Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করে এবং এর ভবিষ্যত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০২০, ৩:২০ পিএম

নিরাপদ তো বটেই, প্রত্যাশামতো মানবশরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও (ইমিউনিটি) যথাযথ ভাবে তৈরি করছে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও প্রায় নেই! গত সোমবার মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে এই ভ্যাকসিনটি কীভাবে কাজ করে তা তুলে ধরা হয়েছে।

গবেষণার শুরুতে নাম ছিল, ‘চ্যাডস্ক ১’। এখন, ‘এজ়েডডি ১২২২’। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ‘মাস্টারস্ট্রোক’ এখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। প্রায় হাজার জনের উপরে চালানো তাদের প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষার রিপোর্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিন গ্রুপের প্রধান অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেন, ‘বলতে পারেন, প্রথম বাধা টপকে গিয়েছি। যেমন ভাবা হয়েছিল, ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরে তেমনই রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির প্রমাণ পেয়েছি আমরা।’

তবে সম্ভাব্য এই ভ্যাকসিনটিকে চূড়ান্ত ‘ফিট সার্টিফিকেট’ দেওয়ার আরও যে বড় মাত্রায় ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা ও তার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে, তা-ও জানালেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত শুধু ব্রিটেনেই ৯ হাজার জনের উপর এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে। করোনা-হটস্পট ব্রাজিলেও প্রায় পাঁচ হাজার জনকে এর ডোজ় দেয়া হয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, সাফল্য যে মিলবেই, সে ব্যাপারে তারা ৮০ শতাংশ নিশ্চিত।

আদতে ‘অ্যাডিনোভাইরাস ভেক্টর ভ্যাকসিন’। তৈরি হয়েছে একটি ভাইরাস (চ্যাডক্স১) থেকে। যা অ্যাডিনোভাইরাসকে জিনগত ভাবে বদলে, দুর্বল করে, তৈরি করা হয়েছে। অ্যাডিনোভাইরাসের কারণে শিম্পাঞ্জিদের সাধারণ সর্দি-জ্বর হয়ে থাকে। দুর্বল ভাইরাসটি মানুষের শরীরে ঢুকে সংখ্যায় বাড়তে পারে না। এদের অল্প উপস্থিতিতেই দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা পাল্টা জবাব দেয় নোভেল করোনাভাইরাসকে। চ্যাডক্স১-এর জেনেটিক মেটেরিয়ালে রাখা হয়েছে করোনাভাইরাসের স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিনটিকেও। অক্সফোর্ড জানিয়েছে, তাদের সম্ভাব্য টিকায় ‘টি সেল’ তৈরি হচ্ছে। ‘মেমরি চিপের’ মতো হানাদার ভাইরাসকে চিনে রাখে এই কোষ। অ্যান্টিবডির আয়ু ফুরোলেও ফের হামলা হলে ভরসা দেবে টি সেল।

কী ভাবে কাজ করছে এই ভ্যাকসিন, আজ তা-ও প্রকাশ করেছে ল্যানসেট। তাতে বলা হয়েছে, ভ্যাকসিনের ডোজ় প্রত্যাশামতোই অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল তৈরি করছে শরীরে। হালের কিছু গবেষণা বলছে, অ্যান্টিবডির আয়ু মোটামুটি মাস তিনেক। কিন্তু ঘাতক কোষ ‘টি-সেল’ বহু বছর শরীরে থেকে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে। অ্যান্টিবডির কাজ হল, ভাইরাস সংক্রমণ হলে তার বিরুদ্ধে লড়াই করা। আর টি-সেল অনেকটা ‘মেমরি চিপের’ মতো। ভাইরাসের সমস্ত বৈশিষ্ট নিজের শরীরে ধরে রাখে। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে ফের কোনও কোষ ওই ভাইরাস-আক্রান্ত হলেই টি-সেল সক্রিয় হয় এবং সেই মতো খবর পাঠায় ইমিউন সিস্টেমকে। তার পরেই পুরনো চেনা শত্রুর বিরুদ্ধে শুরু করে হামলা।

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন এই টি-সেলেই বাজিমাত করবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র দাবি, এই মুহূর্তে প্রায় ১৫০টি ভ্যাকসিনের কাজ চলছে দেশে-দেশে। প্রায় দু’ডজন রয়েছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে। কিন্তু অক্সফোর্ডের গবেষকেরা ছাড়া আর কেউ টি-সেল তৈরি হচ্ছে বলে দাবি করেননি। হু-র জরুরি স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রধান মাইকেল রায়ান ল্যানসেটে রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরে বলেন, ‘দারুণ খবর। এ বার আরও বড় করে বিশ্ব জুড়ে পরীক্ষায় নামতে হবে অক্সফোর্ডকে।’ ল্যানসেটের সম্পাদক রিচার্ডও অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানিয়ে লিখেছেন, ‘এই টিকা নিরাপদ, সহনশীল এবং ইমিউনিটি বাড়াতে সক্ষম।’

গবেষক পোলার্ডও তাদের গবেষণাপত্রে লিখেছেন, ‘আমরা আশা করছি, এর প্রয়োগে যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে, তা দীর্ঘদিন ওই ভাইরাসটিকে মনে রাখবে। এবং সেই মতো সুরক্ষা দেবে মানুষকে।’ প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভ্যাকসিন প্রয়োগের ১৪ দিনেক মাথায় শীর্ষে পৌঁছচ্ছে টি-সেলের মাত্রা। আর অ্যান্টিবডি ২৮ দিনে। প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্তত মাস দু’য়েক তো থাকছেই। সর্বোচ্চ সীমা কত, তা নিশ্চিত করতে সময় লাগবে। ভ্যাকসিন প্রোগ্রামের প্রধান অ্যান্ড্রু পোলার্ড জানালেন, তাঁদের পরীক্ষাধীন ৯০ শতাংশ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে একটি ডোজ়েই। বাকিদের দ্বিতীয় ডোজ দিতে হয়েছে।

পোলার্ড জানালেন, এই ভ্যাকসিন নিরাপদ। আর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া? ল্যানসেটের রিপোর্ট বলছে, পরীক্ষাধীন ৭০ শতাংশের সামান্য মাথাব্যথা বা অল্প জ্বর ছাড়া উল্লেখ করার মতো কোনও প্রতিক্রিয়া হয়নি। অক্সফোর্ডের গবেষকেরা জানিয়েছেন, শুধু ব্রিটেনেই আরও ১০ হাজার জনের উপরে এই টিকা-পরীক্ষা হবে। ব্রিটেনের বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকায় দু’হাজার ও আমেরিকায় ৩০ হাজার জনের উপর চলবে এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ। তার পর হবে ‘চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল।’ টিকা নিয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা সরাসরি আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসবেন। অক্সফোর্ড বলছে, বুক চিতিয়ে লড়তে তৈরি তারা। সময় লাগুক, তবু সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং যথাযথ প্রতিষেধকই আনতে চাইছেন ইবোলা-টিকার জন্মদাত্রী সারা গিলবার্টের টিম। সূত্র: ডন, রয়টার্স।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ