, তা নিয়ে কারখানার মালিকদের সাথে যদি সরকার আলোচনা করে, তবে সুফল পাওয়া যেতে পারে। সরকার ইতোমধ্যে গার্মেন্টখাতে যে প্রণোদনা দিয়েছে, দেখা যাচ্ছে, তা খুব একটা কাজে আসছে না। কারখানা বন্ধ এবং শ্রমিক ছাঁটাই চলছেই। খাতটি সচল রাখতে সরকারের আরও বাস্তবমুখী এবং কার্যকর উদ্যোগ নেয়া দরকার। কারখানার মালিকদেরও উচিৎ হবে, দুর্যোগের এ সময়ে অধিক লাভের আশায় বা আগের লাভ টিকিয়ে রাখতে শ্রমিক ছাঁটাই করা থেকে বিরত থাকা এবং ধৈর্য ধরা। এতে যে তারা না খেয়ে মরে যাবেন, এমন নয়। কারণ, রাজার ভান্ডার শেষ হতেও অনেক সময় লাগে। সে পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে পারলে পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।

তিন.
আমাদের অর্থনীতি এবং জীবনযাপন সচল রাখার মূল চালিকাশক্তি যেহেতু কৃষি, তাই এই খাতকেই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। করোনার এই দুর্যোগকালে একমাত্র কৃষিই হতে পারে মানুষের অর্থনীতি এবং জীবনের ভরসার ক্ষেত্র। সরকার ইতোমধ্যে এ খাতকে গুরুত্ব দিয়ে ৪ শতাংশ সুদে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ তহবিল ঘোষণা করেছে। ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষকরা এ ঋণ নিতে পারবে। পাশাপাশি সরকার করোনার এ সময়ে দেশে যাতে খাদ্যসংকট দেখা না দেয় এবং চাষযোগ্য কোনো জমি অনাবাদি না থাকে, এ আহবান জানিয়েছে। দুঃখের বিষয়, সরকারের আগ্রহ এবং উৎসাহ দুটো থাকলেও ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে যেন অনেকটাই অনুৎসাহী। দেখা যাচ্ছে, প্রণোদনা তহবিল ঘোষণার তিন মাস পার হয়ে গেলেও ঋণ বিতরণ হয়েছে মাত্র ৪৫৮ কোটি টাকা। প্রয়োজনীয় নথিপত্রের ঘাটতি এবং ভালো কৃষক পাওয়া যায় না, এমন অজুহাতে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে ধীরগতি অবলম্বন করে চলেছে। এতে কৃষিখাতকে সচল রাখতে এবং ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সরকারের যে সদিচ্ছা, তা স্থবির হয়ে পড়ছে। আবার সরকার কৃষিকে আধুনিকায়নের জন্য সম্প্রতি ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ শীর্ষক নতুন একটি প্রকল্প নিয়েছে। প্রকল্পটি ২০২৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২০ কোটি টাকা। এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী একটি প্রকল্প। কারণ, আমাদের দেশে এখনো কৃষকরা প্রথাগত পদ্ধতিতে কৃষি শ্রমিকের মাধ্যমে জমি চাষ, বীজ বপন, চারা রোপন, নিড়ানি এবং পাকা ফসল তুলে থাকে। এতে একদিকে যেমন সময় বেশি লাগে, তেমনি খরচও বৃদ্ধি পায়। ফসল কাটার সময় এখন শ্রমিক সংকটও দেখা দিচ্ছে। এ সংকটের ফলে কৃষকের পক্ষে অনেক সময় যথাসময়ে ফসল তোলা কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ কৃষি আধুনিকায়ন বা যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে কৃষক অত্যন্ত কম সময়ে এবং কম খরচে ফসল ফলিয়ে ঘরে তুলতে পারে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে একই মেশিনের মাধ্যমে বীজ বপন, রোপন, নিড়ানি, পাকা ফসল কাটা, মাড়াই থেকে শুরু করে জমিতেই বস্তাজাত করা হয়। এই মেশিন চালাতে একজনের বেশি প্রয়োজন পড়ে না। মেশিনই অটোমেটিক্যালি সব কাজ করে দিচ্ছে। এতে অনেক শ্রমিকের যেমন প্রয়োজন পড়ে না, তেমনি সময় ও খরচ কম লাগে। কৃষকও লাভবান হয়। আমাদের দেশে কোথাও কোথাও জমি হাল দেয়ার ক্ষেত্রে মেশিন ব্যবহার হলেও ফসল রোপন থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত মেশিনের ব্যবহার দেখা যায় না। অথচ কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে সবার আগে কৃষি আধুনিকায়ন বা যান্ত্রিকীকরণের বিষয়টি করাই ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। এদিকটি অবহেলা বা উপেক্ষো করা হয়েছে। অনেকটা সনাতনী ধ্যান-ধারনা নিয়ে মনে করা হয়, কৃষক হাড়ভাঙা খাটুনি দিয়ে ফসল উৎপাদন করবে এবং এটাই তার দায়িত্ব। এটা অনেকেই বোঝে না, কৃষক যদি শুধু নিজের জন্য ফসল উৎপাদন করত, তাহলে আমাদের দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া দূরে থাক, সবসময় খাদ্য সংকটের মধ্যেই থাকত। যারা খাদ্য উৎপাদন করে না, তাদের খাদ্য সরবরাহের জন্য আমদানি করতে হতো। আমরা আমদানি নির্ভর দেশে পরিণত হতাম এবং অধিক দামে খাদ্য কিনে খেতে হতো। আশার কথা, দেরিতে হলেও সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করে কৃষিকে আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। এখন দরকার এ উদ্যোগের দ্রুত বাস্তবায়ন। আমাদের দেশে যে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্দিষ্ট মেয়াদ নির্ধারণ করা হলেও, দেখা যায়, যথাসময়ে তা শেষ হয় না। আর নতুন প্রকল্প মানেই যেন কিছু লোকের জন্য খোশখবর। কারণ, তারা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এর অর্থ লুটপাটের সুযোগ পায়। এই কিছু লোকের কারণেই অনেক ভাল এবং জনস্বার্থের প্রকল্প যথাসময়ে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় না। এতে অর্থ ও সময় দুটোরই অপচয় হয়।

চার.
করোনায় অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সবচেয়ে দ্রুত এবং কার্যকর ক্ষেত্র হিসেবে গুরুত্ব দেয়ার বিকল্প নেই। এ খাত থেকেই সবার আগে সুফল পাওয়া যায়। এই দ্রুত সুফল পেতে কৃষককে তার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিতে হবে। তার ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করার পাশাপাশি উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যদাম নিশ্চিত এবং বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা সুগম করতে হবে। দাম না পেয়ে উৎপাদিত ফসল নিয়ে কৃষকের মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা, কিংবা রাস্তায় ফেলে প্রতিবাদ করার মতো বছরের পর বছর ধরে চলে আসা চিত্রের পুনরাবৃত্তি কাম্য হতে পারে না। করোনার সংকট কাটাতে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠিত খাতগুলো ধরে রাখা এবং সম্ভাবনাময় প্রতিটি উৎপাদনশীল খাতকে এখন কাজে লাগাতে হবে। খাদ্য বলতে শুধু ধান-চালকেই বোঝায় না, তা ভোগের উপকরণকেও বোঝায়। মাছ, শাক-সবজি, গোশত ছাড়া মূল খাদ্য সম্পূর্ণ হয় না। সাপ্লিমেন্টারি ফুড মূল খাদ্যের বিকল্প হতে পারে না। তাই ধান-চাল উৎপাদনের সাথে মাছ, শাক-সবজি, গোশত উৎপাদনের দিকেও অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। ইতোমধ্যে মাছ উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। এদিক থেকে বিশ্বে আমাদের অবস্থান চতুর্থ। ফলে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে মাছ রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি বড় খাত সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন দেশের চাহিদা অনুযায়ী মাছ রফতানির ক্ষেত্রটিকে গুরুত্ব দিয়ে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া দরকার। গবাদিপশু উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও খামারিরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আগে যেখানে কোরবানির জন্য আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের পশুর ওপর নির্ভর করতে হতো, এখন সে অবস্থা নেই। দেশীয় পশু দিয়ে কোরবানির চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। এবারের কোরবানিতে ১ লাখ ১০ হাজার পশু কোরবানির প্রয়োজন হবে বলা হলেও, তার চেয়ে ৯ লাখ বেশি পশু প্রস্তুত ছিল। এর অর্থ হচ্ছে, প্রতি বছরই পশু পালন এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বিদেশে রফতানিরও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগানো অপরিহার্য। এছাড়া বিভিন্ন জাতের ফল-ফলাদি উৎপাদনেও আমাদের কৃষকের সৃজনশীল এবং উৎপাদনমুখী চিন্তার প্রকাশ ঘটেছে। আম, কাঠালসহ অন্যান্য ফলের রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদেরকে সংকটকাল উত্তরণে কৃষি ও খামারি শিল্পের এই বৈপ্লবিক উন্নয়নকে ধরে রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন