Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যেভাবে হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে বলিউড

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২০, ১২:০৩ এএম

ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রে নরেন্দ্র মোদি ও তার হিন্দুপন্থী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) ধ‚মকেতুর মতো উত্থানের পর থেকে ভারতীয় সিনেমার একটি বড় অংশ প্রবল ও প্রকটভাবে হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এগুলোতে একদিকে হিন্দু আইকনদের উচ্ছ¡সিত প্রশংসা, অন্যদিকে মুসলিম শাসকদের শঠ, দায়িত্বহীন ও জড়বুদ্ধিসম্পন্ন ভিলেন হিসেবে চিত্রায়িত করা হচ্ছে। পদ্মাবৎ, বাজিরাও মাস্তানি, উরি, কেসরি, পানিপথ, তানহাজি, থ্যাকারে ও আরো অনেক বিশাল বাজেটের মুভিগুলো পুরোপুরি ক্ষমতাসীন বিজেপির হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদী এজেন্ডার সাথে খাপ খেয়ে যাচ্ছে। এসব মুভির মুক্তির তারিখের দিকে ঘনিষ্ঠভাবে তাকালে বোঝা যায়, কত পরিকল্পিতভাবে সেলুলয়েডকে অতীত ভারতের মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে ঘৃণার বীজ ছড়াতে এবং জনমতকে হিন্দু সা¤প্রদায়িক আদর্শের অনুক‚লে পরিচালিত করতে এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে বিজেপি জাতীয় নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হওয়ার পর হিন্দু ঐতিহাসিক রোমান্স ফিল্ম বাজিরাও মাস্তানি মুক্তি পায়। ছবিটিতে হিন্দু মারাঠাদের সাহসিকতা তুলে ধরা হয়, দাক্ষিণাত্যের নিজাম ও দিল্লির মোগলদের বিরুদ্ধে তাদের বীরত্ব এতে স্থান পায়। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে আসে পদ্মাবৎ। এতে ত্রয়োদশ শতকের মুসলিম শাসক আলাউদ্দিন খালজিকে নৃশংস, কামার্ত পশু হিসেব প্রদর্শনের মাধ্যমে ভারতে মুসলিম নৃশংসতা উপস্থাপন করা হয়। পরমাণু: দ্য স্টোরি অব পোখরান নামের একটি ছবির কথা উদাহরণ হিসেবে বলা যায়। এটি পোখরানের কাহিনী অবলম্বনে তৈরি। এটি মুক্তি পায় ২০১৮ সালে, ভারতের সাধারণ নির্বাচনের মাত্র এক বছর আগে। ১৯৯৮ সালে পোখরানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পরমাণু পরীক্ষা চালানোর কাজে পরলোকগত অটল বিহারি বাজপেয়ির নেতৃত্বাধীন সরকারের ভ‚মিকার ওপর আলোকপাত করা হয়। এতে দেখানো হয়, দেশের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে বিজেপি সরকার কখনো ভয় পায় না। ২০১৯ সালের প্রথম তিন মাসে, আবারো সাধারণ নির্বাচনের আগে, বেশ কয়েকটি বিশাল বাজেটের ছবি মুক্তি পায় বিজেপির এজেন্ডা প্রচারের জন্য।

২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি আসে উরি : দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। এতে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে ভারত সরকারের সার্জিক্যাল স্ট্রাইককে নাটকীয়তা দান করা হয়। মুভিটিতে মোদি, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে চিত্রিত করা হয়। ১১ জানুয়ারি আসে অ্যাকসিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সাবেক মিডিয়া উপদেষ্টা সঞ্জয় বারুর লেখা বই থেকে এই মুভিটি নির্মাণ করা হয়। এতে বিজেপির প্রতিদ্ব›দ্বী কংগ্রেস দলের সাথে দুর্নীতি, বদ্ধম‚ল ধারণা ও স্বজনপ্রীতি অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত থাকার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। ১৮ জানুয়ারি থ্যাকারে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। এতে হিন্দুপন্থী রাজনৈতিক দল শিব সেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব থ্যাকারের জীবনী স্থান পায়। এই মুভির একটি বড় অংশে বাবরি মসজিদ ভাঙা ও সেখানে রামমন্দির নির্মাণের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি আসে মনিকর্নিকা: দি কুইন অব ঝাঁসি। এটি হিন্দু মারাঠা রানি ঝাঁসির ল²বাইয়ের জীবনী তুলে ধরা হয়। এতে বিখ্যাত ঝাঁসি অবরোধের সময় ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে হিন্দুদের লড়াই দেখানো হয়। ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ মুক্তি পায় মেরা পিয়ারে প্রাইম মিনিস্টার ছবিটি। এতে ভারতের বাড়ি বাড়ি টয়লেট তৈরীর গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ভারতের বার্তার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।

১২ এপ্রিল মুক্তি পায় তাসকেন্ত ফাইল। এতে ২০১৯ সালের সাধঅরণ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৈরি করা হয়। এতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মারা যাওয়ার জন্য দায়ী কংগ্রেস আর ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন রুশ গুপ্তচর। গত মাসে পাতাল লোক নামের একটি ক্রাইম থ্রিলার মুক্তি পায়। এতে দেখানো হয়, কেবল বিভাগীয় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রশংসা পাওয়ার জন্যই এক পুলিশ ইন্সপেক্টর বেপরোয়াভাবে উচ্চপর্যায়ের একটি মামলা নষ্ট করতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করেন। কাহিনীটি নানাভাবে ভারতীয় সমাজকে প্রতিফলিত করে। এসএএম।



 

Show all comments
  • মোঃ ইমদাদুল হক ১৯ জুন, ২০২০, ১০:৪২ এএম says : 0
    হিন্দুরা এই মুভি গুলোর মাধ্যমে ইসলাম এর দুর্নাম ছড়াচ্ছে ইসলামকে মানুষের সামনে মন্দ ভাবে উপস্থাপন করছে অথচ তারা যে কাজগুলো করছে ইসলামের নামে তা ইসলামের মাঝে আদৌ নাই এজন্য আমার দাবী হল যে এর ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হোক যাতে করে ইসলাম কে মানুষের মাঝে মন্দ ভাবে উপস্থাপন না করতে পারে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ