Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নানামুখী চাপ: তোপের মুখে মোদি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০২০, ১২:২৫ পিএম | আপডেট : ২:৪৫ পিএম, ১৭ জুন, ২০২০

একদিকে করোনাভাইরাসে নাজেহাল ভারত। অন্যদিকে ভারত ও চীনা সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা। এমনিতেই যখন টালমাটাল অবস্থা মোদি সরকারের। তার উপর সক্রিয় রয়েছে দেশটির বিভিন্ন বিরোধীদলের তীব্র সমালোচনা।

ভারতে করোনায় দিন দিন ভাড়ি হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। একদিনে নতুন করে মৃতের তালিকায় যুক্ত হয়েছে দুই হাজারের বেশি মানুষ। মৃত্যু তালিকায় যুক্তদের শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র ও দেশটির জাতীয় রাজধানী অঞ্চল দিল্লির নাম।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে গত মঙ্গলবারের চেয়ে বুধবার মৃতের সংখ্যা একদিনে ২০ শতাংশ বেড়ে ১১ হাজার ৯১৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১০ হাজার ৯১৪ জনের দেহে ভাইরাসটির উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। মোট আক্রান্ত এখন ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৮৭২ জন।

এদিকে হিমাচল প্রদেশে চীন সীমান্ত লাগোয়া জেলাগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। গত (সোমবার) রাতে লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত এবং চীনা সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষে কমান্ডিং অফিসার পদের কর্নেলসহ কমপক্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে। সীমান্তে বিরাজ করছে তুমুল উত্তেজ

অন্যদিকে মোদি সরকারের কঠোর সমালোচনায় বিরোধিরা। ইরানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম পর্সটুডের এক প্রতিবেদনের বলা হয়েছে- ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা, সাবেক অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পি চিদাম্বরম প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেছেন, ‘৫ মে’র পর থেকে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নীরব। বিদেশি সেনা ভূখণ্ড দখল করে বসে রয়েছে, অথচ দেশের প্রধান চুপ, অন্য কোনও দেশে এমন হতো বলে ভাবা যায়?’

গতকাল (মঙ্গলবার) কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিং সূর্যেওয়ালা বলেন, ‘গতরাতে আমাদের সেনারা নিহত হলেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিল দুপুর ১২টা ৫২ মিনিটে। কিছুক্ষণ পরেই সেটি পরিবর্তন হল। এ সব কেন হল, জবাব চাই।’

কংগ্রেস বলেছে, ‘গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় সেনাদের শহীদ হওয়ার সংবাদ প্রতিটি দেশবাসীকে কষ্ট দিচ্ছে। কিন্তু এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নীরবতা বরদাস্ত যোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী দেশবাসীর সামনে জবাবদিহি থেকে পালাচ্ছেন। মোদি সরকার সীমান্ত বিরোধ ইস্যুতে নীরব ছিল এবং দেশের মানুষকে অন্ধকারে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের সেনাদের শহীদ হওয়ার বিষয়ে মোদি সরকারকে জবাব দিতে হবে। যদি সীমান্তে সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তবে কোন পরিস্থিতিতে সেনাদের শহীদ হতে হয়েছিল? আমাদের সেনাদের শহীদ হওয়া নিয়ে বিভ্রান্তি কেন? মোদী সরকার কী সীমান্তে অচলাবস্থা লুকানোর চেষ্টা করছিল? ২০২০ সালের এপ্রিল/মে মাসে আমাদের এলাকার কত অংশ চীনা সেনারা দখল করেছে, দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে তা অবশ্যই অবহিত করতে হবে। এই বিষয়ে নীরব থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লুকোতে পারবেন না।’

কংগ্রেস বলেছে, ‘নেপাল তার মানচিত্র পরিবর্তন করে ভারতের অঞ্চল নিজেদের অধীনে দেখাচ্ছে, চীন ভারতের সীমান্ত দখলে ব্যস্ত, পাকিস্তান ভারতে সন্ত্রাসবাদ ছড়াচ্ছে। এতকিছু হওয়ার পরেও প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কখন তার নীরবতা ভঙ্গ করবেন?’

কংগ্রেসের প্রশ্ন, ‘লকডাউন চলাকালীন অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি সরকারের উদাসীন মনোভাব বা ভারত সীমান্তে চলমান অচলাবস্থার সময় প্রতিটি ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা দেশবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকের মতো বলে মনে হচ্ছে। এ সব বিষয় কতদিন প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন এড়িয়ে যাবেন?’

অন্যদিকে, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ‘সরকারের উচিত, ঠিক কী হয়েছে সে ব্যাপারে আরও দায়িত্বপূর্ণ বিবৃতি দেওয়া।’

জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির টুইটার হ্যান্ডেলে তাঁর মেয়ে ইলতিজা বলেন, চীনের সামনে ভারতের ‘ঘর মে ঘুসকে মারেঙ্গে’ (ঘরে ঢুকে মারা) রণনীতি কোথায় গেল? কেন প্রত্যাঘাতের কোনও কথা বলা হচ্ছে না, সেটা সবাই জানতে চায়।

পিডিপি’র সচিব বেদ মহাজন বলেন, ‘পাল্টা মার দরকার। এটা ১৯৬২ সাল নয়, এটা ২০২০ সাল। ওই আগের কথা বলে কোনও লাভ নেই।’

জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, সেনা কমানোর সময় যদি এরকম ঝামেলা হয়, তাহলে আসলে ঠিক কতটা গণ্ডগোল রয়েছে, সেটা ভাবুন।

জম্মু-কাশ্মীরের কংগ্রেস প্রধান গুলাম আহমেদ মীর বলেন, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা যেকোনও সরকারের কর্তব্য। সরকারের উচিত কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা। অন্যথায় সেনাকে নির্দেশ দেওয়া হোক আমাদের ভূমি সুরক্ষিত করার জন্য।

এদিকে, সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে প্রকাশ, ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে সীমান্তের পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণের।

গত সোমবার লাদাখ সীমান্তে তীব্র সংঘর্ষের পরে বস্তুত চীনের অবস্থান আরও কঠোর হয়েছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কার্যত হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, ভারত যেন একতরফা কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভুল না করে। চীন শান্তি চায়। তবে চীন ভয় পায় না।

পাল্টা জবাবে ভারত বলেছে, চীন চাইলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। ভারত সর্বদা নিজের সার্বভৌম ভূখণ্ডেই সীমাবদ্ধ থাকে। আমরা আশা করি, চীনও সেই নীতিই মেনে চলবে।

এদিকে, লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের জেরে ভারতের হিমাচল প্রদেশে অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। নিরাপত্তা এজেন্সিগুলো সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। চীন সীমান্ত লাগোয়া কিন্নৌর, লাহৌল-স্পিতিতে সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। পুলিশ সদর দফতর থেকে উভয় জেলার পুলিশ সুপারকে অতিরিক্ত সাবধানতা ও সতর্কতা অবলম্বনের জন্য নির্দেশ জারি করা হয়েছে।



 

Show all comments
  • Zerox ১৭ জুন, ২০২০, ১:৩৮ পিএম says : 0
    No one keep peace with India. only Bangladesh can because when India beat Bangladesh some of Bangladeshi key people seemed oh India doing this is very good.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ