মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
দীর্ঘ ৮৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গতকাল ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া মসজিদ পুনরায় ইবাদতের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। যার একান্ত ইচ্ছায় জাদুঘর থেকে মসজিদে রূপান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সেই অবিসংবাদিত নেতা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান স্বয়ং এ ঘটনার সাক্ষী হতে জুমার বিশাল জামাতে শামিল হন। জুমার খুতবার আগে তিনি উপস্থিত মুসল্লিদের বিশেষ অনুরোধে তার সুললিত কণ্ঠে সূরা ফাতিহা তেলাওয়াত করে শোনান। সমবেত মুসল্লিরা দেশের প্রেসিডেন্টের কণ্ঠে সুমধুর কিরাত শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। করোনার বিরুদ্ধে সতর্কতা হিসাবে জনাব এরদোগান এবং তার শীর্ষ মন্ত্রীরা সাদা ফেসমাস্ক পরিধান করে অনুষ্ঠানের শুরুতে নীল রঙের গালিচায় হাঁটেন।
এর আগে জুমার জামাত তথা আয়া সোফিয়ার মসজিদে প্রত্যাবর্তনের ঘটনার সাক্ষী হতে সকাল থেকেই হাজারো পুরুষ, মহিলা, প্রবীণ এবং শিশুদের ১১টি চেকপয়েন্টে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। পুলিশ মুসল্লিদের তল্লাশি করে এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের তাপমাত্রা এবং কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে রক্ষায় মুসল্লিদের মাস্ক পরীক্ষা করেন।
আয়া সোফিয়াকে জাদুঘর ঘোষণা এবং মসজিদটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রায় নয় দশকের কথা উল্লেখ করে সায়েত কলাক বলেন, ‘আমাদের আজ বহু বছরের আকাক্সক্ষার অবসান ঘটছে। আমাদের প্রেসিডেন্ট এবং আদালতের সিদ্ধান্তের জন্য ধন্যবাদ, আজ আমরা আয়া সোফিয়ায় জুমার নামাজ পড়তে যাচ্ছি’।
আয়া সোফিয়ার মূল অংশে মাত্র ৫০০ জনকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন সিনিয়র মন্ত্রী, সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিশেষভাবে আমন্ত্রিত অতিথিরা। একদফা চেকের পর মুসল্লিরা বাইরের সুলতান মোহাম্মদ স্কয়ারের বিশাল চত্ত্বরে প্রচন্ড রোদ উপেক্ষা করে জায়নামাজ বিছিয়ে অবস্থান নেন।
সময় বাঁচাতে কিছু মুসল্লি আশপাশের মসজিদে ওযূ করে আসেন। অনেককে তুরস্কের পতাকা এবং জায়নামাজ বহন করতে দেখা যায়। ইয়েনিকাপি জেলার একটি নির্ধারিত পার্কিং জায়গা থেকে বিদেশি এবং অন্যদের বহন করার জন্য একটি শাটল পরিষেবা চালু করা হয়েছিল।
আলী কামাল এভেলিওগ্ল বলেন, তিনি কৃষ্ণ সাগর শামসুন প্রদেশ থেকে ইস্তাম্বুল এসেছেন এবং বলেন যে, তিনি আয়া সোফিয়া মসজিদে প্রথম নামাজ পড়তে পেরে খুশি। ‘আমরা অপেক্ষা করার দুঃখের বছরগুলোকে সুখের স্মৃতিতে পরিণত করেছি। এ কারণেই আমরা খুশি’-এভলিওগ্ল বলেন।
পূর্ব এলাজিগ প্রদেশ থেকে আসা অপর এক নাগরিক ফয়সাল কারাকুস বলেন, ‘৮৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটলো। আল্লাহকে ধন্যবাদ, আমরা এমন একটি দিন দেখতে পেলাম। আমরা খুব খুশি’। ইস্তাম্বুলের কাদির ওজভার বলেন যে, খুব সকালে তিনি বাড়ি থেকে রওনা দিলেও ভিড়ের কারণে মসজিদে পৌঁছনো ছিল কঠিন। অ্যাডেম সিনার বলেন, তার স্বপ্ন বাস্তবতা পেল এবং তিনি তুরস্কের পতাকা নিয়ে নামাজ পড়েন। রেডিওর হোস্ট মোহাম্মদ বোজড্যাগ বলেন, তিনি তার বন্ধুদের সাথে ইজিয়ান ইজমির প্রদেশ থেকে ইস্তাম্বুল এসেছেন।
‘আয়া সোফিয়া ইস্তাম্বুলের বিজয়ী দ্বিতীয় ওসমানীয় সুলতান মোহাম্মদ ফাতেহ আমাদের হাতে ন্যস্ত করেছেন। বিজয়ের প্রতীক ইস্তাম্বুলের ইস্তাম্বুল হওয়ার মূল চাবিকাঠি’ -বোজডাগ যোগ করেন।
জার্মানিতে বসবাসরত নাগরিক ইকবাল সিতিন তার দুই সন্তানকে নিয়ে মসজিদে প্রথম নামাজ পড়তে তুরস্কে এসেছেন। কন্যা শেহের সিতিন বলেন, তারা ‘ইতিহাসের সাক্ষী’ হতে চেয়েছেন। ‘আমরা এর আগে আয়া সোফিয়া ঘুরেছি। আমরা হতাশ হয়েছি যে, এটি ইবাদাতের জন্য উন্মুক্ত ছিল না, তবে আমরা এখন খুশি’।
দেশী-বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য তুরস্কের শীর্ষস্থানীয় পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে আয়া সোফিয়া অন্যতম। জাদুঘর হিসেবে ১৯৮৫ সালে আয়া সোফিয়াকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় যুক্ত করা হয়েছিল। এটি ইস্তাম্বুল বিজয় অবধি ৯১৬ বছর গির্জা এবং ১৪৫৩ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫০০ বছর একটি মসজিদ এবং স¤প্রতি ৮৬ বছর ধরে একটি যাদুঘর হিসাবে ছিল।
তুরস্কের একটি আদালত গত ১০ জুলাই ১৯৩৪ সালের জাদুঘরে রূপান্তরিত করার মন্ত্রিসভার একটি আদেশ বাতিল করে আয়া সোফিয়াকে একটি মসজিদ হিসাবে ব্যবহারের পথ সুগম করে। আয়া সোফিয়ার নতুন যুগে তুরস্কের ধর্ম বিষয়ক অধিদপ্তর মসজিদে ধর্মীয় পরিষেবাগুলির তদারকি করবে এবং সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয় পুনরুদ্ধার এবং সংরক্ষণের কাজ তদারকি করবে। স্থাপত্যটি দর্শনার্থীদের জন্য বিনা ম‚ল্যে উন্মুক্ত থাকবে।
ষষ্ঠ শতাব্দীর ভবনের অভ্যন্তরে অনুষ্ঠানের জন্য কয়েকশ’ জন আমন্ত্রিত সদস্য প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। তার জামাতা এবং অর্থমন্ত্রী বেরাত আলবায়রাকসহ কয়েকজনকে তাদের মোবাইল ফোনে ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের চিত্র রেকর্ড করতে দেখা যায়। বাইরের স্কোয়ারে জড়ো হওয়া হাজার হাজার লোকের কাছে অনুষ্ঠান স¤প্রচারের জন্য একটি বড় স্ক্রিন এবং স্পিকার স্থাপন করা হয়েছিল। সূত্র : আনাদোলু এজেন্সী, ডন অনলাইন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।