Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বর্হিবিশ্বে দেশের ইমেজ পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০২০, ১২:০২ এএম

করোনা ভাইরাসের ভুয়া রিপোর্টের কারণে বিদেশের বিমানবন্দরে আটকে যাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। ঢাকা থেকে নেগেটিভ সনদ নিয়ে যাওয়া যাত্রীরা সংশ্লিষ্ট দেশে পৌঁছানোর পর করোনা টেস্টে পজিটিভ হওয়ায় তাদের আর সে দেশে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এর ফলে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলো ঢাকার সাথে ফ্লাইট চলাচলও বন্ধ করে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে বিমানবন্দরে করোনা পজেটিভ শনাক্ত হওয়ায় ইটালি গমনেচ্ছু ১৪৭ প্রবাসীকে দেশটির বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিমানকে ‘ভাইরাস বোমা’ আখ্যা দিয়ে ফ্লাইট চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ঢাকার সাথে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ অন্যান্য দেশও বাংলাদেশের বিমান যোগাযোগকে এড়িয়ে চলছে। যুক্তরাজ্য বিশ্বের ৭০টি দেশ থেকে কঠোর কোয়ারিন্টাইন আইন তুলে নিলেও এ তালিকায় বাংলাদেশ নেই। যুক্তরাষ্ট্রও সেখানে পড়াশোনারত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের এখন ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, প্রায় পুরো বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার তো বটেই, বর্হিবিশ্বে দেশের মানসম্মান ও ভাবমর্যাদাও মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। বিশ্লেষকরা এর দূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা করছেন। এর মূল কারণ, বাংলাদেশী যাত্রীদের করোনা টেস্টের ভুয়া নেগেটিভ সনদ। এই সনদই প্রবাসীদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

করোনার ভুয়া নেগেটিভ সনদের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের যাত্রীরা অনেকটা অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটা বর্হিবিশ্বের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং অনেকটা একঘরে হয়ে যাওয়ার মতো দাঁড়িয়েছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, দেশে সঠিকভাবে করোনা টেস্টের বিষয়টি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি। র‌্যাবের অভিযানে নমুনা না নিয়ে কিংবা নমুনা নিয়ে ফেলে রেখে টাকার বিনিময়ে মনগড়া রিপোর্ট দেয়ার প্রমাণের বিষয়টি মুহূর্তেই সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। পড়ারই কথা, কেননা প্রত্যেকটি দেশই করোনাক্রান্ত দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতির ওপর তীক্ষ্ন নজর রাখছে। যখন তারা দেখছে, করোনা নেগেটিভ হওয়ার জাল সনদ বিক্রি হচ্ছে, কিংবা নমুনা না নিয়েই সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছে, তখন সে দেশের নাগরিকদের ঢুকতে না দেয়াই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগ আছে এমন প্রতিটি দেশ ও এয়ারলাইন্স এখন করোনা টেস্ট নিয়ে ঢাকায় কি হচ্ছে তার ওপর কঠোর দৃষ্টি রাখছে। কিছু অসাধু, অসৎ, দুর্নীতিবাজ এবং লোভী মানুষের কারণে দেশের বড় ধরনের ক্ষতি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বলা বাহুল্য, কোভিড হাসপাতাল হিসেবে স্বীকৃত রিজেন্ট হাসপাতালের ভুয়া সনদই এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এখানের সনদ নিয়েই ইটালিতে গিয়ে প্রবাসীরা বিপাকে পড়ে এবং দেশে ফিরতে বাধ্য হয়। পাশাপাশি সারাবিশ্বে এই বদনাম ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে হাসপাতালটির দোষ তো অমার্জনীয়, একইসঙ্গে এর দায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওপরও বর্তেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনাকালে দেশের সার্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা কতটা নাজুক তা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় যে এ খাতটি যথাযথভাবে প্রস্তুত নয় বা ছিল না, তা বোঝা গেছে। অনেক আগে থেকেই এ খাতের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে লেখালেখি হলেও তা সংস্কার এবং যুগোপোযোগী করার কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। করোনার এক ধাক্কায় এর নাজুক পরিস্থিতি খোলা বইয়ের মতো হয়ে গেছে। এটা কি ভাবা যায়, দেশের দুই-তৃতীয়াংশ বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বিনা লাইসেন্সে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে! অনেক বেসরকারি হাসপাতাল রোগীকে চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে! এর মধ্যে করোনাকে কেন্দ্র করে যেসব অনিয়ম, দুর্নীতি, নকল ওষুধের বিস্তার ও অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা কোনোভাবেই ব্যাখ্যা করা যায় না। স্বাস্থ্যব্যবস্থার এই দৈন্যদশার লাগাম যেন টেনে ধরা যাচ্ছে না। স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে যখন অসহায় হয়ে বলতে হয়, ওষুধ প্রশাসন তার কথা শোনে না, তখন বুঝতে বাকি থাকে না এ খাতটি এখন কোন পরিস্থিতিতে রয়েছে। এর সার্বিক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এখন দেশ ছেড়ে বর্হিবিশ্বেও পড়ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্হিবিশ্বে দেশের ভাবমর্যাদা দ্রæত ফিরিয়ে আনতে করোনা টেস্টে যে গলদ দেখা দিয়েছে, তা দ্রুত নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। তা নাহলে, এর প্রতিক্রিয়া শুধু প্রবাসীদের ওপর পড়বে না, দেশের বিনিয়োগ ব্যবস্থার ওপরও পড়বে। বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়ে বিনিয়োগে নিরুৎসাহী হবে। দেশের অর্থনীতির জন্য তা হবে বড় ধরনের অভিঘাত। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন সঠিকভাবে পালন না করলে দেশ বিপদে পড়বে। টেস্টিং নিয়ে যে গলদ, তা দূর না করলে কোনো দেশই বাংলাদেশের সাথে যোগোযোগের ঝুঁকি নেবে না। দেশের ভাবমর্যাদা ফিরিয়ে আনা ও সম্ভাব্য সংকট থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক উদ্যোগ নেয়া এখন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। করোনা টেস্টকে প্রশ্নমুক্ত ও বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য করে তোলার বিকল্প নেই। তা নাহলে, বড় ধরণের নিষেধাজ্ঞায় পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমরা মনে করি, করোনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী দেশের যে ইমেজ সঙ্কট দেখা দিয়েছে, তা পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ নেয়া জরুরি। এ নিয়ে একটি ইমেজ পুনরুদ্ধার কমিটি গঠনের মাধ্যমে কাজ শুরু করা যেতে পারে। তাহলে সবক্ষেত্রেই একটি ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হবে। করোনা টেস্টের সনদ নিয়ে বিদেশগামীরা যে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, এ থেকে পরিত্রাণে সরকার তাদের নমুনা পরীক্ষার জন্য কয়েকটি জায়গা নির্ধারণ করতে পারে। পরীক্ষার এ রিপোর্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাত্রীর পাশাপাশি ইমিগ্রেশন ও বিমান সংস্থার হাতে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে। এটি করলে চলমান ইমেজ সংকট থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ তৈরি হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন