পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যে পণ্য পরিবহনের বহুল আলোচিত ট্রান্সশিপমেন্ট পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার কলকাতার শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি বন্দর থেকে ১০৮ টি পণ্যের কন্টেইনার নিয়ে এমভি সেজুতি নামে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। জাহাজটি ২০ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবে। কন্টেইনারগুলোর মধ্যে চারটিতে লোহা এবং খাদ্যশস্য রয়েছে। বাকিগুলোর মাধ্যমে ভারত থেকে আমদানিকৃত বাংলাদেশী পণ্য। ভারতের পণ্যবাহী কন্টেইনারগুলো আখাউড়া-আগরতলা স্থলবন্দর দিয়ে ত্রিপুরা ও আসামে পৌঁছানো হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এজন্য বন্দরে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, এই পরীক্ষামূলক ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতীয় পণ্য নিয়মিত পরিবহনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে কবে নাগাদ শুরু হতে পারে, তা নিশ্চিত নয়। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ পরীক্ষামূলক এই ট্রান্সশিপমেন্টকে ভারত-বাংলাদেশের বিদ্যমান সুসম্পর্কের এক নতুন যুগের সূচনা করবে বলে মন্তব্য করেছেন। এই ট্রান্সশিপমেন্টে আমরা একে অপরকে সবদিক দিয়ে সহযোগিতা করব।
ভারতের ব্যাপক আগ্রহে ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করার জন্য সমঝোতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। গত বছরের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুসারে, চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরে ভারতীয় পণ্য খালাসের পর চারটি সড়ক, রেল ও নৌপথে আখাউড়া হয়ে ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে পৌঁছাবে। এসব চুক্তির আলোকেই পরীক্ষামূলকভাবে ট্রান্সশিপমেন্টের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত মার্চে তা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে শুরু হতে পারেনি। ভারতকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রান্সশিপমেন্ট দেয়া নিয়ে অতীতে অনেকে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল, আমাদের বন্দরের স্থানাভাবে এবং পণ্য লোড-আনলোড করার সক্ষমতার অভাব রয়েছে। আমাদের নিজেদের পণ্য লোড-আনলোড করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। এ অবস্থায় ভারতের এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে পণ্য সরবরাহের বিষয়টি বন্দর দুটির সক্ষমতাকে সংকুচিত করবে। যদি বন্দরের সক্ষমতা এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা যায়, সেক্ষেত্রে এ ধরনের ট্রান্সশিপমেন্টের কোনো সমস্যা ছিল না। বলা বাহুল্য, বন্দুত্বের খাতিরে আমরা উদারতার পরিচয় দিয়ে ভারতকে এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিয়েছি। বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদন্ডের বিচারে যে ধরনের শুল্ক ও মাশুল নির্ধারণ করার কথা, তাতেও আমরা ভারতকে যথেষ্ট ছাড় দিয়েছি। প্রসেসিং চার্জ, টন প্রতি পণ্যশুল্ক, সিকিউরিটি, পরিবহন, অন্যান্য প্রশাসনিক চার্জ এবং কন্টেইনার স্ক্যানিং, ইলেকট্রিক লক ও সিলের চার্জের ক্ষেত্রে ন্যূনতম খরচ ধরা হয়েছে। তবে সড়ক পথে পরিবহনের ক্ষেত্রে কোনো ফি ধরা হয়নি। এক্ষেত্রে পণ্য পরিবহনে যেসব ভারি যানবাহন সড়কে চলাচল করবে এবং তাতে যে ক্ষতি হবে, তা সংস্কারের ফি ধরা উচিত ছিল বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। চুক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় পণ্যবাহী কোনো জাহাজ এলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বন্দর ব্যবহারের সুবিধা দেয়া হবে। এমনকি একই সময়ে ভারত ও আমাদের কোনো জাহাজ এলে ভারতের জাহাজকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলে বন্দরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এ বিষয়টিও আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। এতে দেশের পণ্য খালাস ও সরবরাহের প্রক্রিয়া যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাতে সন্দেহ নেই। অথচ প্রক্রিয়াটি হওয়া উচিত আগে নিজেদের পণ্য খালাস করে অন্য দেশের পণ্য খালাসের সুযোগ দেয়া।
বৈশ্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক দেশ থেকে আরেক দেশে পণ্য সরবরাহের বিষয়টি একটি প্রথাসিদ্ধ বিষয়। এতে একতরফা কিছু থাকে না। যৌক্তিক শুল্ক ও মাশুল আদান-প্রদানের মাধ্যমে উভয় দেশই উপকৃত হয়। ভারত-বাংলাদেশের বিষয়টি এক্ষেত্রে ভিন্ন। ভারতকে যে ট্রান্সশিপমেন্ট দেয়া হয়েছে, তা তারই এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে পণ্য আনা-নেয়ার সুবিধার আওতায়। এতদিন ভারত তার ভেতর দিয়ে পণ্য আনা-নেয়া করত। এতে সময় বেশি লাগার কারণে বাংলাদেশকে একটি রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা তার সুবিধার জন্যই করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নামমাত্র শুল্ক সুবিধা ছাড়া বাংলাদেশের তেমন কোনো সুবিধা নেই। তবে বাংলাদেশ বন্ধু দেশ হিসেবে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে যে সুবিধা দিয়েছে, এটা ভারতের জন্য অনেক বড় পাওয়া। এক্ষেত্রে পণ্য আনা-নেয়ার জন্য শুল্ক ও বিভিন্ন চার্জ দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক যে স্ট্যান্ডার্ড রয়েছে, অন্তত দেশটি তা দিতে পারত এবং দর কষাকষির মাধ্যমে বাংলাদেশের তা আদায় করা উচিৎ ছিল। এখনো এ সুযোগ আছে বলে আমরা মনে করি। শুল্ক ও অন্যান্য চার্জ বৃদ্ধির বিষয়টি পুর্নবিবেচনা করা যায়। এতে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং বাংলাদেশ লাভবান হবে। এছাড়া বন্দর ব্যবহারের যে নীতি নির্দিষ্ট হয়েছে, তারও পরিবর্তন হওয়া উচিৎ। বাংলাদেশের পণ্যবাহী জাহাজের অগ্রাধিকার পাওয়া ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত। কোনোভাবেই যাতে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি ব্যাহত না হয় এবং ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।