মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিচ্ছিন্ন ও স্বজাতিকেন্দ্রিক হিসাবে খ্যাতি সত্তে¡ও জাপান বৈশ্বিক রাজনীতির বাইরে থেকে দেখিয়েছে যে, ব্যাপক নেতিবাচক গণ-প্রতিক্রিয়া ছাড়াই বর্ধিত অভিবাসন সম্ভব। নতুন অভিবাসন নীতিমালার একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হ’ল, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইন্সের মতো দেশগুলোর সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির খসড়া করেছে জাপান, যা দেশগুলোকে বার্ষিক কয়েক হাজার সেবাকর্মী প্রেরণের সুযোগ দেবে। উভয় দেশই এটিকে একটি পাস্পরিকভাবে লাভজনক প্রস্তাব হিসাবে দেখছে। জাপান তার প্রয়োজনীয় শ্রমের যোগান পাবে, ফিলিপাইনে বিদেশী রেমিটেন্স বৃদ্ধি পাবে এবং অনেক শ্রমিক নতুন ধরনের মূল্যবান দক্ষতা শিখে এক সময় দেশে ফিরে যাবে।
অবাক করার মতো হলেও সত্যি যে, এই আইনটির পক্ষে সব থেকে শক্তিশালী সমর্থনটি সংসদের সর্বাধিক রক্ষণশীল অংশ থেকে এসেছিল এবং এতে সব থেকে বেশি আপত্তি করেছিল মূলত আবের বিরোধী দল। কারণ তাদের আশঙ্কা, নিয়োগকর্তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণের অভাব কর্মীদের ওপর শোষণ ঘটাতে পারে। অনেক বিদেশী কর্মী ইতোমধ্যে ওভারটাইম কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন, কম বেতন পান এবং তাদের পাসপোর্ট এবং ভ্রমণের দলিল নিয়োগকারীদের হাতে বাজেয়াপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ফিলিপাইন্সের গৃহকর্মী ও সেবা কর্মীরা নিয়মিতভাবে মক্কেলদের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগ করেন, যারা তাদের উপরে থুথু দেয়, তাদের মারধর করে এবং বর্ণবাদী গালি ব্যবহার করে এবং জাপানের মানবাধিকার সংস্থা সলিডারিটি নেটওয়ার্ক উইথ মাইগ্রেন্টস পর্যবেক্ষণ করেছে যে, গিফু প্রদেশের বেশিরভাগ গ্রামীণ কারখানাগুলির দেশী এবং বিদেশী কর্মীদের জন্য পৃথক বাথরুম এবং লকার রুম রাখা হয়েছে।
কয়েক দশক ধরে জাপানে বিদেশী কর্মীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে জাপান টাইমসের সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণ অনুসারে, জাপানের বিতর্কিত প্রশিক্ষণার্থী কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা কাজের সাথে যুক্ত কারণে জাপানি কর্মীদের থেকে দ্বিগুণেরও বেশি হারে মৃত্যুবরণ করে। গত বছর অভিবাসী কর্মী এবং প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য কর্মক্ষেত্রে হয়রানি ও নির্যাতনের বিষয়গুলি মোকাবেলায় আবে সরকার দেশব্যাপী ১ শ’ পরামর্শ কেন্দ্র বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নতুন অভিবাসন আইন পাস হওয়ার পর এর মধ্যে যে কয়েকটি বিষয় প্রত্যাশিত ছিল, সেগুলো নিয়ে সংসদে উত্থাপিত উদ্বেগগুলির বেশিরভাগই ছিল সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং শ্রম অধিকার নিয়ে।
জাপানের বিরোধী দল কন্সটিটিউশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আকিরা নাগাতসুমা তার প্রস্তাবনায় লিখেছেন, ‘আমরা তাদের কীভাবে এই জীবনযাত্রার জন্য প্রস্তুত করব? আমরা শ্রমিক হিসাবে তাদের অধিকারগুলি কীভাবে রক্ষা করব? তাদের সামাজিক কল্যাণের কি হবে? তাদের আবাসনের কী হবে? তাদের জাপানি ভাষার শিক্ষার কী হবে?’ এগুলির কোনোটিরই মোকাবেলা করা হয়নি। এই দিকগুলি ১৯৮০ এবং ’৯০ এর দশকে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিতর্কের সাধারণ বিষয় ছিল। সেময় যখন একদিকে ব্যবসায়পন্থী রক্ষণশীলরা প্রায়শই অভিবাসী এবং অতিথি শ্রমিক বাড়ানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করতেন, অন্যদিকে তখন শ্রম ইউনিয়ন শ্রমিকদের নিম্নগামী অধিকার এবং মজুরির জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করতেন।
ফিলিপিনো গৃহকর্মী মারিয়া গত এক দশক ধরে টোকিওর এক জাপানি পরিবারের জন্য কাজ করছেন এবং তিনি কর্মস্থল থেকে এক ঘণ্টা দূরে কানাগাওয়াতে থাকেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ফিলিপিনো অভিবাসীদের একটি ছোট ছিটমহল সেখানে বসতি স্থাপন করেছে এবং আরও অনেক লোক আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন মারিয়া। তিনি বলেছেন যে, নতুন অভিবাসন বিলটি টোকিওর ফিলিপিনো সম্প্রদায়ের জন্য ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। তিনি বলেন, ‘আমার ৪ আত্মীয় আছেন, যারা নতুন অভিবাসন আইন পাস হওয়ার পর এখন এখানে এসে কাজ করার পরিকল্পনা করছেন। বাড়িতে আমার ভাতিজি একজন নিবন্ধিত নার্স, কিন্তু সে বহু বছর বেকার ছিল, তাই এই গ্রীষ্মে সেও এখানে চলে আসবে। মারিয়া বলেন, ‘ফিলিপাইনের অনেক লোক খুব আগ্রহী, কারণ তারা জানে যে, তারা এখন এখানে আরও বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারবে।
গত এক বছরে জাপানি সংবাদপত্রগুলি ফিলিপাইন থেকে জাপানে আগত কয়েকশ’ নার্স ও সেবাকর্মীকে নিয়ে বহু উৎসাহব্যাঞ্জক গল্প ছেপেছে। মারিয়া দুই বছর আগে জাপানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন এবং আজীবন থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তার আইনী প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল ছিল। তবে, তার চাকরিদাতা পরিবারটি তাকে বেশিরভাগ আইনী খরচ দিয়ে সহযোগিতা করে। নতুন আইনের মাধ্যমে জাপানে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন প্রক্রিয়াটি মসৃণ হবে বলে আশা করছে সবাই। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।