মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
পাকিস্তান ছেড়ে প্রতিবেশী ভারতে পাড়ি জমাচ্ছেন সংখ্যালঘু হিন্দুরা। সীমান্তের এ পারে তাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী নানা সংগঠন, যারা নিজেদের দেশেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত।
সাত বছর আগে নিজের জন্মস্থান দক্ষিণ পাকিস্তানের হায়দারাবাদ ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমান ধর্মবীর সোলাঙ্কি। তার সহযাত্রী অন্য হিন্দুদের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে শরণার্থী হন ধর্মবীর। নিজের জন্মভূমি, স্মৃতি যখন সীমান্ত পার হচ্ছিলেন তখন অনুভূতি কেমন ছিল? ‘আমার মনে হচ্ছিলো আমার পুনর্জন্ম হয়েছে’, এক কথায় উত্তর ধর্মবীরের। পাকিস্তান থেকে আসা আরো কয়েক শত শরণার্থীর সঙ্গে এখন ধর্মবীরও নতুন দিল্লির প্রান্তে এক কলোনিতে বাস করেন।
পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দুরা ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের প্রণয়ন করা নাগরিকত্ব আইনে সুবিধা পেতে যাচ্ছেন। এই আইন অনুসারে ২০১৫ সালের আগে আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে আসা অমুসলিম শরণার্থীরা দ্রুত নাগরিকত্বের সুযোগ পাবেন।
অভিযোগ রয়েছে, এই ‘বিতর্কিত’ আইনের মাধ্যমে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ উসকে দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মূল লক্ষ্য। যেসব প্রতিবেশী দেশের অমুসলিম নাগরিকদের এই সুযোগ দেয়া হয়েছে সেসব দেশে ‘মুসলিমেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ’। নতুন নাগরিকত্ব আইনে এই যুক্তি দিচ্ছে ভারত সরকার। কিন্তু একটি ধর্মকে বিশেষভাবে ‘আলাদা’ করার মাধ্যমে এই আইন দেশটির সেক্যুলার সংবিধান পরিপন্থি বলে দাবি করছেন বিরোধীরা।
মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্তকে কয়েক দশকের বৈষম্য ও নির্যাতন থেকে পালানোর পথ হিসেবে দেখছেন পাকিস্তানের হিন্দু সংখ্যালঘুরা। ২০১৯ সালের মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত ১৫ মাসে ১৬ হাজারেরও বেশি পাকিস্তানি শরণার্থীর আবেদন পাওয়ার কথা জানিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আগের বছরগুলোর তুলনায় ভিসা দেয়ার পরিমাণও কয়েকশত থেকে কয়েক হাজারে পৌঁছেছে। করোনা মহামারির কারণে সীমান্তের বন্ধের আগ পর্যন্তই চলছিল শরণার্থীর ঢল।
মহামারির কারণে নাগরিকত্বের প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ রয়েছে। ধর্মবীর মনে করেন, ‘নতুন নাগরিকত্ব আইন আমাদের মতো মানুষের জন্য জমি ও নাগরিক হিসেবে অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার পথ করে দিয়েছে।’ মজনু কা টিলা নামের একটি কলোনিতে থাকেন ধর্মবীর। যমুনা নদী পাড়ের শরণার্থী কলোনিটিতে অনেক তিব্বতী শরণার্থীও থাকেন। সেখানে পানি ও বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা নেই। বেশিরভাগ শরণার্থীই দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। পাকিস্তানের চেয়ে জীবনের মান খুব একটা উন্নত হয়নি বলে মনে করেন শরণার্থীরা। কিন্তু তারপরও জীবনের নিরাপত্তা আগের চেয়ে অনেক বেশি বলে মনে করেন তারা।
যমুনা নদীর পাড়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে সিগনেচার ব্রিজের নীচে আরেক শিবিরে থাকেন কয়েকশ’ পাকিস্তানি হিন্দু পরিবার। আশেপাশের জঙ্গল থেকে গাছ কেটে কাঠ দিয়ে বাড়ি তৈরি করছেন তারা। শিবিরের বাসিন্দা ৩৫ বছরের নিরমা বাগড়ি বলেন, ‘এখানে অন্তত আমাদের মেয়ের জীবন নিরাপদ, সে নিজের ধর্ম পালন করতে পারবে।’ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আসার আগে কেবল বলিউডের সিনেমা এবং দাদার কাছ থেকে শোনা গল্প ছিল ভারত সম্পর্কে তার একমাত্র অভিজ্ঞতা।
নতুন দেশে ধীরে ধীরে মূল স্রোতে মিশে যাচ্ছেন শরণার্থীরা। কলোনির এক দম্পতি নাগরিকত্বও পেয়ে গেছেন। এতে তারা এতটাই আনন্দিত হয়েছেন যে সদ্য জন্ম নেয়া মেয়ের নামই রেখে দিয়েছেন ‘নাগরিকতা’। শরণার্থীদের প্রতি সহমর্মী হয়ে অনেক হিন্দু সংগঠনই সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। খাবার, কাপড় তো বটেই সোলার লাইট এবং বসতবাড়ির নানা পণ্যও দান করেছেন অনেকে। কিন্তু এসব সংগঠনের সবগুলো অরাজনৈতিক নয়। রয়টার্স জানিয়েছে, সিগনেচার ব্রিজের নীচের ক্যাম্পটিতে শিশুদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা পরিচালনা করছে উগ্রবাদী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সরকারে থাকা ভারতীয় জনতা পার্টি- বিজেপির সঙ্গে ব্যাপক ঘনিষ্ট এবং সংগঠনটির বিরুদ্ধে মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। মোদী সরকারের অধীনে বিকশিত হতে থাকা নানা হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের মতো বিশ্ব হিন্দু পরিষদও ভারতে হিন্দু রাজত্ব প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাস করে। যেসব হিন্দু পরিষ্দ কর্মী শরণার্থী ক্যাম্পে ঘুরে বেড়ান, তারা রয়টার্সের সাংবাদিকের কাছে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। এমনকি অন্যান্য শরণার্থীদেরও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করেন তারা। এদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে ধর্মবীর সোলাংকি বলেন, ‘তারা কেবল আমাদের সাহায্য করার চেষ্টা করছে।’
ভারতের অনেক মুসলিম সংখ্যালঘুরও একই পরিণতি হতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। মার্কিন কংগ্রেসের ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিডম কমিশনের শুনানিতে ভারতের বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদরা এ নিয়ে নিজেদের মত তুলে ধরেন। নতুন নাগরিকত্ব আইনে ভারতে দশকের পর দশক ধরে বাস করা বিশাল সংখ্যক মুসলিম সংখ্যালঘু নাগরিকত্ব হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
এই আইন অনুসারে নাগরিকত্ব বজায় রাখতে হলে ১৯৪৭ সালের আগে কারো পরিবার ভারতে এসেছে, এমন প্রমাণ দাখিল করতে হবে। তবে দেশভাগের পর থেকে কয়েক দশকে বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিমদেরই এমন কোনো বৈধ কাগজ নেই।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে জাতীয় নাগরিকত্ব নিবন্ধন - এনআরসিতে যারা নাম তুলতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তাদের বিভিন্ন স্থানে সরকারি উদ্যোগে নির্মিত শিবিরে আটকে রাখা হবে। এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলোতে তাদের জোর করে পুশব্যাক করার অভিযোগও উঠছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। সূত্র: ডয়চে ভেলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।