Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উন্নয়ন ও অগ্রগতি থেকে দূরে থাকার সুযোগ নেই

| প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০২০, ১২:০২ এএম

বিশ্বব্যাপী এখন এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত, করোনা মোকাবিলা করেই জীবন ও জীবিকা এগিয়ে নিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। যেহেতু এই ভাইরাসের আশু দমন-নির্র্মূলের সম্ভাবনা কম এবং এর কার্যকর প্রতিষেধক পেতে কিছুটা হলেও সময় লাগবে, তাই এর মধ্যেই অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালাতে হবে। এ বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়েই করোনার অবসানের অপেক্ষা না করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেগবান করেছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশেরও করোনাকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। করোনা শেষ হলে, তারপর শুরু করা হবে-এমন মনোভাব পোষণের কোনো সুযোগ নেই। উন্নত দেশগুলোও এখন করোনাকে উপেক্ষা করেই এগিয়ে যাচ্ছে। করোনার প্রকোপের মধ্যে লকডাউন তুলে দিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু করেছে। কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকরা লকডাউন তুলে নেয়ার দাবীতে সমাবেশও করেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও লকডাউনের পক্ষে নন। তারা ধীরে ধীরে লকডাউন তুলে দেয়া এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালানোর পক্ষে। এ প্রেক্ষিতে, আমাদেরও এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে। করোনা প্রতিরোধে লকডাউন যে খুব একটা কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না, এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা হচ্ছে। মানুষের জীবন ও জীবিকার তাকিদে লকডাউন অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এ বাস্তবতা আমাদের মেনে নিতে হবে। তবে করোনা মোকাবিলার অন্যান্য ব্যবস্থার সঙ্গে চিকিৎসা জোরদারের বিষয়টিও এগিয়ে নিতে হবে।

করোনা ভীতির চেয়েও মানুষের কাছে জীবন ও জীবিকা অচল হয়ে পড়া যে অনেক বেশি ভীতিকর, তা ইতোমধ্যে পরিদৃষ্ট হয়েছে। মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে কর্মে নিয়োজিত হচ্ছে। বাস্তব এই পরিস্থিতি উপেক্ষা করা যায় না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন, আমাদের দেশে করোনা দুই থেকে তিন বছর স্থায়ী হতে পারে। যদি তাই হয়, তবে আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এই দীর্ঘ সময় অচলাবস্থায় থাকতে পারে না। এটা বাস্তবসম্মত হতে পারে না। আমরা দেখেছি, প্রায় তিন মাস ধরে সবকিছু অচল থাকায় অর্থনীতি এবং মানুষের কী অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। যেখানে আমাদের জিডিপি ৮.২ শতাংশ হওয়ার কথা, সেখানে তা প্রায় দেড় শতাংশে নেমে এসেছে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, আগামী বছর তা এক শতাংশে নেমে আসবে। মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে। সবকিছু অচলাবস্থার মধ্যে রেখে অর্থনীতির এমন ভয়াবহ চিত্র নিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই। এ অবস্থায় করোনার বাস্তবতা মেনে নিয়েই অর্থনীতিকে সচল করতে হবে। পাশাপাশি এর মোকাবিলার প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে। এরই মধ্যে করোনা উপশমে বিভিন্ন ওষুধের কার্যকারিতার কথা বলা হচ্ছে। এসব ওষুধ প্রয়োগে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। রেমডিসিভির, ডেক্সামেথাসন, আইভারমেকটিনসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধের কার্যকারিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এছাড়া, মূল ভেকসিন আবিষ্কার এবং এর সাফল্যের কথাও শোনা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে চীন অনেক দূর এগিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এ বছরের মধ্যে মূল ভেকসিন পাওয়া যাবে। আমাদের দেশের চিকিৎসকরাও বিভিন্ন ওষুধের কার্যকারিতা সম্পর্কে ধীরে ধীরে নিশ্চিত হচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে এসবই ইতিবাচক দিক এবং আশাব্যঞ্জক। এ প্রেক্ষিতে, আমাদের অর্থনীতি ও উন্নয়নের চাকা সচল করার উদ্যোগের পাশাপাশি ওষুধ প্রাপ্তির সহজলভ্যতা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এ কাজটি যথাযথভাবে করতে পারলে করোনা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা অসম্ভব হবে না। আমাদের অর্থনীতির অকল্পনীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। এ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে দিন দিন বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটছে। এসডিজির নতুন চ্যালেঞ্জ ও বাজেট ২০২০-২১ শীর্ষক এক সংলাপে বলা হয়েছে, করোনার কারণে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের অর্থনীতির প্রধানতম দুই স্তম্ভ গার্মেন্ট ও প্রবাসী আয়ের খাত নিম্নমুখী। অসংখ্য গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে লাখ লাখ শ্রমিক ফিরছে। এক সউদী আরব থেকেই দশ লাখ শ্রমিক ফিরছে বলে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। আমদানি-রপ্তানি হ্রাস পাওয়ায় বিদ্যমান অনেক শিল্পকারখানার উৎপাদন কমে গেছে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত কোটি কোটি মানুষ বেকার হয়েছে। সরকারি বড় বড় প্রজেক্টের কাজ ধীর গতিতে চলছে। বলা যায়, অর্থনীতির সব খাতই এখন মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে অর্থনীতির এমন দুর্গতি বহন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বাস্তব এ পরিস্থিতি বিবেচনা নিয়ে, করোনাকে সঙ্গী করেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ঝপিয়ে পড়তে হবে।

স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতির মধ্যেও বেশ কিছু আশার কথা শোনা যাচ্ছে। অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর জিডিপি যেখানে নেতিবাচক, সেখানে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) বলেছে, নতুন অর্থবছরে (২০২০-২১) আমাদের জিডিপি হবে ৭.৫ শতাংশ। মাস খানেক আগে আইএমএফ বলেছিল, এ হার হবে সাড়ে ৯ শতাংশ। এসব আশাবাদ ধরে রাখতে হলে, পুরোদমে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করার বিকল্প নেই। এছাড়া বর্তমান বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীন তার দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। ১ জুলাই থেকে ৮ হাজার ২৫৬টি পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাবে। এ সুবিধা কাজে লাগাতে অনিবার্যভাবেই আমাদের শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। চীন থেকে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশের অনেক কোম্পানি স্থানান্তর করার পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত ও ভিয়েতনাম এসব কোম্পানি তাদের দেশে স্থানান্তর কারার জন্য জোর তৎপরতা শুরু করেছে। আমাদেরও এ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে করোনার ভয়ে এখন আর বসে থাকার সুযোগ নেই। সরকারি-বেসরকারি সব ক্ষেত্রকেই উদ্যোগী হতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে পুরোদমে চালু করতে হবে। উন্নয়ন কাজে মন্ত্রী-এমপিদের সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি তাদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উন্নয়ন

২৩ ডিসেম্বর, ২০২২
১৮ ডিসেম্বর, ২০২২
২৮ অক্টোবর, ২০২২
২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন