পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পতন হয়েছে ফরিদপুরের দুই ভাই শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের অব্যহতিপ্রাপ্ত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের ত্রাসের সাম্রাজ্যের। জেলার একজন প্রভাবশালী এমপির ছত্রছায়ায় অবৈধ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল এ দুই ভাই। টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, মাদক-অস্ত্র ব্যবসা, জমি দখল, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর দখলসহ এমন কোন অপকর্ম নেই যা করতো না এই দুই ভাই। জেলা আওয়ামী লীগের কর্মকাÐ নিয়ন্ত্রণ করতো বরকত। ত্যাগী ও দলের নিষ্ঠাবান নেতাদের বিতাড়িত ও কোনঠাসা করাই ছিল বরকতের কাজ। স্বাধীনতা বিরোধী পরিবার, বিএনপি, জামায়াতের লোকদের ভিড়িয়ে খোদ আওয়ামী লীগের কর্মীদের বিতাড়িত করেছে। জেলার অনেক নেতাই এলাকায় যেতে পারতেন না, এলাকা ছেড়ে ঢাকায় থাকতে বাধ্য হয়েছেন।
আর ছোট ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেল তো রীতিমত জেলার প্রেসক্লাব দখল করে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করেছেন। হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন এক সময়ের পরিবহন শ্রমিকের কাজ করা এ দুই ভাই। দুই ভাইয়ের গ্রেফতারের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের কোনঠাসা নেতারা।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, এমনটা হতে পারে তা আমরা কল্পনাও করিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণে পরিত্রাণ পেয়েছে ফরিদপুর আওয়ামী লীগ। ত্যাগী নেতাকর্মীরা দল ক্ষমতায় থাকতে কোনঠাসা ও বিতাড়িত ছিল। আমরা কাউকে কিছু বলতে পারিনি। অনেকে সহ্য করতে না পেরে ঢাকায় বসবাস শুরু করেছিলেন। এখন আমরা মুক্ত হলাম।
তিনি বলেন, এই জেলায় স্বাধীনতা বিরোধী পরিবার, বিএনপি জামায়াত থেকে অনুপ্রবেশকারীদের কারণে এতটাই দুর্বল ছিলাম আমরা যা কখনো ভাবতেই পারবে না কেন্দ্র বা অন্য জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আবারও আওয়ামী লীগের ত্যাগীরা রাজনীতি করার সুযোগ পাবে বলে আমরা আশাবাদী।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ ও ছত্রছায়া দানকারী সেই প্রভাবশালী এমপির সঙ্গে সাম্প্রতিক বিরোধের কারণে দুইভাই বরকত ও রুবেলের পতন হয়েছে। এক্ষেত্রে জেলা পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান শক্তিশালী ও সাহসী ভ‚মিকা পালন করেছেন। গত ৭ জুন রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলা মামলার আসামি হিসেবে শহরের বদরপুরসহ বিভিন্ন মহল্লায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ বরকত, রুবেলসহ নয়জনকে গ্রেফতার করে। ১ জুলাই ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেনের বাড়ি থেকে ডলার চুরির মামলায় বরকত এবং একটি চাঁদাবাজির মামলায় তার ভাই রুবেলকে এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। এখন তারা জেলে আছেন। এছাড়া ঢাকার কাফরুল থানায় দুই হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের মামলা করেছে সিআইডি।
২০১৯ সালের ১ মে থেকে দুই ভাইয়ের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান চালায় দুদক। এরপর অনেকবার জিজ্ঞাসাবাদও করেছে তাদের। অপকর্মের কারণে পত্রিকার পাতার হেডলাইন হয় এই দুইভাই। কিন্তু প্রভাবশালী সেই এমপির কারণে বেঁচে গেছে বাড়ে বাড়ে।
দুই ভাইয়ের উত্থান : বরকত ও রুবেলের বাবা আবদুস সালাম মন্ডল ছিলেন বিএডিসির চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। অভাবের সংসারের কারণে পড়ালেখা বেশিদূর করতে পারেননি তারা। এরশাদ সরকারের সময়ে শহরের রাজবাড়ী মোড়ে পরিবহনে চাঁদা উঠাতেন দুই ভাই।
’৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে পরিচয় হয় স্থানীয় বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে। এরপর থেকে ওই নেতার ঘনিষ্ঠ হিসেবে কাজ শুরু করেন। ওই সময় কোমরপুর এলাকার জাকির নামের এক যুবকের দুই হাত কেটে প্রথম আলোচনায় আসেন দুই ভাই। পরে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন খোকনকে হত্যার অভিযোগ উঠে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে। মামলা হয় তাদের বিরুদ্ধে। আসামি করা হয় ১ ও ৩ নম্বর। এরপর গ্রেফতার এড়াতে গা-ঢাকা দেন তারা। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিহত খোকনের বাড়িতে যান সমবেদনা জানাতে। অভিযোগ রয়েছে অদৃশ্য ইশারায় পার পেয়ে যান এই দুই ভাই। হত্যা মামলার রায়েও খালাস পান তারা। ফের প্রকাশ্যে এসে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ক্ষমতার পালা বদলে তারা ভিড়েন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। সান্নিধ্যে আসেন ফরিদপুর আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতার। এরপরই ভাগ্য খুলে যায় দুই ভাইয়ের। জড়িয়ে পড়েন টেন্ডারবাজিতে। দুই ভাইয়ের টেন্ডারবাজির কারণেই এলজিইডি অফিস ঝিলটুলী থেকে তাদের নিজবাড়ি বদরপুরে স্থানান্তর করার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ওই সময় জেলা যুবদল নেতা আফজাল হোসেন খান পলাশ মামলাও করেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো পলাশকে একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। একসময় ফরিদপুরের টেন্ডারবাজির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন দুই ভাই। এলজিইডির সব টেন্ডারে নির্ধারিত ভাগ দিতে হয় তাদের। ওদিকে টেন্ডারবাজির পাশাপাশি মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি করেন আলাদা সিন্ডিকেট। তাদের মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেন ভাগিনা সিদ্দিক ও জুয়েলকে। একধিকবার সিদ্দিক ও জুয়েল অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার হন।
এই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি দখল ও নির্যাতনের। শহরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের দক্ষিণ পাশে অরুণ গুহ নামে এক ব্যক্তিকে নির্যাতনের মাধ্যমে বিশাল বাড়ি দখল করে নেন তারা। পরে বাড়ির পাশে প্রধান কালী মন্দিরটিও ভেঙে জায়গাটি দখল করে নেন। বাড়ি দখলের প্রতিবাদে ২০১৬ সালে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ব্যানারে মানববন্ধন করার কারণে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আলোক সেনকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তিনি এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি।
দুই ভাইয়ের অঢেল সম্পদ : স্থানীয়রা জানান, দুই ভাইয়ের নেশা জমি করার। যেখানে যেভাবে পারেন অন্যের জমি নিজেদের কব্জায় নেন। বরকতের সম্পদের যতটুকু খোঁজ পাওয়া গেছে তার মধ্যে রয়েছে- ঝিলটুলী এলাকায় ১০তলা বাড়িসহ ১০ শতাংশ জমি, ধুলদিতে পাথর ভাঙা কারখানাসহ ১৫ একর জমি, চন্ডিপুরে ১০ একর জমি, সিবরামপুরে ৩ একর জমি, চন্ডিপুরে পাম্পসহ ২ একর জমি, গঙ্গাবর্দিতে ২ একর জমি, বোয়ালমারীতে ১৫ শতাশ জমি, নর্থ চ্যানেলে ৩৩ একর জমি, বদরপুরে ১ একর ৫০ শতাংশ জমি। অভিযোগ উঠেছে, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ওয়ারলেছ পাড়ার মিজান চৌধুরী ও জামানের ১ একর ৪ শতাংশ জমি লিখে দিতে বাধ্য করেন বরকত। এছাড়া রুবেলের রয়েছে ঝিলটুলী টেলিগ্রাম অফিসের সামনে ৪৫ শতাংশ, জনতা ব্যাংকের মোড়ে ৫.৫ শতাংশ, মুন্সীবাজারে ৩ একর, বাইপাসে ১৫ একর, ব্রাহ্মণকান্দায় ১০ একর, পাট গবেষণা কেন্দ্রের পাশে ৬ একর, চন্ডিপুরে ইট ভাটাসহ মাচ্চরে ১১ একর, মাচ্চর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে ৬ একর, চন্ডিপুর বাবু বাড়ির পাশে ২ একর, নর্থ চ্যানেলে ১০০ একর, ধুলদিতে ১৫ একর, রাজবাড়ি রাস্তার মোড়ে ১ একর ৫০ শতাংশসহ মোট ১৮২ একর জমি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা, দিনাজপুর, গাজীপুর, সাতক্ষীরায় রয়েছে তাদের জমি, ফ্ল্যাট বাড়ি, চা বাগান, মাছের ঘের। গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, মহাখালী ডিওএইচএস ও সেগুনবাগিচায় রয়েছে একাধিক অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট। বিএমডবিøউ, হ্যারিয়ার, লেক্সাসসহ মোট ৫টি অত্যাধুনিক গাড়ি ব্যবহার করেন তারা। সাউথ লাইন পরিবহনে রয়েছে ৬০টি বাস। রয়েছে অসংখ্য ট্রাক-ভেকু। এছাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আবাসিক হোটেল, চরে রয়েছে কলা ও মাল্টার বাগান, একাধিক পেট্রোল পাম্প, ইটভাটা, রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে ব্যক্তিগত ২টি অফিস, বাইপাসে অসংখ্য দোকান। ফরিদপুর নিউ মার্কেটে রয়েছে ৪৪টি দোকান। সুইডেন, দুবাই ও মালয়েশিয়ার তাদের সম্পত্তি রয়েছে বলেও অভিযোগ এসেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।