মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
১৯৯২ সালে ধুলিসাৎ করে দেয়ার আগে যেখানে বাবরি মসজিদ ছিল সেখানেই প্রস্তাবিত রামমন্দিরের গর্ভগৃহে রুপোর ইট প্রতিষ্ঠা করে, ভূমিপুজোর মাধ্যমে রামমন্দির তৈরির সূচনা করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই অনুষ্ঠানকে মোদি তুলনা করেছেন ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের সঙ্গে।
ভারতের স্বাধীনতার পর সোমনাথ মন্দির পুনর্নির্মাণের প্রশ্ন যখন উঠেছিল, তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট রাজেন্দ্রপ্রসাদের দীর্ঘ পত্রযুদ্ধ হয়েছিল। নেহরু সরকারি টাকায়, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় মন্দির নির্মাণের বিরোধী ছিলেন। তার মত ছিল, ধর্মীয় বিষয়ে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা থাকা উচিত নয়। রাজেন্দ্রপ্রসাদের চাপে শেষ পর্যন্ত অবশ্য নেহরু পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছিলেন। মোদি অবশ্য নেহরুর মত মানেন না। তিনি দেশে-বিদেশে মন্দির দর্শন করেন। পুজো দেন। অযোধ্যার অনুষ্ঠান মোদিময় হওয়া নিয়েও তাই আশ্চর্যের কিছু নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং স্বরাজ্য পার্টির নেতা যোগেন্দ্র যাদবের মতে, ‘একজন রাজনীতিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছেন তা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সু-নীতি হতে পারে না। কিন্তু বর্তমান ভারতে এতে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই।’
যেখানে ভূমিপুজো হলো, সেই জায়গায় পুরোহিতরা ছাড়া ছিলেন মাত্র পাঁচজন। প্রধানমন্ত্রী মোদি, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেল, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত এবং রামজন্মভূমি ট্রাস্টের প্রধান নৃত্যগোপাল দাস। অর্থাৎ, ভূমিপুজোর অনুষ্ঠানটা যে বিজেপি-আরএসএস নিয়ন্ত্রিত তা পরিষ্কার। কোনো বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা, বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীকে সেখানে দেখা যায়নি।
করোনাকালেরামমন্দিরের ভূমিপুজোর সিদ্ধান্ত জানার পরেই সোচ্চার হয়েছিলেন প্রবীণ রাজনীতিক শরদ পাওয়ার। তিনি বলেছিলেন, ‘এখন তো করোনার মোকাবিলা করাই প্রথম কাজ। মন্দিরের কাজ তো পরেও শুরু করা যায়।’ কিন্তু তার সেই কথায় কেউ কান দেননি। এরপরই অভিযোগ উঠেছে, করোনার মধ্যে এখনই ভূমিপুজো করার একটা রাজনৈতিক কারণও আছে। মন্দির শেষ করতে সাড়ে তিন বছর সময় লাগবে। তখনই পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন। ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচন রামকে সামনে রেখে লড়বেন মোদি। প্রচারেও আসবে, মোদি থাকলে যে কিছুই অসম্ভব নয়, তা রামমন্দিরের নির্মাণ থেকে আবার প্রমাণিত হলো।
বিরোধীরা বলছেন, এর পাশাপাশি আরেকটা কারণও আছে। তা হলো, ক্রমশ লোকের মনে ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, করোনার মোকাবিলায় সরকার ব্যর্থ। অর্থনীতিও প্রবল চাপে। বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। সাধারণ গরিব মানুষ থেকে মধ্যবিত্ত সকলেই প্রতিদিনের জীবন চালাতে সমস্যায় পড়ছেন। যখন করোনা সবে ছড়াচ্ছিল, মাত্র শপাঁচেক লোক আক্রান্ত ছিলেন, তখন চারঘণ্টার নোটিসে লকডাউন ঘোষণা করা হলো। এখন প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি লোক আক্রান্ত, অথচ সব খোলা। লোকে কাজের খোঁজে দিশেহারা। সেই সময়ে লোকের নজর অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে গেলে করোনাকালেও রামমন্দিরের ভূমিপুজো জরুরি ছিল। এই মুহূর্তে ভারতে অন্য সব পিছনে, সব সংবাদমাধ্যম রাম-ময়। আর হবে নাই বা কেন, শোনা গেছে, উত্তর প্রদেশ সরকার তো আগে থেকেই চ্যানেলগুলির কাছ থেকে হলফনামা নিয়েছে, তার নিহিতার্থ হলো, ভিন্ন সুরে কথা বলা যাবে না। কোনোরকম উত্তেজনা দেখা গেলেই চ্যানেলের কর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর এ নিয়ে কারো মনে দ্বিধা ছিল না অযোধ্যায় মন্দির হবে। দ্রুত হবে। কিন্তু সেই মন্দির নির্মাণের দিন এই ধরনের বিরোধী স্বরও যে উঠবে, তা ভাবা যায়নি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও তাৎপর্যপূর্ণ বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ভারত তার চিরায়ত বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের ঐতিহ্যকে বহন করছে। আমাদের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই ঐতিহ্যকে বজায় রাখবই।’ অধীর চৌধুরি জাতীয় নিরাপত্তা আইনে আটক চিকিৎসক কাফিল খানের মুক্তি দাবি করে বলেছেন, ‘অবিচার ও বৈষম্য করে কখনো রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা করা যায় না।’ আর রামের তুমুল প্রশংসা করে রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘রাম হলেন প্রেমের প্রতীক, তিনি কখনো ঘৃণার মধ্যে প্রকট হতে পারেন না। রাম করুণার প্রতীক, তিনি কখনো ক্রুরতার মধ্যে প্রকট হতে পারেন না। রাম ন্যায়ের প্রতীক, তিনি কখনো অন্যায়ের মধ্যে প্রকট হতে পারেন না।’ তবে এভাবে রাম রাজনীতি আলোচনায় এসে যাওয়ায় বিজেপিরই সুবিধা হবে বলে মনে করেন বিশেষশজ্ঞদের একাংশ।
আবার যোগেন্দ্র যাদবের মতে, ‘এ দিন নরেন্দ্র মোদি, যোগী আদিত্যনাথদের উপস্থিতিতে রামমন্দিরের যে অনুষ্ঠান হলো, তা থেকে পরিষ্কার, সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনীতির জয় হলো। অযেোধ্যায় এ দিনের অনুষ্ঠান হলো পুরোপুরি রাজনৈতিক। এই অনুষ্ঠান হলো বিভিন্ন ধরনের ক্ষমতার মিশেল। রাষ্ট্রের ক্ষমতা, প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা, সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের ক্ষমতা, আধুনিক মিডিয়ার ক্ষমতা এবং ধর্মীয় কর্তৃত্বের ক্ষমতা।’ তার সিদ্ধান্ত হলো, পরাজয় হলো ধর্মনিরপেক্ষতার। সূত্র: ডয়চে ভেলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।