Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পদ্মার ভাঙ্গনে দক্ষিনে জিরো লাইন বিলীন হচ্ছে, হারাচ্ছে একক আধিপত্য

রাজশাহী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০২০, ১১:০০ এএম

উজানে বর্ষনের ঢল ফারাক্কার গেট গলিয়ে ছুটে আসছে বাংলাদেশের পদ্মায়। অন্যদিকে ভাটিতে যমুনা , তিস্তার পানি ফুলে ফেঁপে ওঠায় পদ্মার পানি নামতে পারছেনা। ফলে একটু একটু করে পানি বাড়ছে পদ্মায়। ইতোমধ্যে বছরের প্রায় আটমাস বালিচরের নীচে চাপা পড়া মরা গাঙ্গে বান ডেকেছে। ঘোলা পানিতে এখন টুইটুম্বর। ভাটির চলতি পথে ছুটে যাবার সময় সমানে দু’পাড় ভেঙ্গে চলেছে। বিশেষ করে দক্ষিন পাড়ে তান্ডব শুরু করেছে। রাজশাহীর উল্টোদিকে দক্ষিন পাড়ে ভাঙ্গনে চলছে। ঘরবাড়ি ফসলের জমি হারিয়েছে পবা উপজেলার খানপুর, চরখিদিরপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। চারঘাট উপজেলা ও বাঘা উপজেলায় বির্স্তীন এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে ভাঙ্গন।
রাজশাহী নগরীর দিকে চোখ রাঙ্গাচ্ছে। শহররক্ষা বাঁধের বুলনপুর অংশে ঝুকিপূর্ন। গত বছর কিছু মেরামতি করে ভাঙ্গন ঠেকানো গেলেও পরবর্তীতে আর কিছু হয়নি। পানি উন্নয়নবোর্ড অবশ্য বলছেন তারা নজর রাখছেন।
অন্যদিকে দক্ষিনে চরখানপুর ও চরখিদিরপুরের মধ্যবর্তী কলাবাগান ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এবং পাঁচশো কিলোমিটার প্রস্তÍ ভূখন্ড গতবার নদীগর্ভে চলে গেছে। এলাকার ১৬৪ নম্বর মেইন পিলার থেকে ১৬৫ নম্বর মেইন পিলার পর্যন্ত বাংলাদেশের ভূখন্ড নদীতে বিলিন হয়ে ভারতীয় সীমানায় মিলেছে পদ্মার পানি। এরপর থেকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে ভারতের মোহনগঞ্জ থেকে এসে বিএসএফ তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। চরখিদিরপুর, খানপুর ছাড়াও দিয়াড় খিদিরপুর, শিবনগর, চরবৃন্দাবন, কেশবপুর, চরতিতামারী, দিয়ার শিবনগরসহ বেশকিছু চরের জমি পদ্মার গর্ভে বিলিন হয়েছে। বাকীটুকু ভাঙ্গতে বসেছে। আর পদ্মার তীর ভেঙ্গে ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করলেই বিএসএফ তাদের দাপট দেখায়। সীমান্ত পিলার নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় ঐসব এলাকায় নদীতে মাছ ধরতে বাংলাদেশী জেলেদের বাধা দেয়া নিত্য ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে।
রাজশাহী পানি উন্নয়নবোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুখলেসুর রহমান বলেন, প্রতিবছর গড়ে পাঁচ থেকে আট হাজার হেক্টর জমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। এতে করে সীমান্তে বাংলাদেশের আধিপত্য কমছে। খানপুর রক্ষার জন্য এর সাথে ১৭৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছিল কিন্তু সরকারী অনুমোদন পাওয়া যায়নি। দক্ষিনপাড়ে পদ্মার এমন ভাঙ্গনে জিরো লাইন বিলীন হচ্ছে। এখন ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পুরো এলাকার একক আধিপত্য হারাবে। এমনটি বলছে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও সাধারন মানুষ। তারা জানায়, পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নে পদ্মার ভাঙনে এরই মধ্যে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে চর তারানগরে ২০০ ঘরবাড়ি, চারটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দ্বিতল আশ্রয় কেন্দ্র, খানপুর বিজিবি ক্যাম্প এবং আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১৬৪ ও ১৬৫ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আর ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চর খিদিরপুরে প্রায় ৪০০ বাড়ি, একটি বিজিবি ক্যাম্প, একটি পাকা দ্বিতল প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁচটি মসজিদ, দুটি মাদ্রাসা, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১৫৯-এর এস-৩, ৪, ৫ নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। এ দুই ওয়ার্ডে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল।

রাজশাহী-১ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের আধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ফেরদৌস জিয়া উদ্দিন মাহমুদ জানান, তারা ভাঙ্গনের মধ্যেও সীমানায় নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার চেস্টা করছেন। আর্ন্তজাতিক নিয়ম মেনে বিজিবি সীমান্তে টহল বাড়িয়েছে। #



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ