Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাস্ক পরবেন, কার কোনটা

| প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০২০, ১২:০২ এএম

আপনার সুরক্ষার জন্যই মাস্ক পড়–ন। করোনা ভাইরাস ছড়ায় ড্রপলেট অর্থাৎ ছোট ছোট পানীয় কণার মাধ্যমে। অসুস্থ একজনের নাক-মুখ দিয়ে বের হওয়া এই ছোট পানি কণার মধ্যেই থাকে জীবন সংহারি করোনা ভাইরাস। কথা বলা বা হাঁচি-কাশির পরেই অন্য একজনের নাক-মুখ-চোখের ঝিল্লিতে গিয়ে এটি আটকে যায়। সেখান থেকে শ্বাসের সাথে ফুসফুসে এবং তার পরে রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরেই ছড়িয়ে পরে। তাই এই ছড়িয়ে পরা বন্ধ করতে হলে অসুস্থ ব্যক্তি হতে কমপক্ষে ৩ ফুট, সম্ভব হলে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। নাক মুখ ঢেকে ভাল মানের মাস্ক সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহার করবেন সবার আগে যিনি অসুস্থ তিনি এবং যে সংক্রমণ থেকে বাঁচতে চান তিনিও। আমাদের সমাজের অনেকের মধ্যেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পরেছে। কে আক্রান্ত হয়েছেন আর কে হন নাই অনেকে নিজেও এটা জানেন না। তাই এই সময়ে কারও জন্যেই মাস্ক পরায় কোন শিথিলতা কাম্য নয়। আমাদের দেশে বেশ কিছুদিন যাবতই দেখা যাচ্ছে সংক্রমনের হার কমছে না। না কমার জন্য যেমন সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখার প্রবণতা দায়ী, তেমনি দায়ী মাস্ক না পরার প্রবণতা।

অধিক সংক্রমিত এলাকায় মানুষের কাছাকাছি আসা এবং অন্যদের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ইতোমধ্যেই লকডাউনের মত কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তাই আমরা যারা এখনও কম সংক্রমণের মধ্যে আছি তারা নিজেরাই এই দূরত্ব বজায় রাখার কাজটা করব। আর সবসময় বাইরে বেরুলে মাস্ক ব্যবহার করব। সরকার কখন কি করবে সেই দিকে তাকিয়ে থাকার সময় এটা নয়। নিজের করণীয় আগে নিজে করি, তারপর অন্যদেরকেও পারলে সচেতন করি।

কখন এই ছোট ছোট পানি কণা ছড়ায়:
মানুষ যখন হাঁচি- কাশি দেয়,
কথা বলে- জোরে কথা বললে বেশী তৈরী হয় ও বেশী ছড়ায়
শ্বাস প্রশ্বাস নেয়, বিশেষ করে জোরে জোরে শ্বাস প্রশ্বাস করে,
চিৎকার চেচামেচি করে,
অসুস্থ হলে কোন কারনে নেবুলাইজার মেশিনে গ্যাস নেয়,
নাকে মুখে অক্সিজেন নেয়ার কোন ডিভাইস লাগিয়ে অক্সিজেন নেয়,
অজ্ঞান করে যন্ত্রের মাধ্যমে শ্বাস চালিয়ে রাখার সময়,
নল লাগিয়ে ভেন্টিলেটর মেশিনের মাধ্যমে শ্বাস দেয়ার সময় ইত্যাদি
আমি কোন মাস্ক ব্যবহার করব:

মাস্ক ব্যবহার করার ইচ্ছা থাকাটা খুবই জরুরী। এর প্রয়োজনীয়তাটা বুঝতে পারলে আমরা অবশ্যই তা করব। অনেক দামী মাস্ক যেগুলো কাছ থেকে রুগীর সেবা দেয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যবহার করছেন তা সাধারণের ব্যবহারের প্রয়োজন নাই। তবে কাপড়ের মাস্ক এবং প্রয়োজনে কেউ কেউ সার্জিকেল মাস্ক আমরা ব্যবহার করতে পারি।

কাপড়ের মাস্ক কিভাবে ব্যবহার করব:
মাস্ক পরার আগে ভালমত সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন,
মাস্কে কোন ময়লা বা ছিড়া আছে কিনা পরীক্ষা করুন,
মাস্ক পরার পর দেখব পাশ দিয়ে কোন ফাকা যেন না থাকে,
মাস্ক দিয়ে নাক-মুখ ও চিবুক ঢেকে যেতে হবে, ছোট হলে চলবে না,
মাস্ক খুলে ফেলার আগে এটি আর ছোঁয়া দিবেন না,
খোলার আগে হাত পরিস্কার করে নিবেন,
খোলার সময়ে মাস্কের ফিতা ধরে খুলুন,
খুলে নাক মুখ থেকে দূরে রাখুন,
এটি ময়লা বা ভিজা না হলে আবার ব্যবহার করার আগে ভাল একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে রেখে দিন,
মাস্ক খোলার পর হাত ধুয়ে ফেলুন,
আবার ব্যবহার করার সময় এর ফিতা ধরে ব্যাগ থেকে বের করুন,
ধোয়ার সময় সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন, সম্ভব হলে গরম পানিতে ধোবেন।

কাপড়ের মাস্ক ব্যবহারে যা করব না:
ময়লা বা ছেড়া মাস্ক পরব না,
ঢিলাঢাল মাস্ক পরব না,
নাক-মুখ-চিবুকের কোন অংশ না ঢেকে পরব না,
শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এমন মাস্ক পরব না,
৩ ফুটের মধ্যে কেউ থাকলে এটা খুলব না,
আমার মাস্ক অন্যকে ব্যবহার করতে দিব না।
কাপড়ের মাস্ক তৈরীর সময় যা মানতে পারলে ভাল হবে:
এটি ৩ লেয়ারের কাপড় দিয়ে তৈরী করলে ভাল,
বাহিরের লেয়ারটি পানি নিরোধি হতে হবে,
মাঝে একটি ফিল্টার ও
ভিতরে পানি শোষনক্ষম কাপড় হবে।
সার্জিকেল মাস্ক কখন পরব:
স্বাস্থ্য কর্মীরা মেডিকেল মাস্ক বা সার্জিকেল মাস্ক ব্যবহার করবেন, আর ব্যবহার করবে-
যাদের কোভিড লক্ষণ আছে,
যারা কোভিড আক্রান্ত বা লক্ষণ আছে তাদের সেবায় নিয়োজিত,
রেড বা ইয়েলো জোনে যেখানে কোভিড রুগী বেশী- সেখানকার ৬০ উর্দ্ধ ব্যক্তিরা ও যাদের আগেই অন্য কোন রোগ আছে।
সার্জিকেল মাস্ক ব্যবহারে যা মনে রাখবেন:
মাস্ক পরার আগে ভালমত সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন,
মাস্কে কোন ময়লা বা ছিড়া আছে কিনা পরীক্ষা করুন,
উপরের দিক যেখানে নাকের জন্য শক্ত অংশটা আছে সেটা ঠিক করুন,
রঙিন অংশটা বাহিরের দিকে দিন,
শক্ত মেটালের অংশটা নাকের সাথে চাপ দিয়ে বসিয়ে দিন,
নাক-মুখ-চিবুক ঢেকে মাস্ক পরুন,
পাশ দিয়ে কোন ফাকা যেন না থাকে তা লক্ষ করুন,
হাত না ধুয়ে আর মাস্ক ছোঁয়া দিব না,
ফিতা ধরে মাস্ক খুলুন,
খুলে নাক মুখ থেকে দূরে রাখুন,
ব্যবহারের পর দ্রুত নিরাপদ স্থানে এটি ফেলে দিন,
ভালভাবে হাত ধুয়ে ফেলুন।

সার্জিকেল মাস্ক ব্যবহারের সময় যা করবেন না:
ময়লা, ভিজা বা ছেড়া মাস্ক ব্যবহার করবেন না,
নাক-মুখ বা চিবুকের কোন অংশ খোলা রেখে মাস্ক পরবেন না,
মাস্কের সামনের অংশে হাত দিবেন না,
কারো সাথে কথা বলার সময়ও মাস্ক খুলে নিবেন না,
ফেলে দেয়া মাস্ক অন্যের কাছাকাছি রেখে দিবেন না,
পুনরায় ব্যবহার করবেন না।
এন৯৫ ও এরকম মাস্ক কারা ব্যবহার করবে:
স্বাস্থ্যকর্মী যারা হাসপাতালে রুগীদের সেবা দিবেন শুধুমাত্র তারাই এটি ব্যবহার করবেন। এই মাস্ক বাতাসে ভেসে বেড়ান ৯৫% পার্টিকেল ফিল্টার করতে পারে। আর ছোট অনেক ছোট ০.৩ মাইক্রণ পর্যন্ত মাপের পার্টিকেল আটকাতে পারে। তারপরও অধিক সচেতনতার কারনে সাধারন অনেকেই এরই মধ্যে এটি ব্যবহার করছেন। তবে ব্যবহার করতে হলে এর ব্যবহার বিধি মেনে চলতে হবে।
বাচ্চারা এটি ব্যবহার না করাই ভাল।

যাদের আগেই শ্বাস কষ্ট রোগ, হৃদরোগ, অন্য কোন কোন কারনে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তারা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এটা ব্যবহার করবেন না।

কোন কোন রেস্টিরেটরে এক্সস্ট ভালভ থাকে, এগুলো যেখানে স্টেরিলিটি বা জীবাণুমুক্ত পরিবেশ দরকার সেখানে ব্যবহার করা যাবে না।

এগুলোর সবই একবার ব্যবহার করার জন্য, তবে প্রাপ্যতা ও দামের কারনে বেশীবার ব্যবহার হচ্ছে। তাই যখনই শ্বাস নিতে কষ্ট হবে, ময়লা হয়ে যাবে, ভিজে যাবে বা কোনভাবে ছিড়ে যাবে তখন এটি আর ব্যবহার করবেন না।

যাদের মুখে দাড়ি বা লোম আছে তাদের মুখে এটি ভালভাবে এটে লাগবে না, তাই সুরক্ষাও ঠিক মত হবে না।

এন৯৫ এর মত কার্যকরী আরও কিছু মাস্ক বাজারে পাওয়া যায় সেগুলিও স্বাস্থকর্মীরা ব্যবহার করতে পারেন। যেমন-চায়নার কেএন৯৫, ইউরোপের এফএফপি২, অষ্ট্রেলিয়া/নিউজিল্যান্ডের পি২, কোরিয়ার কোরিয়া ফার্স্ট ক্লাস ও জাপানের ডিএস২।

ঘরে থাকি-সুস্থ থাকি। বাইরে বেরুলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করি। সন্দেহ জনক কিছু ছোঁয়া দিলেই ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলি। হাত দিয়ে চোখ-নাক-মুখ এলাকা স্পর্শ না করি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি। বড়রা বাচ্চাদের দিকে খেয়াল রাখি।

ডা. জহুরুল হক সাগর
নবজাতক ও শিশু-কিশোর মেডিসিন বিশেষজ্ঞ,
রূপসী বাংলা হসপিটাল,
শনির আখরা, কদমতলি, ঢাকা ১২৩৬।
ফোন: ০১৭২-৮৫৫৮৯৯৯, ০১৭৮-৭৭৪০৭৪০।
ইমেইল: [email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন