পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাভাইরাস মহামারীর সাধারণ ছুটি লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব ব্যবস্থা বলবৎ রাখার মধ্য দিয়ে গত ঈদুল ফিতর পালিত হয়। ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত না হলেও দৈহিক দূরত্ব মেনে মসজিদগুলোতে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। তবে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে ঈদের আগে ঢাকার কিছু মার্কেট ও শপিংমল খৃুলে দেয়া হলেও তা জমেনি। কোনো কোনো মার্কেট কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছায় নিজেদের মার্কেট বন্ধ রাখে। ঈদের কেনাকাটার বিকল্প পন্থা হিসেবে অনেকে অনলাইনে কেনকাটার পন্থা অবলম্বন করেন। এখনও অনেকে অনলাইনে কেনাকাটা করছেন। করোনায় যখন সবকিছু স্থবির হয়ে পড়ে, তখন ডিজিটাল মাধ্যমে ঘরে বসে অনেক কিছুই সচল রাখা হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে, করোনান ভীতি, সাধারণ ছুটি ও গণপরিবহণ বন্ধের কারণে স্থবির হয়ে পড়া জনজীবন পুনরায় সচল হতে শুরু করেছে। সামনে ঈদুল আযহা। মানুষ কোরবানি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে পশুর হাট করোনার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য বিশেষজ্ঞরা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের তাকিদ দিয়েছেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রামসহ করোনাভাইরাস হটস্পটগুলোতে কোরবানির পশুর হাট বসানো নিষিদ্ধ করেছে। রাজধানীতে অল্পসংখ্যক স্থানে হাট বসার ব্যবস্থা করা হলেও সিটি করপোরেশন অনলাইনের মাধ্যমে পশু কেনার ব্যবস্থা করেছে। এটি একটি ভাল উদ্যোগ এবং আমরা একে স্বাগত জানাই।
কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাসহ অসংখ্য মানুষ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে হাজির হয়। এবার করোনা মহামারির কারণে এই হাট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত এলাকার থেকে আসা গরুর বেপারি ও খামারীরা ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হলে তা করোনা সংক্রমণকে আরও বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতে পারে। পশুর হাটগুলো করোনার হটস্পটে পরিণত হতে পারে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিশেষজ্ঞরা অনলাইনে পশু কেনার পরামর্শ দিয়েছেন। এ অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পশু কেনার ব্যবস্থা করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন গত ১১ জুলাই অনলাইনে পশু কেনার ব্যবস্থার ঘোষণা দিয়েছে। যারা কিনতে আগ্রহী তারা এর মাধ্যমে পশু কিনতে পারবেন। এমনকি ক্রেতার পছন্দের পশু জবাই থেকে শুরু করে গোশত বাসায় পৌঁছে দেয়ার কথাও সিটি করপোরেশন বলেছে। ফলে অনেকে অনলাইনে পশু কেনায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এ প্রক্রিয়া অভূতপূর্ব ও ব্যতিক্রম হলেও বাস্তবতার আলোকে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। ডিজিটাল পদ্ধতির বিপণন ব্যবস্থা সারাবিশ্বেই একটি ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। করোনা মহামারীতে ঘরবন্দী মানুষ যখন অনলাইনে কেনাকাটাকে বিকল্প পন্থা হিসেবে বেছে নিচ্ছে, তখন এক শ্রেণীর মানুষ যে এই ব্যবস্থায় অস্বচ্ছতা ও প্রতারণার আশ্রয় নেবে না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। ঈদকে কেন্দ্র করে জালিয়াত চক্র যেভাবে টাকার জালনোট ছেপে পশুর হাটে ছেড়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে থাকে, ঠিক একইভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও প্রতারকরা সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেখা যাবে, এক সপ্তাহ বা ঈদের আগ পর্যন্ত অনলাইন পেজ খুলে পশু কেনা-বেচার মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে।
অনলাইন মার্কেটিং, ই-কর্মাস এখন বিশ্ববাস্তবতার অংশে পরিণত হয়েছে। তবে কোরবানির পশু কেনা-বেচার সাথে দেশের প্রান্তিক চাষি, খামারি, গরু ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেক স্বল্পশিক্ষিত, অশিক্ষিত ও নিরক্ষর মানুষ রয়েছে। একইভাবে কোরবানির পশু ক্রেতাদের মধ্যেও তথ্যপ্রযুক্তিতে অদক্ষ-অনভিজ্ঞ সাধারণ মানুষ রয়েছে, যাদের এ সম্পর্কে ভাল ধারণা নেই। ফলে তারা অনলাইন মার্কেটে ভুয়া আইডির মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হতে পারে। অনলাইনে বিদেশে বসে পশু কেনার সুযোগ থাকায় প্রবাসীদের প্রতারণার শিকার হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিটিআরসিকে উদ্যোগ নিতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের দেশে অনলাইন মার্কেটিংয়ে কিছু অস্বচ্ছতা ও প্রতারণা শুরু থেকেই আছে। ছবিতে একরকম পণ্য দেখিয়ে নিম্নমানের ভিন্ন পণ্য সরবরাহ করার মাধ্যমে এই প্ল্যাটফর্মকে আস্থাহীন করে তোলার অপতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অথেনটিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং ডিজিটাল লেনদেনের বিশ্বস্ত ব্যবস্থাগুলো কাজে লাগাতে হবে। অনলাইনে পশু কেনা-বেচার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে পত্র-পত্রিকা ও গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে পশু কেনায় যেমন উদ্বুদ্ধ করতে হবে, তেমনি প্রতারণার হাত থেকে রেহাই পেতে সতর্ক ও সচেতন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে। পশুর হাটে প্রতি বছরই শত শত কোটি টাকার লেনদেন হয়। অনলাইনে পশু কেনা-বেচার ব্যাপারে আগে থেকে সচেতন করা না হলে দেখা যাবে প্রতারক চক্র সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে। শুধু কোরবানির পশুর হাটের জন্যই নয়, ই-কমার্স এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে আস্থাপূর্ণ, স্থিতিশীল ও নিরাপদ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।