২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
ভিটামিন ডি একটি চর্বিতে দ্রবনীয় ভিটামিন যা শরীরের ক্যালসিয়াম, ফসফেট ইত্যাদির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। ভিটামিন ডি অস্থির কাঠামো তৈরি এবং ঘনত্ব বৃদ্ধিতে প্রভূত ভূমিকা রাখে। নাম শুনে ভিটামিন মনে হলেও ভিটামিন ডি আসলে একটি স্টেরোয়েড হরমোন। অন্যান্য ভিটামিন যেখানে এন্টি অক্সিডেন্ট বা কো-এনজাইম হিসাবে কাজ করে, ভিটামিন ডি (স্টেরোয়েড হরমোন) জিন এক্সপ্রেশন নিয়ন্ত্রণ করে অর্থাৎ দেহের প্রোটিন তৈরিতে নিয়ন্ত্রণকারীর ভ‚মিকায় থাকে। প্রাণীজ ও উদ্ভিদজাত স্টেরল ও ফাইটোস্টেরল হতে সূর্যালোকের অতি বেগুনী রশ্মি দ্বারা রূপান্তরিত হয়ে দেহে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। ভিটামিন ডি-২ ও ভিটামিন ডি-৩ মানব দেহে থাকে।
বড়দের যেমন ভিটামিন খুবই দরকার, শিশু-কিশোরদের শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি তাদের শারীর গঠন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও সুস্বাস্থের অধিকারী হয়ে বেড়ে উঠার জন্যে বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। বাড়ন্তকালে শিশুদের দৈহিক কাঠামো তৈরি করার অন্যতম কাঁচামাল ক্যালসিয়াম- যা শরীরের ভিটামিন ডি দ্বারা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত হয়। শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি, দৈহিক স্থুলতা সবকিছু ভিটামিন ডি-র সাথে নিবিড়ভাবে সংশ্লিষ্ট। বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই কম বয়সি শিশু-কিশোরদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস ক্রমশ: বেশি মাত্রায় দেখা দেওয়ার পিছনে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি একটি বড় কারণ হয়ে থাকতে পারে। ভিটামিন ডি-র ঘাটতিতে কিছু কিছু ক্যান্সার হবার ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে। এটা এখন নিশ্চিত ভাবে জানা গিয়েছে যে, ভিটামিন ডি-র অভাব থাকলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এর ঘাটতির সাথে তাল মিলিয়ে কমতে থাকে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ভিটামিন ডি-র ভুমিকাঃ
সারা বিশ্ব এখন কোভিড ১৯ (সারস-করোনা ভাইরাস-২ দ্বারা সংঘটিত রোগ) মহামারীতে জর্জরিত।
এপর্যন্ত প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ এটি দিয়ে সংক্রমিত হয়েছে। আর মৃত্যুবরন করেছে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ মানুষ।
মৃত্যু হারে সবার উপরে যুক্তরাষ্ট্র, তারপর ইটালী, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্ত্রাজ্য রয়েছে (সুত্রঃ সি এস এস ই, জন হপকিংস বিশ্ববিদ্যালয়)। বাংলাদেশের পরিস্থিতিও ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে।
এখানে একটি জিনিষ মোটামুটি স্পষ্ট হয়েছে যে, যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত কম, তাদের কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হবার ঝুঁকি ততো বেশী; শুধু তাই নয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ওয়ালা কেউ এতে আক্রান্ত হলে মৃত্যু ঝুঁকিও তার বেশী। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, দৈহিক স্থুলতা, হাঁপানি ইত্যাদি রোগ থাকলেও রোগীর ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক অন্য আরেকটি গবেষণায় করোনা ভাইরাসের হাত থেকে রেহাই পেতে প্রতিদিন সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন করার কথা বলেছেন। ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি-সহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, এমন খাদ্য গ্রহণ নিশ্চিত করতে বলেছেন। এর সুত্র ধরে, ডায়াবেটিস রোগীতো বটেই, অন্যদেরকেও এ কোভিড ১৯ মহামারীকালে অন্যান্য উপকারী খাদ্য উপাদান গ্রহণে উদ্যোগী হবার সাথে সাথে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের দিকে নজর দিতে হবে (ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদানের তালিকা যুক্ত করা হলো)। কিন্তু বাংলাদেশে প্রচুর সূর্যালোক থাকার পরও অধিকাংশ মানুষ ভিটামিন ডি-র ঘাটতিতে ভুগছেন এবং তাদের ভিটামিন ক্যাপ্সুল সেবেনের পরামর্শ দিতে হচ্ছে।
ভিটামিন ডি-র উৎস ঃ
উৎস সূর্যরশ্মি পরিমাণ শরীরের ভিটামিন ডি-র চাহিদার ৮০ শতাংশের বেশি ত্বকে সূর্যরশ্মি পতিত হওয়ার কারণে তৈরি হয়।
খাদ্য উপাদান স্যালমন ফিশ তাজা (সামুদ্রিক) পরিমাণ ৩.৫ আউন্স ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি (ওট) ৬০০-১০০০
তাজা (চাষের) পরিমাণ ৩.৫ আউন্স আউন্স ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি (ওট) ১০০-২৫০
সার্ডিন (কৌটাজাত) পরিমাণ ৩.৫ আউন্স ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি (ওট) ৩০০
টুনা (কৌটাজাত) পরিমাণ ৩.৫ আউন্স ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি (ওট) ২৩৬
ম্যাকারেল (কৌটাজাত) পরিমাণ ৩.৫ আউন্স ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি (ওট) ২৫০
মাশরুম (তাজা) পরিমাণ ৩.৫ আউন্স ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি (ওট)১০০
কৌটাজাত পরিমাণ ৩.৫ আউন্স আউন্স ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি (ওট) ১৬০০
ডিম (সিদ্ধ) পরিমাণ ৩.৫ আউন্স ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি (ওট) ২০
টক দই পরিমাণ ১৭৫ গ্রাম ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি (ওট) ৫৮-৭১
গরুর কলিজা (রান্না করা) পরিমাণ ৭৫ গ্রাম ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি (ওট) ৩৬
৪০ (ওট) ভিটামিন ডি-র কার্যকারিতা ১ মাইক্রোগ্রাম সমতুল্য।
সূর্যালোক থেকে ভিটামিন ডি পেতে হলে মার্চ থেকে অক্টোবর মাসের (অন্যান্য মাসগুলোতে আরো বেশি সময় ধরে) প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট রোদ পোহাতে হবে যখন শরীরের ১৮ শতাংশের বেশি অংশে রোদ লাগবে।
১-৭০ বছর বয়সি মানুষের গড়ে প্রতিদিন ৬০০ ওট এবং ৭০ বছরের বেশি বয়সিদের ৮০০ ওট ভিটামিন ডি গ্রহণ করা দরকার।
ভিটামিন ডি ওষুধ হিসাবে খেতে হবে কাদের ঃ
১। নবজাতক যারা শুধুই মায়ের দুগ্ধ পান করছে ও যারা ১০০০ মিলিলিটারের কম শিশু খাদ্য গ্রহণ করে।
২। শিশু-কিশোর যারা অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠা নগরে বা অস্বাস্থ্যকর শহরে (ঢাকা অন্যতম) বসবাস করছে।
৩। দৈহিক স্থ’ুল শিশু-কিশোর যাদের ত্বেেকর বিভিন্ন অংশে মকমলের মতো কালো অংশ দেখা দিচ্ছে।
৪। ধর্মীয় বা অন্য কারণে পোশাকে প্রায় সারাদেহ আবৃত শিশু-কিশোর।
৫। খাদ্য নালীর সমস্যার কারণে হজম ও বিপাকীয় কার্যক্রম হ্রাস পেলে।
৬। প্রাতিষ্ঠানিক জীবন যাপন (হেস্টেল, হাসপাতাল বা অফিস) যাতে রোদে যাবার সুযোগ কমে যায়।
৭। এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছে, এমন হলে।
ভিটামিন ডি-র ঘাটতি খুব বেশি হলে ৪০ হাজার ওট সপ্তাহে এবং পরবর্তীতে মাসে একটি করে ভিটামিন ডি ক্যাপসুল খেয়ে যেতে হবে। ঘাটতি কম হলে ২০ হাজার ওট ক্যাপসুল যথেষ্ট হতে পারে।
ভিটামিন ডি-র ঘাটতি থাকলে তো বটেই, অন্য ক্ষেত্রেও, সকলকে সূর্যালোকে যেতে হবে নিয়মিত। দূর্ভাগ্যবশত: বাংলাদেশে প্রচলিত খাদ্যসমূহে ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি খুবই কম, তারপরও যেসব খাদ্যে ভিটামিন ডি-র কিছু পরিমাণে উপস্থিতি আছে (উপরের তালিকা ভুক্ত) তা যতটা সম্ভব নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
সুস্থ্য সবল শিশু-কিশোর আগামী দিনের মেধাবি ও কর্মঠ জাতি গঠন করবে।
ডাঃ শাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইল: [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।