মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংস্কারগুলি পেছনে সরকারের পরিষ্কার বার্তা পাওয়া যায়। রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে পরিবর্তনশীল অভিবাসন নীতিটি কোনও মানবিক উদ্বেগের ভিত্তিতে নয় বরং দেশের জনসংখ্যার ভবিষ্যতের স্বার্থে সমর্থন করেছেন। জাতিসংঘের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা আরো ২শ’ কোটি বাড়বে। তবে, জাপানের জনসংখ্যা কমপক্ষে ২ কোটির মতো সঙ্কুচিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে, জাপানে সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা হ্রাস পেয়ে মহিলা প্রতি ১.৪টি শিশুতে এসে ঠেকেছে। পাশাপাশি দেশটির জনসংখ্যার ২৮ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরেরও বেশি এবং জাপানের জনসংখ্যা বছরে প্রায় ৪ লাখ করে কমছে। তারওপর, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেকারত্ব ধারাবাহিকভাবে ৩ শতাংশের নীচে থাকলেও করোনা মহামারী হওয়ার পরেও নিয়োগকর্তারা শ্রম ঘাটতি নিয়ে ক্রমবর্ধমান সতর্কতা বাড়িয়ে তুলছেন, যদিও গত বছর জাপানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পুরো ৪৭টি প্রদেশেই চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যার চেয়ে বেশি চাকরির ব্যবস্থা ছিল।
যে দেশ দীর্ঘকাল ধরে তার রক্ষণশীল সীমানার জন্য পরিচিত, অভিবাসনকে এখন সেই দেশটির জনসংখ্যা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের সবচেয়ে সুস্পষ্ট সমাধান হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে অভিবাসন বিধিনিষেধকে শিথিল করার পরিবর্তে, জাপান বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট চাহিদার ভিত্তিতে কর্মীদের জন্য কর্মভিত্তিক ইমিগ্রেশনের একটি অনন্য কার্যক্রম তৈরি করেছে। এটিকে চাহিদা ভিত্তিক তালিকা অনুসরণ করা এক ধরনের বিশ্বায়ন বলা যেতে পারে। এই প্রয়োজন ভিত্তিক বিশ্বায়নে জাপান ১৪টি ক্ষেত্রে শ্রমশক্তি, পরিচর্যা কর্মী, জাহাজ নির্মাণ, খামার শ্রমিক, গাড়ির মিস্ত্রি, মৎস্যজীবী ও নির্মাণ কর্মীসহ তাদের প্রয়োজনীয় জরুরি প্রয়োজনে একটি শ্রমবাহিনীকে চাহিদা ও অগ্রাধিকার ভিত্তিক নিয়োগ দিচ্ছে। টোকিওর কেইও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী এবং ইতিহাসবিদ ইজি ওগুমা, যিনি তার পেশাদার জীবনের বেশিরভাগ গবেষণা এবং লেখালেখি নিয়ে ব্যয় করেছেন, বলেছেন, ‘এটি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, জাপানের সমাজকে পরিবর্তনের জন্য নয়, জাপানি সমাজকে টিকিয়ে রাখতে আবে সরকার এই সংস্কারগুলি চালু করেছে।’
তবে, সর্বশেষ দেশটির সর্বশেষ গৃহীত আইনে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের স্থায়ী আবাসনের জন্য আবেদন করার এবং একপর্যায়ে জাপানের নাগরিকত্বের পক্ষে সহজ সুযোগ দেয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ কেবল সমাজকে টিকিয়ে রাখার চেয়ে আরও বেশি কিছুর সম্ভাবনা বহন করে। ওগুমা বলেন, ‘আরও শ্রমিক এখানে স্থায়ীভাবে থাকার চেষ্টা করবেন। সুতরাং বিলটি জাপান পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে না হলেও, এতে দীর্ঘ মেয়াদে অবশ্যই জাপানী সমাজে পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।’ যখনই জাপানের অভিবাসন নীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়, একটি আত্মকেন্দ্রিক দেশ হিসাবে জাপানের দীর্ঘ ইতিহাসের বিবরণ দ্রুত সামনে নিয়ে আসা হয়। জাপানি রাজনীতির গবেষকরা যুক্তি দেখিয়েছেন যে, রক্ষনশীল অভিবাসন এবং কঠোর সীমান্ত নীতি জাপানের ঐতিহাসিক যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতির কারণে বিদেশীদের প্রতি অসন্তোষের ফল। যুদ্ধোত্তর জাপানে মার্কিন মদদপুষ্ট সরকার স্নায়ূ যুদ্ধের কৌশল প্রয়োগ করেছিল, যে কারণে দেশটির কোরিয়া এবং চীনের সাথে সুস্পষ্ট সীমানার দরকার পড়েছিল। যুদ্ধোত্তর যুগে জাপানের দুঃসময়ের শেষ সীমাতে বিদেশিদের এবং সীমান্তের ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে।
ইতিহাসবিদ টেসা মরিস-সুজুকি যুক্তি দিয়েছেন, ‘জাপানে অভিবাসনকে সীমাবদ্ধ করে রাখে এমন আইন ও সংস্থাগুলির কাঠামো আসলে জাপানের যুদ্ধোত্তর সময় তৈরি হয়েছিল।’ যুদ্ধের পরের দশকগুলিতে জাপান আত্মকেন্দ্রিক, স্বনির্ভর, অনন্য এবং জাতিগতভাবে খাঁটি জাতি হিসাবে একটি নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করে।’ অভিবাসীদের বিষয়ে গ্রহণযোগ্যতা ও সহনশীলতার বিশ্ব সূচকে জাপান মাঝামাঝি পর্যায়ে অবস্থান করছে। দেশটির নতুন অভিবাসন আইনের প্রতিবাদকারী জাতীয়তাবাদী এবং স্বজাতিবাদী কট্টরপস্থী কণ্ঠগুলি শোরগোল তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। আসলে, জাপানি সমাজের বেশিরভাগই পরিবর্তিত অভিবাসন নীতি সমর্থন করে। নিক্কেই’র সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় জাপানের প্রায় ৭০ শতাংশ লোক বলেছিলেন যে, দেশে বিদেশি বেশি দেখতে পাওয়া ভাল। ওগুমা বলেন, ‘এখানে স্বজাতি সমর্থক, অভিবাসী বিরোধী গোষ্ঠীগুলি সম্ভবত মোট ভোটারদের মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ। এটি ইউরোপের মতো নয়। এবং তারা এখন পর্যন্ত এ সম্পর্কে তাদের আওয়াজ তোলেনি।’ বিষয়টি অভিবাসন সংস্কারে আবে এবং তার রক্ষণশীল সরকারে আইন পাস করতে সহায়ক হয়েছে। আবে আইনটিকে ‘অভিবাসন নীতি’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা এড়িয়ে গিয়ে সুকৌশলে এটিকে স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের দাবির প্রতিক্রিয়া হিসাবে প্রচারের পথ বেছে নিয়েছেন। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।