Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষ মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও টেকনোলজিস্ট গড়ে তুলতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

চিকিৎসা ব্যবস্থায় মাইক্রোবায়োলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট, বায়োটেকনোলজিস্ট যে কতটা প্রয়োজন, করোনাভাইরাসের মহামারি তা বুঝিয়ে দিয়েছে। নতুন এই ভাইরাস সম্পর্কে আমাদের দেশ দূরে থাক উন্নত দেশগুলোও ধারণা পেতে হিমশিম খাচ্ছে। এ বাস্তবতা সামনে রেখে বিশেষজ্ঞরা এখন উল্লেখিত বিশেষায়িত বিষয়ের ওপর গবেষণা, গবেষক এবং দক্ষ জনবল সৃষ্টির উপর জোর দিয়েছেন। তারা আশঙ্কা করছেন, করোনাভাইরাসের পর আরও অজানা নতুন ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। আর করোনা যে সহসাই নির্মূল হবে, এমন আশাবাদও ব্যক্ত করা যাচ্ছে না। ফলে অণুজীববিজ্ঞানী, ফার্মাসিস্ট, বায়োটেকনোলজিস্টসহ ভাইরাস সংক্রান্ত টেকনিশিয়ান সৃষ্টির উদ্যোগ এখনই নিতে হবে। আমাদের দেশের সরকারি-বেসরকারি কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইক্রোবায়োলজি, ফার্মাসি বিভাগ থাকলেও সেগুলোতে প্র্যাক্টিক্যাল বা গবেষণার চেয়ে পড়ার ওপর জোর দেয়া হয়। কোন শিক্ষার্থী গবেষণা করতে চাইলেও বিদ্যমান গবেষণাগারে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকা এবং ঝুঁকি থাকায় তারা গবেষণা করতে পারে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজির এক ছাত্র ডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করতে চাইলে সেখানে যে ল্যাবরেটরি রয়েছে, তা অনিরাপদ হওয়ায় গবেষণা চালাতে পারেনি। তাকে এ প্রজেক্ট বাদ দিতে হয়েছে। তার এ গবেষণার জন্য বায়োসেফটি লেবেল-৩ বা ৪ ল্যাবরেটরির প্রয়োজন। সেখানে রয়েছে লেবেল-২ ল্যাবরেটরি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্র ভাইরাস এবং এর প্রতিষেধক আবিষ্কার নিয়ে গবেষণা করতে ইচ্ছুক, তারা সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে তাদেরকে প্র্যাক্টিক্যালের পরিবর্তে পড়াশোনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে। এতে বিদ্যমান ভাইরাস এবং ভবিষ্যতের ভাইরাস নিয়ে গবেষণার পথ রুদ্ধ থেকে যাচ্ছে।
একটি দেশে প্রত্যেকটি বিশেষায়িত রোগ এবং এর বিস্তারের বিষয় নিয়ে জাতীয়ভাবে গবেষক ও বিশেষজ্ঞ থাকা অপরিহার্য। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে ফাউসি সে দেশের প্রধান ভাইরোলজিস্ট হিসেবে খ্যাত। অন্যান্য দেশেও তার মতো বিশেষজ্ঞ রয়েছে। তাদের কাজ হচ্ছে, যে কোনো জরুরি রোগ-জীবানুর প্রাদুর্ভাবের সময় এর গতিপ্রকৃতি নির্ণয় এবং এ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে কি ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে, তার দিক-নির্দেশনা দেয়া। আমাদের দেশে জাতীয়ভাবে এ ধরনের কোনো বিশেষজ্ঞ নেই। এ কাজটি করতে হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বা অন্যান্য চিকিৎসকদের। এছাড়া যেসব বিশেষজ্ঞ রয়েছেন, তারা তাদের অবস্থান থেকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। করোনার ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেতে পারে কিংবা আগামীতে আরও ভয়াবহ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে, এ আশঙ্কা সামনে রেখে বিশেষজ্ঞরা এখন ভাইরাস গবেষক থেকে শুরু করে ফার্মাসিস্ট, বায়োটেকনোলজিস্ট ও এ সংক্রান্ত ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান বৃদ্ধি এবং সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কোনো পদ নেই। বিশেষায়িত এ জায়গা পূরণ করা হচ্ছে, শুধুমাত্র বিসিএস পাস করা চিকিৎসক দিয়ে। এই যদি হয় পরিস্থিতি, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইক্রোবায়োলজি, ফার্মাসি বিভাগ রেখে শিক্ষার্থীদের কি লাভ হচ্ছে? দেখা যাচ্ছে, তারা শুধু এসব বিষয়ে পড়াশোনা করে গবেষণা করতে না পেরে অন্যান্য সাধারণ চাকরির জন্য আবেদন করছে বা সেখানে চাকরি করছে। এর ফলে তারা যে একটি বিশেষ গবেষণামূলক সাবজেক্টে পড়াশোনা করল, তার কোনো মূল্যই রইল না। যুগের পর যুগ ধরে এ প্রক্রিয়া চলছে। এতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের কোনো গবেষক তৈরি হচ্ছে না। বলা বাহুল্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব ল্যাবরেটরি রয়েছে সেগুলোতে গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ এবং নিরাপত্তা নেই। এমনকি যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্থাপন করেছে, তারা জানে না কিভাবে এ ধরনের ল্যাবরেটরি স্থাপন করতে হয়। যারা জানে, তাদের গবেষণাগরে গবেষণার জন্য যে ধরনের ইক্যুইপমেন্ট এবং নিরাপত্তা সুবিধা থাকা দরকার তা নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে শুধু মুখস্তবিদ্যা বা থিওরিটিক্যালের ওপর ভিত্তি করে। প্র্যাক্টিক্যাল বা বাস্তবভিত্তিক ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। বিশেষ করে যেসব বিশেষায়িত সাবজেক্ট রয়েছে, সেখানে নামমাত্র প্র্যাক্টিক্যালের ব্যবস্থা রয়েছে। গবেষণার জন্য যে ধরনের প্র্যাক্টিক্যাল ব্যবস্থা বা গবেষণাগার দরকার, তা নেই। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থীর গবেষণা করার আগ্রহ থাকলেও তা তারা করতে পারছে না। এখন যে নতুন নতুন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে, তাতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ল্যাবরেটরি গড়ে তোলা এবং সেখানে গবেষণা করার সুযোগ করে দেয়ার বিকল্প নেই।
করোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্বজুড়ে ভাইরোলজিস্ট থেকে শুরু করে চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট, কেমিস্ট, দক্ষ ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ানের যে কদর বাড়বে, তা ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন। এ বাস্তবতা সামনে রেখে এখন থেকেই আমাদের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও বায়োসেফটি লেভেল নিশ্চিত করে নিরাপদ ল্যাবরেটরি গড়ে তুলতে হবে। এতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষার্থীরা যেমন গবেষণায় উদ্বুদ্ধ হবে, তেমনি দক্ষ গবেষক ও টেকনিশিয়ান সৃষ্টি হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোর উচিৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারের সাথে যুক্ত হওয়া এবং পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া। এতে বিভিন্ন ভাইরাস এবং রোগ নিয়ে যেমন গবেষণা ও গবেষক সৃষ্টি হবে, তেমনি রোগের ভেকসিন, মেডিসিন ইত্যাদি আবিষ্কারের পাশাপাশি দক্ষ টেকনিশিয়ানও গড়ে উঠবে। ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোকে ওষুধের উপাদানের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চীন ও ভারতের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশে যদি এসব অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রিডিয়েন্টস (এপিআই) তৈরির জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি করা হয়, তবে দেশের অনেক গবেষক ও টেকনিশিয়ান এখানে কাজ করার সুযোগ হবে। এসব গবেষক এবং টেকনিশিয়ান জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারবে। বিশেষজ্ঞ ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে দেশের বাইরেও তাদের কদর বাড়বে। দেশ থেকে এসব জনশক্তিও রফতানির মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করা যাবে।



 

Show all comments
  • তানভীর এলাহী মজুমদার ১৯ জুলাই, ২০২০, ১:০৭ পিএম says : 0
    গতানুগতিক শিক্ষাব্যাবস্থার আমূল পরিবর্তন করে গঠণমূলক ও নৈতিকতার সমন্বয়ে শিক্ষা সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে। থিওরিক্যালের পাশাপাশি প্র্যাকটিক্যাল ও হবে। প্রতিটি পেশায় মানুষের নৈতিক মানের প্রয়োজন রয়েছে। না হলে সামান্য সূযোগে মানুষ তার প্রবৃত্তির তাড়নায় ভিন্ন ভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে মূখস্থবিদ্যার যবনিকাপাত করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন