মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
নেপালের কেবল টিভি অপারেটররা দূরদর্শন ছাড়া ভারতীয় সব নিউজ চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে। এ বিষয়ে অবশ্য কোনও সরকারি আদেশ জারি করা হয়নি। নেপালের চ্যানেল অপারেটর মেগা ম্যাক্স টিভির ধ্রুব শর্মা গত বৃহস্পতিবার এএনআইকে নিশ্চিত করেছেন, তারা এদিন সন্ধ্যা থেকে ভারতীয় চ্যানেলগুলির সঙ্কেত বন্ধ করে দিয়েছেন।
প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির (এনসিপি) মুখপাত্র নারায়ণ কাজি শ্রেষ্ঠার নেপালের মাল্টি-সিস্টেম অপারেটর (এমএসও) এ পদক্ষেপের কয়েক ঘণ্টা পরে বলেছে যে, ভারতীয় মিডিয়া অবশ্যই নেপাল সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির বিরুদ্ধে ‘ভিত্তিহীন প্রচার’ বন্ধ করবে।
বৃহস্পতিবার টুইটারে শ্রেষ্ঠা কিছু ভারতীয় মিডিয়া চ্যানেল নেপালের বর্তমান সরকারের যেভাবে বদনাম করে চলেছে, তা নিয়ে তার হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন। গত মে মাসে কাঠমান্ডু ভারতীয় ভূখন্ডে কিছু অংশকে সমন্বিত করে একটি নতুন মানচিত্র জারি করার পরে ভারত ও নেপালের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে এ পদক্ষেপ এসেছে।
গত বৃহস্পতিবার নেপাল সরকারের মুখপাত্র যুবরাজ খতিওয়াদা ভারতীয় সংবাদ চ্যানেলে প্রধানমন্ত্রী ওলিকে নিয়ে ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘অপমানজনক’ সংবাদ প্রচারের জেরে আইনি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই বন্ধ করে দেয়া হয় বেশ কিছু ভারতীয় চ্যানেল।
যদিও নেপাল সরকার বলছে, তাদের এখতিয়ার থাকলেও এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনও নির্দেশনা দেয়া হয়নি। দেশটির ক্যাবল অপারেটররা স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজেরাই ভারতীয় চ্যানেলের প্রচার বন্ধ করে দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার যুবরাজ খতিওয়াদা বলেন, ‘আমাদের দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন এবং নেপালি জনগণের জাতীয়তা, সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ভারতীয় গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পূর্ণ অধিকার রয়েছে সরকারের। আমরা তাদের এ ধরনের সংবাদ প্রচার না করতে আহ্বান জানিয়েছি’।
নেপালি গণমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, স¤প্রতি ভারতীয় সংবাদ চ্যানেল জি নিউজে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেশটিতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত হৌ ইয়ানকির সম্পর্কের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর খবর প্রচার করা হয়েছে। চ্যানেলটি কোনও ধরনের প্রমাণ উপস্থাপন ছাড়াই ১৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে নানা ভিত্তিহীন অভিযোগ প্রচার করেছে। এ নিয়ে নেপালের সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই প্রোপাগান্ডা প্রচারের জন্য ভারতীয় চ্যানেলের স¤প্রচার বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
যেসব কারণে স¤প্রচার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত
ভারত নিজেদের বলে দাবি করে, এমন বিতর্কিত ভ‚খÐ কালাপানি আর লিপুলেখকে নেপাল নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করার পর দু’দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়। আর এরপরই ভারতের সংবাদ মাধ্যমগুলো আপত্তিকর সংবাদ প্রকাশ করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন নেপালের কেবল অপারেটররা।
ডিটিএইচ সেবাদানকারী দিশোম-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুদীপ আচার্য মন্তব্য করেন, নেপালের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে খবর প্রচার করার বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ হলো অপারেটদের ভারতীয় চ্যানেল বর্জন। মেরো টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকাশ ঘিমিরে জানান, গত দুই-তিন মাস ধরে গ্রাহকদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তারা ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মি. ঘিমিরে এ বিষয়ে আরও মন্তব্য করেছেন যে, নেপালের চ্যানেল যদি ভারত সম্পর্কে ‘অসহ্য খবর’ প্রচার করে, তাহলে ভারতেরও উচিত নেপালের চ্যানেল নিষিদ্ধ করে দেয়া।
তবে আপাতত অনির্দিষ্টকালের জন্য স¤প্রচার বন্ধ করলেও এ বিষয়ে সরকারের সাথে আলোচনার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করেন নেপালের কেবল অপারেটররা। ম্যাক্স টিভির চেয়ারম্যান দিনেশ সুবেদি জানান, শুক্রবার কেবল অপারেটরদের নিজেদের মধ্যে বৈঠকে এই বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে।
আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেপালের
ভারতের টিভি চ্যানেলের ‘আপত্তিজনক’ খবর প্রচারের প্রেক্ষিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেছে দিল্লিতে নেপালি দূতাবাস। দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক, এ দু’ভাবেই এই বিষয়টি কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করেছি’। বিবিসিকে ঐ কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারত সরকারও বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে এবং তারাও মনে করে যে প্রচার করা খবর আপত্তিকর’।
ভারত-নেপাল সা¤প্রতিক বিরোধ
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ৮ মে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চীনের তিব্বত সীমান্তের কাছে লিপুলেখের সাথে সংযুক্তকারী ৮০ কিলোমিটার লম্বা একটি রাস্তা উদ্বোধন করেন। রাস্তাটি উদ্বোধনের সাথে সাথে নেপাল প্রতিবাদ জানায়, যে এলাকার মধ্য দিয়ে এই রাস্তা নেয়া হয়েছে তার অনেকটাই তাদের। কোনো কথাবার্তা ছাড়াই এই জায়গার ভেতর দিয়ে ভারতের এ রাস্তা তৈরি তারা কখনই মানবে না। নেপাল একই সাথে ঐ অঞ্চলের কাছে তাদের পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করে, আর কাঠমান্ডুতে ভারতীয় দূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানায়।
তারপর ভারতের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে নেপালের সংসদের নিম্নকক্ষ দেশের নতুন একটি মানচিত্র অনুমোদন করে, যেখানে কালাপানি নামে পরিচিত প্রায় চারশ’ বর্গকিলোমিটারের ঐ পাহাড়ি এলাকাটিকে তাদের এলাকা বলে দেখানো হয়।
এক সময়ে ঐতিহাসিকভাবে ভারতের অনুগত হিসেবে পরিচিত ক্ষুদ্র এই প্রতিবেশীর এসব প্রতিক্রিয়ায় ভারতে একাধারে বিস্ময় এবং উদ্বেগ তৈরি হয়। সূত্র : এএনআই ও বিবিসি নেপালি সার্ভিস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।