বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌরসভার এলাকার ৯নং ওয়ার্ড মর্দানা এলাকায় হাতবোমা বিস্ফোরণে সাইফুদ্দিন (৪৮) নামে একজন নিহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তি হচ্ছে- মর্দানার আইয়ূব বাজার-বামনপাড়ার মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে। মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) রাত ৯টার দিকে মর্দানার পুকুরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বুধবার (১৫ জুলাই) সকালে নিহত সাইফুদ্দিনের ভাই মুকুল বাদি হয়ে শিবগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ। স্থানীয়রা জানায়, একটি প্রাইভেট কার এবং ৬ থেকে ৭টি মোটরসাইকেলের একটি গ্রæপ আইয়ূব বাজার এলাকায় পৌঁছামাত্র ৫-৭টি হাতবোমা বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় সাইফুদ্দিন মারাত্মকভাবে আহত হন। প্রথমে আহত অবস্থায় তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই সাইফুদ্দিন মারা যান। হাসপাতাল পুলিশ বক্সের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর খাইরুল আলম জেম বলেন, আইয়ূব বাজার মোড়ে মমিন ও কেরামত গ্রæপের মধ্যে গরুর ঘাস খাওয়ানোকে কেন্দ্র করে মারামারি হয়েছে বলে শুনেছি। এর বেশি কিছু জানি না। শিবগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান জানান, মর্দানা গ্রামের আইয়ুব বাজার এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রæপের মধ্যে কয়েকটি ককটেল বিস্ফেরণের ঘটনার খরব পেয়ে দ্রæত ঘটনাস্থলে যায়। যাবার আগেই স্থানীয়রা ককটেল বিস্ফেরণে আহত সাইফুদ্দিনকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সোয়া ১২টার দিকে মারা যায় তিনি। বর্তমানে লাশ ওখানেই আছে। সংশ্লিষ্ট থানাপক্ষ ময়নাতদন্তে পাঠানো প্রক্রিয়া চলছে। মামলার প্রক্রিয়াধীন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজনকে আটক করা হয়ছে। ঘটনাটি তদন্ত চলছে ও বাকিদের আটকের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। তবে শিবগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর খাইরুল আলম ওরফে জেম ও আবদুস সালাম গ্রæপের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা বিদ্যমান বলছে এলাকাবাসী। নিহত সাইফুদ্দিনের ভাই তাইফুর রহমান ২০১৭ সালের ৩রা নভেম্বর দুুপুরে নিজ বাড়ির ছাদে বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরণে মারা যান। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিবগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড মর্দানার বামনপাড়ায় তাইফুর রহমান তার বাড়ির ছাদে বোমা বানাতে যায়। সেখানে দুপুর পৌণে ২টার দিকে বোমা বানানোর সময় হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। ওই সময় বিস্ফোরণে তাইফুরের ডান হাতের কব্জি উড়ে যায়, ঝলসে যায় মুখমন্ডল। বিস্ফোরণের শব্দে এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে এবং মানুষ ভীত সন্ত্রন্ত হয়ে পড়ে। পুলিশ সূত্র জানায়, শিবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আবদুস সালামের সমর্থক তাইফুর রহমান বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে ডান হাতের কব্জি উড়ে যায় ও মুখমন্ডল ঝলসে গুরুতর আহত হন। পরে স্বজনরা তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাইফুরের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় তৎকালিন শিবগঞ্জ থানার এসআই ও বর্তমান সদর মডেল থানায় কর্মরত মজিবুর রহমান বাদি হয়ে তাইফুর রহমান, সাইফুদ্দিন ও তার স্ত্রী পারুল বেগমসহ আটজনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ১০/৬৮৫, তারিখ ০৩-১১-২০১৭। ওই ঘটনায় উদ্ধার করা হয় ২ কেজি পাথরের কুচি, কয়েক টুকরা বিস্ফোরিত বোমার পলিথিনের অংশ, লাল কসটেপ ও একটি স্টিলের প্লেট। পুলিশের একটি সূত্র জানায়- নিহত সাইফুদ্দিনের বিরুদ্ধে অস্ত্র, বিস্ফোরকদ্রব্য, নাশকতাসহ শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর থানায় মোট ১১টি মামলা রয়েছে। স্থানীয়রা বলছে- সন্ত্রাসের জনপদ বলে খ্যাত শিবগঞ্জ পৌর এলাকার ৯নং ওয়ার্ড মর্দানা গ্রামে ৫ বছরে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে পাঁচজনের প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়া সন্ত্রাসীরা সহ¯্রাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। গত ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট প্রতিপক্ষের হামলায় মর্দানা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলাম (২৪) নিহত হন। দ্বিতীয় দফায় প্রতিপক্ষের হামলায় একই এলাকার তেতুলিয়া গ্রামের ব্রীজর সামনে আহত হন পানাউল্লাহ (৪০)। দীর্ঘদিন তিনি রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন শেষে বাড়িতে এসে ২০১৭ সালের প্রথম দিকে মারা যান। তৃতীয় দফায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে প্রতিবন্ধীকে (১৮) ধর্ষণ শেষে শ্বাসরোধে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। চতুর্থ দফায় ২০১৭ ৩রা নভেম্বর প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে তাইফুর রহমান তার বাড়ির ছাদে বোমা তৈরির সময় ডান হাতের কব্জি উড়ে যায়, ঝলসে যায় মুখমন্ডল। পরে রামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তাইফুর রহমান। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) রাতে মর্দানার পুকুরপাড়া গ্রামে বোমা বিস্ফোরণে মারা যান সাইফুদ্দিন। ইতিপূর্বে একই এলাকায় একটি বাড়িতে একসঙ্গে হাতবোমা বিস্ফোরণে দুটি ঘরের চালা উড়ে যায়। স্থানীয় লোকজন বলছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বর্তমান কাউন্সিলর খাইরুল আলম ওরফে জেম ও সাবেক কাউন্সিলর আবদুস সালামের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বর্তমানে এলাকায় থম থমে অবস্থা বিরাজ করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।