Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজনৈতিক ফায়দা নিতে রামমন্দিরকে ব্যবহার করছেন যোগী

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০২০, ৯:১৬ এএম

কল্যাণ সিংহের জায়গায় হিন্দুদের ‘হৃদয় সম্রাট’ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। গতকাল শনিবার রাম মন্দিরের ঐতিহাসিক ভিত্তি প্রস্তর অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করতে সাধুদের নিয়ে তিনি আবারও অযোধ্যা যান। বিগত দশদিনের মধ্যে অযোধ্যায় এটি তার তৃতীয় সফর।

গত শুক্রবার যোগী সংবাদমাধ্যমে জনগনের উদ্দেশ্যে লেখা একটি কলামে ঘরে ঘরে প্রদীপ এবং মোমবাতি জ্বালিয়ে রাম মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর অনুষ্ঠানে সবাইকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। এভাবে তিনি অযোধ্যায় রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার ৫০০ বছরের পুরনো স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়ার দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বলেন।

কল্যাণ সিংহ ১৯৯১-৯২ সালে অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার লক্ষ্যে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে ব্যাপকভাবে প্রচারনা চালিয়েছিলেন। তবে করোনভাইরাস মহামারীটির কারণে চলাচলে সীমাবদ্ধতা থাকায় যোগী বিকল্প উপায় বেছে নিয়েছেন। তিনি একটি লিখিত আবেদনের মাধ্যমে ভিন্নভাবে সমর্থন চেয়েছেন। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভেঙে দেওয়ার কৃতিত্ব গ্রহণের পরে, কল্যান যখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তিনি ধীরে ধীরে রাজনৈতিকভাবে বিছিন্ন হয়ে যাচ্ছিলেন এবং জনসাধারণের সাথে তার দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছিল। ১৯৯৭ সালে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর দলের এক মহিলা সহকর্মীর সাথে তার সম্পর্কের কথা ফাঁস হয়ে যায়। ফলে, ১৯৯২ সালে কল্যান যে বিশাল জনপ্রিয়তা এবং মর্যাদা অর্জন করেছিলেন, এই ঘটনায় তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।

যোগী এখন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির হয়ে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এরই মধ্যে তিনি অনবদ্য খ্যাতি পেয়েছেন এবং জনপ্রিয়তায় হিন্দুদের সাবেক ‘হৃদয়ের সম্রাট’ কল্যাণকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছেন। বিশাল ও জটিল রাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হয়েও তিনি হিন্দুত্ববাদী আদর্শে জড়িত থাকার জন্য ঐতিহাসিক গোরক্ষনাথ পীঠের পুরোহিত্ব ত্যাগ করেননি এবং প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তাকে গোরক্ষনাথ মন্দিরে পুরোহিতের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিজের হিন্দুত্ববাদী ইমেজ আরও বাড়িয়ে তুলতে দেখা যায়। আস্তে আস্তে ‘কল্যাণ’ নামটি জনসাধারণের স্মৃতি থেকে বিলীন হতে শুরু করেছে এবং তার জায়গায় যোগী আদিত্যনাথের উত্থান হতে শুরু করেছে, যিনি শক্তিশালী হিন্দুত্বের পরিচয় ধরে রেখেছেন।

বর্তমান প্রজন্ম, যারা কল্যাণের সাথে পরিচিত নন, তাদের জন্য যোগী হিন্দুত্ববাদী আদর্শের মুখ হয়ে উঠেছেন। হাতে অগ্নি নিয়ে অযোধ্যাতে পূজা করার পরে, গেরুয়া পোশাকধারী যোগী তার সমসাময়িকদের থেকে অনেক এগিয়ে গিয়েছেন। বিপরীতে কল্যাণ এক সময় বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে মুলায়াম শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন এবং নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরের পরাজয় নিশ্চিত করার তার নিজস্ব রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। তবে, তিনি তার জীবনে আর রাম মন্দির দেখে যেতে পারেননি। তার থেকে যোগী আদিত্যনাথের হিন্দুত্বের পরিচয় অনেক বেশি সাবলীল। কল্যাণ একপর্যায়ে এমনকি বিজেপির তৎকালীন শীর্ষ নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীকে ‘ক্লান্ত ও অবসরপ্রাপ্ত’ বলে অভিহিত করেছিলেন। পরে, তিনি তার মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং বিজেপিতে আবার ফিরে এসেছিল। তবে এই সময়ের মধ্যে তিনি তার জনপ্রিয়তা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছিলেন।

যোগী তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই হিন্দুত্ববাদী আদর্শের প্রপাগাণ্ডা অনুসরন করে যাচ্ছেন। তিনি হিন্দু যুব বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং তার দৃঢ় আদর্শের সাথে কখনও আপস করেননি। নির্বাচনের সময় বিজেপি অন্য রাজ্যেগুলোতেও যোগীর মতো নেতার প্রয়োজন অনুভব করে থাকে। এটি কেবল শক্তিশালী হিন্দু নেতা হিসাবে তার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার জন্য। তার মতো একজন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ সুযোগ চিনতে ভুল করেননি। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে তিনি রাম মন্দির নিয়ে প্রচারনা চালানোর সুযোগ সময়মতো লুফে নিয়েছেন। সূত্র: টিওআই।



 

Show all comments
  • আশিক ২ আগস্ট, ২০২০, ৯:৪৫ এএম says : 0
    এদেরকে নিয়ে কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না
    Total Reply(0) Reply
  • শিমুল ২ আগস্ট, ২০২০, ৬:০১ পিএম says : 0
    এদের বিরুদ্ধে সকলের সোচ্চার হওয়া উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • সালমান ২ আগস্ট, ২০২০, ৬:০২ পিএম says : 0
    যোগী তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই হিন্দুত্ববাদী আদর্শের প্রপাগাণ্ডা অনুসরন করে যাচ্ছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • সঞ্জয় ২ আগস্ট, ২০২০, ৬:০৪ পিএম says : 0
    এরা মুখে একটা বলে আর বাস্তবে অন্যটা করে
    Total Reply(0) Reply
  • মারুফ ২ আগস্ট, ২০২০, ৬:০৭ পিএম says : 0
    এরা ধর্মকে ব্যবহার করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চায়। শুধু নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্যই রাজনীতি করে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ