Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

লাদাখে ষাট কিলোমিটার ভেতরে চীন ঢুকে পড়লেও মোদী কেন চুপ : বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০২০, ৯:২৭ এএম

লাদাখে চীনা সৈন্যরা ভারতীয় ভূখন্ডের কতটা ভেতরে ঢুকে পড়েছে এবং সরকার কেন গোটা বিষয়টা নিয়ে নীরব, তা নিয়ে ভারতে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইট করে অভিযোগ করেছেন, চীনারা লাদাখে ঢুকে ভারতের জমি দখল করে নিলেও প্রধানমন্ত্রী মোদী বিষয়টি নিয়ে কোনও কথাই বলছেন না। যার জবাবে বিজেপি বলছে, দেশের স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থ জড়িত আছে এই ধরনের সংবেদনশীল বিষয়ে টুইটারে অন্তত প্রশ্নই তোলা যায় না। পর্যবেক্ষরাও অনেকে মনে করছেন, লাদাখ সীমান্তের সংঘাত শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে গড়াবে না – এই ধারণা থেকেই সম্ভবত ভারত বিষয়টি নিয়ে আপাতত মুখ খুলতে চাইছে না।

ভারতের সুপরিচিত প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অজয় শুক্লা বুধবার প্রকাশিত তার এক নিবন্ধে দাবি করেছিলেন, লাদাখের সীমান্ত সংঘাতে চীন এবার অত্যন্ত কঠোর মনোভাব নিয়েছে – এবং তারা শুধু প্যাংগং লেকের একটা বড় অংশই দখল করে রাখেনি, পুরো গালওয়ান ভ্যালিটাই কব্জা করে রেখেছে।

'সীমান্তে পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর: বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী সেই নিবন্ধটি ট্যাগ করে তার টুইটার হ্যান্ডল থেকে প্রশ্ন তোলেন – এত বড় ঘটনা ঘটে গেলেও কেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না? কংগ্রেস মুখপাত্র মনীশ তিওয়ারিও তার অনলাইন সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “চীনা সৈন্যরা ভারতীয় ভূখন্ডে অন্তত চল্লিশ থেকে ষাট কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছে বলে খবর আসছে, এবং বোঝাই যাচ্ছে পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর। অথচ সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও বক্তব্যই নেই! বিজেপি নেতা ও সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ অবশ্য এই ধরনের প্রশ্ন তোলার জন্য কংগ্রেসকেই পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় গেছেন। তিনি বলেন, ভারতের স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থ রাহুল গান্ধী কতটুকু বোঝেন সেটা অন্য একটা বৃহত্তর ইস্যু, যা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু তার এটুকু তো অন্তত বোঝা উচিত, চীনের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক নিয়ে এভাবে টুইটারে খোলাখুলি প্রশ্ন তোলা যায় না!

'যুদ্ধ হবে না ধরে নিয়েই এই নীরবতা': সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লি যে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি নয়, সেটা অবশ্য দেখাই যাচ্ছে। দিল্লিতে ইনস্টিটিউট অব চায়না স্টাডিজের ফেলো, অধ্যাপক শ্রীমতি চক্রবর্তীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম তার সম্ভাব্য কারণ কী হতে পারে। অধ্যাপক চক্রবর্তী বলছেন, ভারতের এটা ভালভাবেই জানা আছে যে চীন এই মাসল ফ্লেক্সিং বা পেশীর আস্ফালন-টা করছে তাদের ডোমেস্টিক কনস্টিটোয়েন্সির উদ্দেশে। অর্থাৎ নিজের দেশের লোককে দেখানোর জন্য, কারণ তাদের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি একটু চাপের মুখে আর তাই তারা এখন এটা করে যাবে।

“কিন্তু এটা সামরিক সংঘাতে পরিণত হবে না সেটা হয়তো নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। আর এ জন্যই সম্ভবত ভারত বিষয়টা নিয়ে মুখ খুলতে চাইছে না, কারণ যদি আবার তাতে বিষয়টা অন্য দিকে মোড় নেয়! আর এটা তো ঠিকই, যে এলাকা নিয়ে কখনওই বিরোধ ছিল না – সেই গালওয়ান ভ্যালিতে পর্যন্ত দুপক্ষের মারামারি হয়েছে। সেখানেও দুদেশের সেনারা টহল দিচ্ছিল, আর সেখান থেকেই সংঘাত।এখন সেটা যাতে আর এসক্যালেট না-করে আমার মনে হয় সরকার সে জন্যই সাবধানতা দেখাচ্ছে। আর বিজেপি যখন ক্ষমতায় ছিল না তখন তারাও সব সময় বলত কংগ্রেস চীনের চাপের কাছে নতি স্বীকার করছে। আজ কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় নেই, তারাও বিজেপি সম্পর্কে একই কথা বলছে – ফলে ওগুলোকে আমি খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছি না”, বলছিলেন অধ্যাপক চক্রবর্তী।

'বিরোধীদের কেন সব ব্যাপারে প্রমাণ চাই?': এর আগে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বা বালাকোটে বিমান হামলা নিয়ে যেভাবে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠেছিল, লাদাখের সীমান্ত বিরোধও সেই পথেই এগোচ্ছে। লাদাখের বিজেপি এমপি জামিয়াং শেরিং নামগিয়াল যেমন বিবিসিকে বলছিলেন, রাহুল গান্ধী আর কংগ্রেসের কেন সব ব্যাপারে প্রমাণ চাই?

ভারতীয় সেনারা শহীদ হয়েছেন কি না, সত্যিই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছেন কি না আগে তারা এসব প্রশ্ন তুলেছেন, এখন সীমান্ত বিরোধে ভারত কী সাফল্য পেল তাদের সেটারও প্রমাণ চাই! আমি বারবার বলছি, এটা খুব সংবেদনশীল বিষয় – অন্তত এটা নিয়ে রাজনীতি হওয়া উচিত নয়।কিন্তু প্রতিবেশী চীন বা পাকিস্তানের সঙ্গে সামান্যতম সামরিক সংঘাতও ভারতে কখনওই রাজনীতির ছায়া এড়িয়ে চলতে পারেনি, এখানেও তার কোনও ব্যতিক্রম হচ্ছে না।



 

Show all comments
  • Biswanath Lahiri ১২ জুন, ২০২০, ৬:০০ পিএম says : 0
    চীন কে ভারত বাষট্টির পরে দু দুবার নাকানিচোবানি খাইয়েছে I একবার সাতষট্টি আরেকবার সাতাশি l এবারেও সময়মতো জবাব ঠিকই দেবে l
    Total Reply(1) Reply
    • elu mia ১৩ জুন, ২০২০, ৮:৪৫ এএম says : 0
      হ সিনেমার মধ্যে দিসিল।কিন্তু বাস্তবে চিন এখনও ভারতের আকসাই চিন দখল কইরা রাখসে।
  • Mohammed ১২ জুন, ২০২০, ৭:১০ পিএম says : 0
    ভারতীয় সেনাবাহিনীর শক্তি কেবল বাংলাদেশী সীমান্ত এবং হিন্দি সিনেমাতে। হা হা হা ....
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed ১২ জুন, ২০২০, ৭:১২ পিএম says : 0
    ভারতীয় সেনাবাহিনীর শক্তি কেবল বাংলাদেশী সীমান্ত এবং হিন্দি সিনেমাতে। হা হা হা ....
    Total Reply(0) Reply
  • ariful islam ১৩ জুন, ২০২০, ১২:৪৭ পিএম says : 0
    আমরা হারতে শিখি নাই অর্জন করতে জানি। আমরাও একদিন আমাদের ভাইয়ের বুকে বার বার গুলি চালানোর জবাব সেই গুলি দিয়েই দিবো।
    Total Reply(0) Reply
  • Nadim Mahmud ১৫ জুন, ২০২০, ৭:৪০ এএম says : 0
    আগামী ৫-৬ বছরেরমধ্যে প্রমাণ হবে।কারণ ৩য় বিশ্বযুদ্ধ ২০২৫ সালের দিকে শুরু হবে।ভারত চিনের সাথে পারবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • SAPTARSHI DUTTA ১৫ জুন, ২০২০, ৭:৫৪ পিএম says : 0
    China, Pakistan, Bangladesh same country and same people total China product. Just wait and watch..............
    Total Reply(0) Reply
  • Zahangir ১৭ জুন, ২০২০, ৬:৪৩ পিএম says : 0
    বিশ্বনাথ লাহিড়ী ও সপ্ত্রর্ষি দত্তকে বলছি, ভায়া, আপনারা কি ভদকা খেয়ে বুঁদ হয়ে আছেন?? মুখটা ভালো করে ধূয়ে আখিঁ দুটি ধীরে ধীরে খুলুন। এবার মোদিজী'র সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এর জন্য অপাক্ষা করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • asif ১৯ জুন, ২০২০, ৩:৪৬ পিএম says : 0
    যারা চীন নিয়ে নাচানাচি করছে তাদের একটা কথা বলতে চাই .....সব তো ঠিক আছে কিন্তু এতে বাংলাদেশের লাভ এর থেকে ক্ষতি বেশি হবে .... রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় আর উলু খাগড়ার প্রাণ যায় কথা তা মনে রাখেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত-চীন

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ