পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বৃদ্ধির সাথে সাথে হাসপাতাল, অক্সিজেন ও আইসিইউ বেড নিয়ে তুলকালাম অবস্থা দেখা দিয়েছে। বিশেষায়িত হাসপাতালেও আইসিইউ শয্যার অভাবে চরম সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে রোগীরা। আইসিইউ সুবিধা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ বিষয় হলেও শুধুমাত্র অক্সিজেন সুবিধার অভাবে অনেক রোগী মারা যাওয়ার বাস্তবতা মেনে নেয়া যায় না। কোভিড-১৯ রোগীদের পাশাপাশি ননকোভিড সাধারণ রোগীদেরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারীর শুরু থেকেই করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিটি সরঞ্জামের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্যবৃদ্ধির কারসাজি অব্যাহত রয়েছে। সার্জিক্যাল মাস্ক, হ্যান্ড সেনিটাইজার, ভিটামিন-সি, জিঙ্ক ট্যাবলেটসহ প্রতিটি ওষুধ থেকে শুরু করে অক্সিজেন সিলিন্ডার পর্যন্ত সর্ব পর্যায়ে কৃত্রিম সংকট, কারসাজি ও মূল্যবৃদ্ধির সিন্ডিকেটেড তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। জাতির এই ক্রান্তিকালে মহামারীতে আক্রান্ত মানুষের জীবন নিয়ে এমন মুনাফাবাজির কারসাজি বন্ধে সরকারি ব্যবস্থা ও নজরদারি তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। সর্বত্র একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা। একদিকে হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সুবিধা দূরের কথা, অক্সিজেনের অভাবে ছটফট করতে করতে রোগী মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে, অন্যদিকে সম্ভাব্য সংকটের আশঙ্কা করে অনেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে রাখছেন। চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বাজারে সক্রিয় সিন্ডিকেটেড চক্র অক্সিজেন সিলিন্ডারের মূল্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
করোনা মহামারী প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় প্রাণহানী কমিয়ে আনতে প্রত্যেক জেলা হাসপাতালে আইসিইউ বেড নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। ইতিপূর্বে সব হাসপাতালে পর্যাপ্ত সংখ্যক অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ নিশ্চিত রাখার নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি। বিশেষায়িত ও বড় হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের কেন্দ্রীয় সরবরাহ লাইন গড়ে তোলার কথা থাকলেও অধিকাংশ হাসপাতালেই তা হয়নি। এর ফলে এসব হাসপাতালকে বাজার থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে চাহিদা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজারে এবং হাসপাতালের অভ্যন্তরে অক্সিজেনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে রোগীদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। অক্সিজেনের অভাবে রোগী মারা যাওয়া, উৎপাদন ও সরবরাহ লাইনে সঙ্কট না থাকলেও অক্সিজেন সিলিন্ডারের মূল্যবৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পরিচালিত অনুসন্ধানে অক্সিজেন নিয়ে কারসাজি ও প্রতারণার তথ্য বেরিয়ে আসে। ব্যবহৃত অক্সিজেনের অপরীক্ষিত মান এবং অকারণ মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ও জানা যায়। শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত ইন্ডাসট্রিয়াল গ্রেডের অক্সিজেন সিলিন্ডারও কোনো কোনো হাসপাতালের জরুরি অক্সিজেন সিলিন্ডার হিসেবে সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব সিলিন্ডারই সাধারণ মানুষ জরুরি প্রয়োজনের কথা ভেবে কয়েকগুণ বেশি দামে কিনে বাড়িতে রাখছে। এভাবে বেড়ে চলেছে চাহিদা, মূল্য এবং সংকট।
কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণের সব রোগীকে টেস্টের আওতায় আনা যাচ্ছে না। ফলে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রকাশিত করোনা রোগীর সংখ্যা থেকে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। হাজার হাজার মানুষ বাড়িতে বসেই চিকিসা নিয়ে ভালো হয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকেই ক্রিটিক্যাল অবস্থায় হাসপাতালে ঠাঁই না পেয়ে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুবরণ করছে। এ কারণেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাড়িতে অক্সিজেন সংগ্রহে রাখার পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে অনেকে। এ বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না। সব হাসপাতালে জীবন রক্ষাকারী জরুরি স্বাস্থ্য সেবা, পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে মানুষের মধ্যে এমন প্রবণতা থাকতো না। তবে মানহীন ও ইন্ডাসট্রিয়াল গ্রেডের অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং জরুরি মুহূর্তে অক্সিজেন ব্যবহারের নির্দেশনা ও নিয়মকানুন না জেনে বিপদ ডেকে আনার ঝুঁকিও রয়েছে। এছাড়া গ্যাস সিলিন্ডারের মতো মানহীন সিলিন্ডার এবং ব্যবহার বিধি না জানার কারণে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আশঙ্কা থাকে। অক্সিজেন নিয়ে মুনাফাবাজির সাথে জড়িত সিন্ডিকেটেড তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। হাসপাতাল গ্রেডের অক্সিজেন উৎপাদন, সরবরাহ, মূল্যনিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত নজরদারি ও তদারকি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সব হাসপাতালে জরুরি স্বাস্থ্য সেবা এবং অক্সিজেন প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। সব জেলা হাসপাতালে আইসিইউ বেড নিশ্চিতকরণ, সব হাসপাতালে অক্সিজেন ব্যবস্থা সহজলভ্য করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।