Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে যোগ দিচ্ছে না ভারত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০২০, ৩:৩১ পিএম

১৬ দেশের প্রস্তাবিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (আরসিইপি) যোগ দেয়ার আহ্বান সত্ত্বেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এর মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি রাখা। এতে যোগ দিলে তাদের কাছে ‘ভুল বার্তা’ যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। পাশাপাশি, চুক্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো সমস্যা মেটাতে, কথা ছিল চীনের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসার। কিন্তু সেই বৈঠক এখনও হয়নি। এর সঙ্গে রয়েছে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। মূলত এই তিন কারণেই আরসিইপি’তে যোগ দিচ্ছে না ভারত।

আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দশ দেশ, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ ১৬ দেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে ভারতের যোগ দেয়ার কথা প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত নভেম্বরে একেবারে শেষ মুহূর্তে তা থেকে সরে আসার কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরে কেন্দ্র দাবি করে, মূলত চীনা পণ্যে ভারতের বাজার ছেয়ে যাওয়া রুখতেই এই ‘বলিষ্ঠ’ সিদ্ধান্ত। তা ছাড়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের দুগ্ধজাত পণ্যে বাজার ছেয়ে গেলেও এ দেশের উৎপাদক এবং ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়তেন।

কিন্তু ভারতের মতো বিশাল এবং সম্ভাবনাময় বাজার যে ওই চুক্তির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা ভালমতোই জানে আরসিইপি-র বাকি ১৫টি দেশ। আবার, এতে ভারতও লাভবান হতো। এসব দেশে ভারতের পেট্রোলিয়াম, কৃষিজাত পণ্য, মসলা, তৈরি পোশাক ইত্যাদির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এ কারণে করোনা-পরবর্তী বিধ্বস্ত অর্থনীতিতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি জরুরি বলে মনে করছে দেশগুলো। সেই কারণেই ভারতকে চুক্তির জন্য ফের আহ্বান জানিয়েছে সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড-সহ বিভিন্ন দেশ। শর্ত শিথিলের রাস্তা খোলা রেখেছে আরসিইপি’র কমিটি। পাশাপাশি, আলাদা করে ভারত-চীন দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার দরজাও খুলে রাখা হয়েছে। কিন্তু ভারতের মোদি জটিল রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের কারণে এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারছে না।

প্রথমত, আমেরিকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য চুক্তি ঝুলে আছে অনেকদির ধরে। আবার আসন্ন নির্বাচনে ভোট জিততে চীনকে দোষারোপ করার নীতি ট্রাম্প কার্ড হিসাবে ব্যবহার করছেন ট্রাম্প। সেই পরিস্থিতিতে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি এগোলে, ভারতের উপর থেকেও ট্রাম্প প্রশাসন সুনজর সরিয়ে নিতে পারে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের আশঙ্কা।

দ্বিতীয়ত, এমনিতেই চীনের সঙ্গে বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি (প্রায় ৫,৩০০ কোটি ডলার) ভারতের বড় মাথাব্যথা। তার উপরে এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সুযোগে চীনা পণ্যে দেশটির বাজার ছেয়ে যাবে বলে আশঙ্কা দিল্লির। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে খবর, তামিলনাড়ুর মমল্লপুরমে নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে একান্ত আলোচনায় ঠিক হয়েছিল, এই একতরফা বাণিজ্যের সমস্যা সমাধানে আলোচনায় বসবে দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। কিন্তু সেই বৈঠক আর হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ওই আলোচনায় আরসিইপি’রও বাধা কাটতে পারত।

তৃতীয়ত, আত্মনির্ভর ভারত গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন মোদি। তার সঙ্গে চীনা পণ্য বর্জনের ডাক জুড়ে দিয়েছে স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ এবং বিজেপির একাংশ। শুধু তা-ই নয়, দ্বিতীয় মেয়াদে মোদি সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তিতে কৃষক, ছোট ব্যবসায়ীদের স্বার্থ মাথায় রেখে আরসিইপি চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসাকেই অন্যতম সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছেন খোদ অমিত শাহ। ফের সেই চুক্তিতেই যোগ দিতে আলোচনার টেবিলে বসা ভুল রাজনৈতিক বার্তা দিতে পারে বলে আশঙ্কা সরকারের। সূত্র: দ্য প্রিন্ট, এবিপি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ