Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লাদাখে সেনা সরাতে সম্মতি, কূটনৈতিক বিজয় চীনের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০২০, ৫:৪৩ পিএম

লাদাখ সীমান্তে ভারত এবং চীন দুই পক্ষই সেনা সরাতে সম্মত হয়েছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে দুই পক্ষই সেনা সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি স্থায়ী সমাধান হবে? উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লাভবান হলো কোন পক্ষ?

১৫ জুন রাতে গালওয়ানের ১৪ নম্বর পেট্রল পয়েন্টে সংঘর্ষ হয় দুই দেশের সেনার। মৃত্যু হয় ২০ জন ভারতীয় সেনার। চীনের দিকের হতাহতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট করেনি পিপলস লিবারেশন আর্মি। সেই ঘটনার পরে ফের চুসুলে দুই দেশের কোর কম্যান্ডার স্তরের বৈঠক হয়েছে। প্রায় ১১ ঘণ্টা ধরে সেই বৈঠক চলে। তার কয়েক দিনের মধ্যেই ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তথা স্পেশাল রিপ্রেসেনটেটিভ ওয়াং ই-র ২ ঘণ্টার বৈঠক হয়। তার আগে ওয়াং ই-র সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকরেরও বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি। অজিত ডোভালের সঙ্গে স্পেশাল রিপ্রেসেনটেটিভ হিসেবে বৈঠক করেছেন ওয়াং ই। তার পরেই ৬ জুলাই ভারত এবং চীন দুইটি বিবৃতি প্রকাশ করে। সেনা সরানোর কথা সেখানে বলা হয়নি। তবে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা যে কমা প্রয়োজন তা উল্লেখ করেছে দুই দেশই।

ভারতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কথা মাথায় রেখে স্টেটাস কো মেনে চলতে হবে। এর অর্থ হলো, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা এবং বাফার জোন থেকে অন্তত এক কিলোমিটার দূরে সেনা সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কাঠামোও ভেঙে ফেলতে হবে। একই সঙ্গে ভারতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সুম্পর্ক বজায় রাখার জন্য সীমান্তে উত্তেজনা কমানো জরুরি। চীনের বিবৃতিতেও উত্তেজনা প্রশমনের কথা বলা হয়েছে। তবে চীন বলেছে, দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে সীমান্তে উত্তাপ কমানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সূত্র জানাচ্ছে, দুই দেশই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা এবং বাফার জোন থেকে আটশো থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে সৈন্য পিছিয়ে নিতে শুরু করেছে। পরবর্তী কম্যান্ডার স্তরের বৈঠকে এর পরের পদক্ষেপ স্থির হবে। কী সেই পদক্ষেপ?

এটাই সব চেয়ে বড় প্রশ্ন। ভারতের দাবি গালওয়ান অঞ্চলে বাফার জোনে চীন কাঠামো তৈরি করেছিল। উপগ্রহ চিত্রেও তা ধরা পড়েছে। আপাতত সেই কাঠামো চীন সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু প্যাংগং, গোগরা হট স্প্রিং কিংবা ডেপসংয়ে কী হবে? উদাহরণ স্বরূপ প্যাংগংয়ের কথাই ধরা যাক। ভারতের দাবি, প্যাংগংয়ের ফিঙ্গার পয়েন্ট আট পর্যন্ত ভারতের। চীনের দাবি ফিঙ্গার পয়েন্ট চার পর্যন্ত তাদের। সূত্র জানাচ্ছে, ফিঙ্গার পয়েন্ট চার থেকে চীন সৈন্য সামান্য পিছিয়ে নিয়েছে। কিন্তু পাঁচ থেকে আট পর্যন্ত অঞ্চল যদি চীনকে ছেড়ে দিতে হয়, তা হলে একাধিক কাঠামো ভাঙতে হবে। ডেপসংয়ের ক্ষেত্রেও বিষয়টি অনেকটা একইরকম। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চীন কি তা করবে? যদি করে, তা হলে তা ভারতের বড় কূটনৈতিক জয় হবে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, চীনের বিবৃতিতে যে ইঙ্গিত রয়েছে, তাতে তারা তা করবে বলে মনে হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে বাস্তব প্রেক্ষাপটে এটাকে আপাতত চীনের কূটনৈতিক জয় বলেই ধরতে হবে বলে মনে করছেন অনেকে। তাদের বক্তব্য, কেবল গালওয়ান ধরে লাদাখ সংকট দেখলে ভুল হবে। আলোচনায় রাখতে হবে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার সীমান্তের গোটাটাই। অরুণাচল বিতর্কে ভারত যেমন কূটনৈতিক ভাবে এগিয়ে আছে, লাদাখের বর্তমান পরিস্থিতিতে চীনও তেমন খানিকটা এগিয়ে থাকলো বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা।

তবে পুরোটাই নির্ভর করছে, দুই দেশ ফিঙ্গার পয়েন্টগুলি থেকে এবং ডেপসং থেকে সেনা কতটা সরায় তার ওপর। চীনের সেনা সরে গেলে ভারতের জয় হবে। তা না করলে চীন এগিয়ে থাকবে। একই সঙ্গে আরও একটি কথা বলা দরকার। ভারত-চীনের সীমান্ত সমস্যা এক দিনের নয়। ৬ জুনের বৈঠকে শান্তি প্রস্তাবের পরেও রক্তপাত হয়েছিল। সংঘাত চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়। ফলে উত্তাপ কমে গিয়েছে, এমনটা এখনই বলা যাবে না। আর যে রফা হয়েছে, তা স্থায়ী নাও হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত-চীন

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ