মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন অভিবাসন এবং জাতীয় পরিচয় ইস্যু আপাতদৃষ্টিতে পুরো রাজনীতিটিকে গ্রাস করে নিয়েছে, তখন জাপান নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে আবদ্ধ এবং সমজাতীয় হিসাবে থাকার খ্যাতি সত্তে¡ও অভিবাসনে একটি বড় ধরনের বৃদ্ধি সহজভাবে গ্রহণ করেছে। জাপানে অভিবাসন বিরোধী মনোভাব ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লেও এগুলো খুব গভীর নয়, অর্থাৎ এর পক্ষে যথেষ্ট বিরোধিতা নেই বলেই বোঝায়। দেশটির সম্পসারিত অভিবাসন নিয়ে বিদেশী সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ৪ পর্বের প্রতিবেদনটির ১ম পর্ব তুলে ধরা হল :
টোকিওর ব্যস্ত ইউনো এলাকার রাস্তাগুলোয় জিরা মাখানো ভেড়ার ঝলসানো মাংসের শিক, শিক কাবাব এবং কোফতার গন্ধ ভেসে আসে। একটি দোকানের সামনে ২০টিরও বেশি ভাষায় আর্থিক পরিষেবার বিজ্ঞাপন দেয়া এবং অন্য দোকানগুলো কোরিয়ান অভিনব স্ন্যাকস, বুদবুদ ওঠা তাইওয়ানিজ চা এবং পাঞ্জাবি তরকারি বিক্রি করে। সেখানে কফির দোকান, ঐতিহ্যবাহী জাপানি ডিনারও আছে। কাছাকাছি একদল তরুণ সেনেগালি ওলোফ ভাষায় আড্ডায় মগ্ন। এই জাতীয় দৃশ্যগুলি নিউইয়র্ক বা হংকংয়ে পরিচিত হতে পারে, তবে টোকিওতে এগুলো খুব কম দেখা যায়। এটি এমন একটি শহর যা ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বজনীন বৈচিত্রে ঘেরা নয়। তবে, এর পরিবর্তন ঘটতে চলেছে। ১৯৮০’র দশক থেকে ইউনো টোকিওর বাকি অংশের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বহু সাংস্কৃতিক হলেও পুরো রাজধানী ক্রমেই বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠছে।
আসন্ন দশকগুলোয় জাতিটি ব্যাপক অভিবাসন সংস্কারে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সমস্ত জাপান জুড়ে এলাকাগুলো একই রকমভাবে পরিবর্তিত হবে। তবে ঐতিহ্যগতভাবে সমজাতীয় জাপানে অভিবাসন বাড়ার সাথে সাথে দেশটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আসা সংঘবদ্ধ কট্টরপন্থীদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে চলছে বলে মনে হচ্ছে। অভিবাসনের এই বৃদ্ধি ঘুরেফিরে জাতিগতভাবে সমজাতীয় থেকে মাঝারি বৈচিত্র্যে জাপানের দৃশ্যপট পরিবর্তন করছে। বর্তমানে ১২ কোটি ৬০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ অভিবাসী জাপানে বাস করে। ১৯৯০ সালের তুলনায় বর্তমানে এ সংখ্যাটি ৩ গুণ এবং জাপান দ্রুত বার্ধ্যকে পতিত হওয়া জনসংখ্যা এবং গার্হস্থ্য কর্মী হ্রাস পাওয়ায় হিমশিম খাওয়ার ফলে আরও অভিবাসন সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
২০১৯ সালের এপ্রিলে টোকিও ঐতিহাসিক অভিবাসন সংস্কার বাস্তবায়ন করেছে। পরবর্তী ৫ বছরে ৩ লাখ ৪৫ হাজারের বেশি কর্মীকে জাপানে অভিবাসনের সুযোগ দেয়ার জন্য ভিসা প্রোগ্রাম সম্প্রসারণ করেছে। স্বল্প দক্ষ শ্রমিকরা ৫ বছর জাপানে অবস্থান করতে পারবেন এবং বিশেষ দক্ষতাযুক্ত বিদেশী কর্মীদের তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকতে দেয়া হবে। ২০১৩ সাল থেকে জাপান কয়েক হাজার অস্থায়ী অভিবাসীদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রশিক্ষণার্থী কর্মসূচি প্রসারিত করার পর থেকে দেশটিতে ইমিগ্রেশন এবং দেশে-বিদেশী কর্মীদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ২০১৭ সালে জাপান একটি নতুন দ্রুত কার্যকর বিলের মাধ্যমে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের অভিবাসনকে সহজলভ্য করে দেয়।
টোকিওর শোয়া উইমেন’স ইউনিভার্সিটির ব্যবসায়িক অধ্যাপক নওহিরো ইয়াশিরোর মতে, আগামী ৫ বছরে জাপানের উচ্চমানের দক্ষ শ্রমশক্তি বৃদ্ধির মধ্যে বিদেশী শ্রমিকরা ৪০ শতাংশ জায়গা দখল করবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। অভিবাসনের এই বৃদ্ধি, ঘুরেফিরে, জাতিগতভাবে সমজাতীয় থেকে মাঝারিভাবে বৈচিত্রের জাপানের চিত্রকে পরিবর্তন করছে। বর্তমানে ২০ বছর বয়নী টোকিওর প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন বিদেশী জন্মগ্রহণকারী এবং টোকিও এখন আর মূল জাপান থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। দেশটির বেশিরভাগ ছোট ছোট শহরগুলিতে অভিবাসন ঘটছে। যেমন, হোক্কাইদোর শিমুকাপ্পু এবং গুনমা’র ওইজুমিতে, যেখানে অভিবাসী জনসংখ্যা স্থানীয় জনসংখ্যার ১৫ শতাংশেরও বেশি। বেশিরভাগ পল্লী মিয়ে অঞ্চলে, ওসাকা এবং কিয়োটো এর পূর্বাংশে, বিদেশী অভিবাসন বছরের পর বছর ধরে জনসংখ্যার হ্রাসকে কমিয়ে রেখেছে। অভিবাসন আইন প্রসারণ সত্তে¡ও, জাপান ইউরোপ বা আমেরিকার সমজাতবাদী প্রতিক্রিয়ার মতো কিছুই এখনো অবলোকন করেনি, যেখানে অভিবাসন এবং জাতীয় পরিচয় সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মতামত রাজনৈতিক মেরুকরণ ক্রমবর্ধমান। প্রকৃতপক্ষে, সর্বশেষ অভিবাসন সংস্কার গণমাধ্যম বা বৃহত্তর আলোচনার মাধ্যমে সামান্য তদন্তের মুখোমুখি হয়েছে। তবে, ইয়াশিরো বলেছেন, ‘সাধারণভাবে আইনটি নিয়ে তেমন কোনও বিতর্ক হয়নি।’ (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।