Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না সুমাইয়ার

পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাওয়ায় ঢাবি ছাত্রীকে হত্যা

নাটোর জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

মেয়ে অসুস্থ, শ্বশুরের কাছ থেকে ফোনে এমন সংবাদ পেয়ে যশোর থেকে নাটোরে ছুটে আসেন মা নুজহাত বেগম। এসে দেখলেন, হাসপাতালের মর্গে মেয়ের লাশ পড়ে আছে। শ্বশুর, স্বামী বা তাদের পরিবারের কেউই সেখানে নেই। নুজহাতের অভিযোগ, নির্যাতন করে তার মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস সুমাইয়া বেগমকে হত্যা করেছেন স্বামীর বাড়ির লোকজন।

সুমাইয়া বেগম যশোরের সিদ্দিকুর রহমান যশোরীর মেয়ে। বিয়ে হয়েছিল নাটোর শহরের হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকার প্রকৌশলী মোস্তাক হোসাইনের সঙ্গে। মা নুজহাত বেগম বলেন, গত সোমবার সকালে সুমাইয়ার শ্বশুর জাকির হোসেন আমাকে ফোন দেন। তিনি মেয়ের অসুস্থতার কথা বলেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। খবর পেয়ে আমি দ্রæত নাটোরে চলে আসি। সদর হাসপাতালে এসে দেখি, আমার মেয়ের লাশ মর্গে পড়ে আছে। শ্বশুরবাড়ির কেউ হাসপাতালে নেই। তিনি আরও বলেন, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন সুমাইয়ার পড়ালেখা ও পরে চাকরি করার ইচ্ছা মেনে নিতে পারছিল না। এ কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ছয় মাস আগেও তাকে ঘরে আটকে রেখে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে মোস্তাকের সঙ্গে বিয়ে হয় সুমাইয়ার। বাবা সিদ্দিকুর ছিলেন একজন নামকরা ইসলামি বক্তা। তার অনুপ্রেরণাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন সুমাইয়া। ভর্তির তিন বছরের মাথায় বাবার পছন্দেই মোস্তাককে বিয়ে করেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন পড়ালেখায় বাদ সাধে। পড়াশোনার বদলে গৃহস্থালির কাজে মনোযোগ দেওয়ার তাগিদ আসে। পড়ালেখার খরচ বাবা সিদ্দিকুরই দিতেন। তাই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়নি সুমাইয়াকে। প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন তিনি। ঢাকায় থেকে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ গত সেপ্টেম্বরে বাবা সিদ্দিকুর মারা যান। এতে আর্থিক সঙ্কটে পড়েন সুমাইয়া। শ্বশুরবাড়ি থেকে সহযোগিতার পরিবর্তে চাকরির চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে পুরোপুরি সংসারী হওয়ার নির্দেশ আসে। কিন্তু সবকিছু ভুলে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েই ডুবে ছিলেন সুমাইয়া। তবে শেষ পর্যন্ত জীবনের কাছে তাকে হার মানতে হয়েছে তার।

পরিবারের অভিযোগ, গত রোববার রাতে সুমাইয়াকে তার স্বামীর ঘরে মারপিট করে হত্যা করা হয়। এরপর ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলেছে। গত সোমবার দুপুরে মা নুজহাত বেগম যখন নাটোর সদর হাসপাতালে পৌঁছান, তখন সুমাইয়ার স্বামী মোস্তাক, শ্বশুর জাকির বা ওই পরিবারের কাউকে পাননি। সবাই গা-ঢাকা দিয়েছেন। ময়নাতদন্ত শেষে রাতে নাটোরের একটি কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে।

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম গতকাল মঙ্গলবার সকালে বলেন, রাতে নিহত নারীর মা নুজহাত বেগম থানায় মামলা করেছেন। এতে সুমাইয়ার স্বামীসহ চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা অভিযোগ করা হয়েছে। মামলা গ্রহণের পর আসামিদের ধরতে সারা রাত অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। সুমাইয়ার ননদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ঘটনাটি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু স্বামীর বাড়িতে ঘটনাটা ঘটেছে, তাই সব দায় দায়িত্ব স্বামী ও তার স্বজনদেরই বহন করতে হবে।



 

Show all comments
  • Md Parvez Hasan ২৪ জুন, ২০২০, ২:৪৬ এএম says : 0
    অভিযোগ সত্য হলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Abu Sayem ২৪ জুন, ২০২০, ৯:২৫ এএম says : 0
    Ami daly inkilab newspeaper 12 year sturdy kori. newspaper na porle kmn jani khub kharup lage. Sayem, Patua khali sador
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৪ জুন, ২০২০, ১১:৫৩ পিএম says : 0
    আমরা (দেশে অবস্থন রত বাঙালীরা) ছেলের বৌ কিংবা মেয়েকে একজন আদর্শ হাউসওয়াইফ হিসাবে দেখতে পছন্দ করি। ফলে এই যে, মেয়েটাকে লেখাপড়া শিখানো হলো ভাল ভাল ইউনিভার্সিটিতে প্রচুর পয়সা ব্যয় করে শিক্ষা দেয়া হলো এর শেষ পরিণতি তাঁকে একজন আদর্শ হাউসওয়াইফ বানানো। তাহলে তকে এত উচ্চ ডিগ্রী না নিয়ে এসএসসি ডিগ্রী পর্যন্ত পড়ায়ে বাচ্চাদেরকে কিছুটা সহযোগিতা করার যোগ্য বানিয়ে বিয়ে দিয়ে দিলেই হতো। কিন্তু সেটা না করে মেয়েদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তাদের মনকে উদার করে শেষে তাদেরকে গৃহবন্দী করে তার নিজের মনের মধ্যে যুদ্ধ শৃষ্টি করে সেটাকে পারিবারিক কলহে পরিণত করে নিয়মিত ঝগড়া ঝাটিতে রূপান্তরিত করে একপর্যায়ে মেয়েটার মৃত্যু কিংবা বিবাহ বিচ্ছেদ ইত্যাদি নানা ধরনের বিশৃঙ্খলতা করে সংসারকে নরকে রূপায়িত করা হচ্ছে। বাঙালী সমাজের কর্ণধারেরা এটা নিয়ে তেমন একটা ভাবেন না তাই এর কোন সুরাহাও হচ্ছেনা। এরপর আসছে পুলিশ এনারা আবার পকেট বানিজ্যের কারনে এঘাটের জলকে ঐঘাটে নিয়ে ঘটনাকে বিকৃত করে দিচ্ছে। এটাই আমরা প্রবাসে বসে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় পড়ে আসছি। এদিকেও কর্তা ব্যাক্তিদের কোন নজর নেই তবে বর্তমান সরকার প্রধান এদিকে একটু নজর দিয়েছেন সেটা বুঝা যাচ্ছে বর্তমান পুলিশ প্রধান আইজিপি সাহেবের ভাল ভাল বক্তব্য শুনে। এখন যদি আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ যেসব কথা বলছেন সেসব বাস্তবায়িত করতে পারেন তাহলেই হবে আইনের প্রতিষ্ঠা। তারপরও আমি পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমদকে অনুরোধ করবো এই মামলায় একটু নজর দিয়ে এই হত্যার জন্যে দায়ী ব্যাক্তিদেরকে সাজা দেয়ার ব্যাবস্থা করতে। আল্লাহ্‌ আমাদের আইজিপি বেনজীর আহমদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার যোগ্যতা দান করেন। আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ