মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিপুল সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছেন। এসব বিশ্ববিদ্যালয় যদি আসন্ন শিক্ষাবর্ষে শুধু অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে এসব শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে। সোমবার দেশটির কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
গত সোমবার ৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’ (আইস) এ নির্দেশ জারি করে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরতরা এ নির্দেশ অমান্য করলে তাদেরকে গ্রেফতারের মুখোমুখি হতে হবে। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী গ্রেফতারের পর সকলকে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
করোনাভাইরাস মহামারির ফলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই অনলাইন কোর্সের দিকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু এখন কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত তাদের বিস্মিত করেছে।
এর আগে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে থেকেই তাদের আগামী বসন্ত ও গ্রীষ্মকালীন কোর্স অনলাইনে করার অনুমতি দিয়েছিল স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম (এসইভিপি)। তবে সোমবার নতুন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)। এতে এ ধরনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর শরৎকালীন সেমিস্টারের জন্য সম্পূর্ণ অনলাইনে থাকা স্কুল বা প্রোগ্রামগুলোতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভিসা দেবে না। মার্কিন শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা কর্তৃপক্ষও এই শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেবে না।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের যাবতীয় কোর্স অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্তের দিনই শিক্ষার্থীদের দেশত্যাগ সংক্রান্ত এ নির্দেশনা জারি করে কর্তৃপক্ষ। তবে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-এর এমন নির্দেশনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ল্যারি ব্যাকাউ।
ল্যারি ব্যাকাউ বলেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-এর জারি করা নির্দেশনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিশেষত অনলাইন প্রোগ্রামগুলোর শিক্ষার্থীদের দেশ ছাড়ার ঘোষণার ব্যাপারে উদ্বেগ রয়েছে। এটি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি জটিল সমস্যা।
তিনি বলেন, আমাদের ছাত্ররা যাতে বছরের মধ্যবর্তী সময়ে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য না হয়, তাদের একাডেমিক অগ্রগতি যেন ব্যাহত না হয় এবং এ ধরনের ভীতি ছাড়াই যাতে তারা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে তা নিশ্চিতকল্পে সাধ্যমতো আমাদের যাবতীয় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।
বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ২৫টি দেশের একটি যেসব দেশের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেয়। গত শিক্ষাবর্ষে এ সংখ্যা পাঁচ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করছে সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি।
ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে মার্কিন অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অবদান ছিল প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী হচ্ছে চীনের। এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে এই আদেশ কার্যকর হলে কত সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে দেশে ফিরে যেতে হবে তার কোন পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। ওয়াশিংটন দূতাবাসের মিনিস্টার কাউন্সিলর হালিবুত রহমান বলেছেন, তাদের কাছে কোন পরিসংখ্যান নেই যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যায়নত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের। তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি কোন কোন বাংলাদেশি পত্রিকায় ৭ হাজার ৮ জনের কথা লেখা হয়েছে। কিন্তু এই তথ্য আমাদের না।’ এ দিকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের এসোসিয়শেনের দেওয়া তথ্যে ভিত্তিতে এই সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনার তাণ্ডব শুরুর পর গত ২২ মার্চে থেকেই সবকিছু লকডাউনে গেছে। জুন পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ক্লাস নেওয়া হয় অনলাইনে। এমনকি যারা ক্যাম্পাসের পরমিটরিতে বা আবাসিক হলে ছিলেন, তারাও ক্লাস করেছেন অনলাইনে। সেপ্টেম্বরে শুরুতে নতুন শিক্ষাবর্ষেও ক্লাসে উপস্থিত হবার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, গত কয়েক সপ্তাহে ৫০ স্টেটের মধ্যে অন্তত: ৩৬টিতেই উদ্বেগজনক হারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। অনেক স্টেট ও সিটি মধ্য জুনে লকডাউন শিথিল করেছিল, সেসব স্টেট ও সিটি আবারও আংশিক লকডাউনে ফিরে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসতে পারবে বলে মনে করছেন না কেউই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।